আবার শান্তির বার্তা দিলেন আসানসোলের নুরানি মসজিদের ইমাম ইমদাদুল্লাহ রশিদি। গত বছরের মার্চে উন্মত্ত জনতার রোষে তাঁর ষোলো বছরের পুত্রের হত্যা ঘটলেও সেই কঠিন পরিস্থিতিতে শান্তির দূত হয়ে যেমন তিনি মানুষকে প্রতিহিংসার পথ পরিত্যাগ করতে বলেছিলেন, কারণ তা ইসলাম মতাদর্শের পরিপন্থী, ঠিক তেমনই সম্প্রতি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সারা রাজ্যে যে হিংসার বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে, সেই অরাজকতার প্রেক্ষিতেও ইমাম সাহেব সাধারণ মানুষকে শান্ত হতে পরামর্শ দিয়েছেন। ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত হতে বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবে তিনি তথাকথিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী।
ইমাম সাহেবের মতে,় প্রতিবাদের নামে এক দল মানুষ যে ভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে রাজ্য জুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে, ট্রেনে বাসে আগুন লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলছে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করছে, তা একেবারেই অনুচিত। ইমাম সাহেবের বিশ্বাস ‘‘কাউকে কষ্ট দিয়ে প্রতিবাদ সফল হয় না’’, তাই তিনি রাজ্যের মুসলিম-সহ সকল নাগরিককে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমানের বিবেচনাহীন রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী পরিমণ্ডলে ইমাম রশিদি সাহেবের মতো প্রকৃত শান্তিপ্রিয় মানুষেরাই সমাজের পথপ্রদর্শক, তাঁরাই এই উচ্ছৃঙ্খল ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধের সমাজে চূড়ান্ত রাজনৈতিক অবক্ষয়ের মাঝে সত্যিকারের শিক্ষক।
দেশের শান্তিকামী সুনাগরিক হিসেবে রশিদি সাহেব তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেছেন, যা কেবল প্রশংসনীয় নয়, দৃষ্টান্তমূলকও বটে। ইমাম সাহেব ধর্মীয় শিক্ষাকে তাঁর ব্যক্তিজীবনের মূল্যবোধ করে তুলেছেন। তাঁর এই মূল্যবোধ যেন অনেকের মধ্যে প্রবাহিত হয়।
কুমার শেখর সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
শোকার্তের মন্তব্য
‘৫ পরিবার ভুগছে, বললেন তেলঙ্গানার তরুণীর বাবা’ (১২-১২) সংবাদটি সম্পর্কে এই চিঠি। মেয়ের শোকাবহ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর যিনি হত্যাকারীদের দ্রুত শাস্তি চেয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিলেন এবং ঘটনার সাত দিনের মধ্যে ধৃত নৃশংস চার হত্যাকারীদের পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে মৃত্যুতে তিনি প্রত্যাশিত ভাবেই সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এটাই মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া— তাঁর মন্তব্যে সেই প্রতিক্রিয়ারই প্রতিফলন ঘটেছিল। তাঁর মেয়ের এমন ভয়াবহ বিয়োগান্ত পরিণতিতে তছনছ হয়ে যাওয়া পরিবারটির এই শোকার্ত পিতা কিন্তু এখন মনে করেন যে শুধু তাঁর পরিবার নয়, নিহত অভিযুক্তদের পরিবারগুলিও তছনছ হয়ে গেল। এবং এনকাউন্টারে যুক্ত পুলিশও এই ঘটনাতে সমস্যায় পড়ল। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন অভিযুক্ত যুবকদের এই আচরণের, যার ফলে পাঁচটি পরিবার শেষ হয়ে গেল। এক ভুক্তভোগী আহত পিতার এতখানি সমাজসচেতন মন্তব্য সচরাচর শোনা যায় না— এই দুঃসময়ে এ কথা মনে রাখা ভাল।
অশেষ দাস
কলকাতা-১১০
মোহর
‘শান্তিনিকেতনের আকবরি মোহর’ (১৪-১২) প্রসঙ্গে এই চিঠি। ১৯৫৩ সালে সলিল চৌধুরী স্থির করেন যে তাঁর কথা ও সুরে দু’টি আধুনিক গান কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে রেকর্ড করাবেন— ‘প্রান্তরের গান আমার’ এবং ‘আমার কিছু মনের আশা’। কিন্তু বিশ্বভারতীর তদানীন্তন কর্তৃপক্ষের সম্মতি না পাওয়ায় ওই দু’টি গান কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি। তখন উৎপলা সেন রেকর্ড করেন ওই দু’টি গান।
এর পর ১৯৫৭ সালে কণিকা দু’টি আধুনিক গান রেকর্ড করেন—‘পত্র লিখি কাজল মেঘে’এবং ‘সুরের পথে ঘুরে বেড়ায়’। এই দু’টি গান লিখেছিলেন শ্যামল গুপ্ত ও সুর দেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। কিন্তু এই গান দু’টি রেকর্ড হওয়া সত্ত্বেও কোনও কারণে সেই রেকর্ড বাজারে প্রকাশিত হয়নি। অবশ্য রবীন্দ্রনাথের গানের মাঝে মধ্যে কণিকার গাওয়া কয়েকটি অতুলপ্রসাদী, নজরুলগীতি ও কীর্তনের রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল।
শ্রীশঙ্কর ভট্টাচার্য
কলকাতা-৩৯
অভিজ্ঞতা
আমি এক জন স্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ দেশের নাগরিক। তবু বয়স ও অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতি একাত্মবোধ ঘটাতে গিয়ে ভিতরে ভিতরে কোথায় যেন এক ধরনের অপমানের কাঁটা ফিরে ফিরে খোঁচা দেয়। ছোটবেলা থেকেই দেখতাম আমাদের গুটিকতক মুসলিম ছাত্রছাত্রীকে হিন্দু বন্ধুরা কেমন যেন একটা ব্যঙ্গের নজরে দেখত, এড়িয়ে চলত। যেন কোনও এক অলিখিত নিয়মের মতো তাদের মনে গেঁথে থাকত, তারা আমাদের থেকে শ্রেষ্ঠতর এবং স্কুলের সমস্ত বিষয়ে তাদের অধিকার যেন আমাদের থেকে বেশি। আমাদের মুখ থেকে হঠাৎ বেরিয়ে পড়া ‘পানি’, ‘নানা’, ‘দাদি’, ‘নমাজ’ ইত্যাদি প্রায়শই তাদের হাসির খোরাক হত। আর আমরাও ওই ছোট বয়স থেকেই কেমন করে বাচনভঙ্গি সংযত করা শিখে গেলাম।
আজও হিন্দু ভাইবোনেরা তাঁদের উৎসব, পার্বণ নিয়ে কত মনখোলা আনন্দ, মাতামাতি করেন। তাঁরা কাঁকড়ার ডালনার স্বাদ, শূকরের মাংসের রেসিপি নিয়ে বাসে, ট্রেনে অনায়াসে আলোচনা করতে পারেন, অথচ গোমাংস ভক্ষণকারী মনে করে আমাদের প্রতি কখনও প্রকট কখনও প্রচ্ছন্ন ঘৃণা, রোগ পোষণ করেন।
আমি শিক্ষকতার সূত্রে মালদহ গিয়ে বাড়ি ভাড়া খুঁজতে গিয়ে বহু বার মুখের উপর শুনতে হয়েছে ‘আমার বাড়ি ঠাকুর আছে, মুসলিমদের দেওয়া যাবে না।’ আমরা এতটাই তুচ্ছ, এতটাই অবজ্ঞার পাত্র? নিজের পয়সায় বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি কিনতে গিয়ে প্রায়শই ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তি জিজ্ঞেসা করেন, ‘আপনি মহামেডান?’ উত্তরটা হ্যাঁ হলে কখনও সরাসরি, কখনও নানা গল্প ফেঁদে ‘না’ করে দেওয়া হয়? একবিংশ শতাব্দীতেও আর কত অপমানিত হব? এখনও মানুষ নিজের ধর্ম নিয়ে এত অহঙ্কার বোধ করেন, নিজেদের প্রগতিশীল ভাবেন, আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কত পিছনে পড়ে আছেন তা নিয়ে গালগপ্পো করেন। এইটাই কি প্রগতি?
ইসমাইল মল্লিক
কুট্টিটোলা, মালদহ
মায়ের কথা
রাজ্য তথা দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ‘ইসু’ নিয়ে চলছে পারস্পরিক দোষারোপ। এতে বাড়ছে অস্থিরতা। তৈরি হচ্ছে সঙ্কট। আসুন সারদা মায়ের জন্মতিথি-উত্তরে স্মরণ করি তাঁর সেই চিরকালীন প্রাসঙ্গিক কথাগুলো, যার জন্য জন্মের ১৬৬ বছর পরও তিনি সকলেরই মা। ‘যদি শান্তি চাও তবে কারুর দোষ দেখো না, দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার করে নিতে শেখো। কেউ পর নয় জগৎ তোমার।’ বর্তমানের প্রেক্ষিতে বলতে পারি এর ফলে দৃঢ় হবে পারস্পরিক বন্ধন, ঘুচবে ‘আমরা ওরা’ তত্ত্ব।
নন্দগোপাল পাত্র
সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
নরককুণ্ড
সরসুনা স্যাটেলাইট টাউনশিপ-এর (১২৭ নং ওয়ার্ড) এবং নিউ শকুন্তলা পার্ক হাউজ়িং এস্টেটের সংলগ্ন স্থানে একটি খোলা সবুজ মাঠ ছিল। স্থানীয় কাউন্সিলরের অবহেলা ও ঔদাসীন্যে সেই সবুজ মাঠটি আজ নরককুণ্ডে পরিণত হয়েছে। উক্ত খোলা মাঠটিতে আশপাশের খাটাল থেকে গোবর ও গোমূত্র নিক্ষিপ্ত করা হচ্ছে। আশপাশের বাড়ি ও ফ্ল্যাট থেকেও আবর্জনা ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। সবুজ খোলা মাঠের চার পাশে হাউজ়িংয়ের সরু ড্রেনগুলি এই মাঠ সংলগ্ন বহুতল বাড়ির ময়লা জল নিষ্কাশনের পক্ষে অনুপযুক্ত। জমে থাকা জলে মশা জন্মানোর আদর্শ জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুভেন্দু কুমার সরকার
কলকাতা-৬১
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy