গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
দিল্লির সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে ক্রমাগত মৃত্যু আর হিংসার খবরের মাঝখানে ইতস্তত কিছু আশার আলোও দেখা যাচ্ছে। উত্তর পূর্ব দিল্লির শিববিহার এলাকা যখন দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত, তখন একটি মুসলমান পরিবার উপায়ান্তর না দেখে আশ্রয় নেয় এক হিন্দু প্রতিবেশীর কাছে। এই হিন্দু প্রতিবেশীটি সর্বান্তকরণে রক্ষা করতে চান আশ্রয়প্রার্থী মুসলমান পরিবারটিকে। উন্মত্ত আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে তাঁরা মুসলমান পরিবারের পুরষটির কপালে তিলক কেটে দেন, মহিলাটিকে পরিয়ে দেন সিঁদুর। সেই রাতটা কোনও মতে সেই প্রতিবেশীর বাড়িতে কাটিয়ে, পরের দিন ওই বেশেই মুসলমান পরিবারটি নিরাপদ মহল্লায় চলে যায়।
এই ঘটনা নিঃসন্দেহে মানবিকতার এক মর্মস্পর্শী উদাহরণ। সেই আতঙ্কের রাতে এ ভাবে ছাড়া অন্য কোনও উপায়ে রক্ষা করা যেত আশ্রয়প্রার্থী পরিবারটিকে? স্বাভাবিক এবং উপস্থিত বুদ্ধিতে যা করা সম্ভব, আশ্রয়দাতা পরিবারটি তা-ই করেছে। কিন্তু এ থেকে একটা প্রশ্ন উদিত হয় যে, সাম্প্রদায়িক সঙ্কটের সময়ে সংখ্যালঘুকে কি সর্বদাই সংখ্যাগুরুর ‘ভেক’ ধরে প্রাণ বাঁচাতে হবে? এই ‘ভেক’-টির কথা আমরা পাচ্ছি কিন্তু সেই ১৯৪৬-এর সাম্প্রদায়িক সঙ্কট থেকেই।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘একা এবং কয়েকজন’ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র সূর্যকুমার ভাদুড়ির বাবা হিন্দু এবং মা মুসলমান। সূর্যকুমার নিজে স্বাধীনতা সংগ্রামী এক বিপ্লবী দলের সদস্য। ১৯৪২-এর আন্দোলনে সে মরণপণ লড়াই করেছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু ১৯৪৬-এ এসে সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’-এর অর্থ, মেলাতে পারছে না তার আইডিয়ার স্বদেশের সঙ্গে সাম্প্রতিককে।
‘হে রাম’ ছবির একটি দৃশ্য
দাঙ্গা সেই সময়ে তুঙ্গে। এমনই এক দিন সূর্য তার দলের একজনের বাড়ি যাবে বলে রাস্তায় বেরিয়েছে। দাঙ্গা বিধ্বস্ত কলকাতাকে তার অপরিচিত বলে মনে হচ্ছে। এমনই অবস্থায় সে তার অভীষ্ট বাড়িটিতে পৌঁছয়। কিছু ক্ষণ পরে সেই বাড়িতেও হানা দেয় হিন্দুপক্ষীয় দাঙ্গাকারীর দল। তাদের দাবি, সেখানে একজন মুসলমান প্রবেশ করেছে, তাকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। এই অনুমানের একটাই কারণ। সূর্য দাড়ি রাখে। আক্রমণকারীদের ঠেকাতে সূর্যের আশ্রয়দাতা পরিবারের প্রধান মানুষটি তাকে দাড়ি কামাতে বাধ্য করেন। পুরো ব্যাপারটাই তখন সূর্যের কাছে প্রহেলিকা।
১৯৪৬-এর দাঙ্গার আর এক চিত্রণ পাচ্ছি কমল হাসন পরিচালিত ছবি ‘হে রাম’-এ। ছবির নায়ক সাকেতরামের কলকাতার অ্যাপার্টমেন্ট আক্রান্ত হয় মুসলমান দুষ্কৃতীদের দ্বারা। সাকেতরামের চোখের সামনেই তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা করে আক্রমণকারীরা। তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় সাকেতরাম দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করে তাদের মহল্লায় পৌঁছয় এবং তাদের খুঁজে বের করে গুলি করা হত্যা করে। এই হত্যা নেহাতই ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার ইচ্ছে থেকে জাত। সাকেতরাম তখনও পর্যন্ত জানে না ঠিক কী কারণে এই হিংসা। মহল্লা থেকে রক্ত মাখা জামা-কাপড়ে যখন সে বেরিয়ে আসছে, ঠিক তখন সেখানে প্রবেশ করছে হিন্দু রক্ষা বাহিনী। তাদের নেতৃত্বে শ্রীরাম অভয়ঙ্কর নামের এক জঙ্গি হিন্দু নেতা। সে সাকেতরামকে তার আইডেন্টিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সাকেতের জামার ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া পৈতেটি তার নজরে পড়ে। সে তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে সংস্কৃত শ্লোক আওড়ায়। সাকেতরাম তার যথাযথ উত্তর দিতে পারায় তাকে তিলক পরিয়ে শ্রীরাম অভয়ঙ্কর তাদের ‘দলভুক্ত’ করে।
‘বম্বে’ ছবির একটি দৃশ্য
এর পরের দৃশ্যটি ১৯৯২-এর বাবরি মসজিদ সংক্রান্ত সাম্প্রদায়িক গোলযোগকে ঘিরে নির্মিত ছবি ‘বম্বে’-র। মণিরত্নম পরিচালিত এই ছবিতে এক হিন্দু যুবক তার গ্রামেরই এক মুসলমান যুবতীকে পরিবারের অমতে বিয়ে করে বম্বে (তখনও ‘মুম্বই’ হয়নি) চলে আসে। সেখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে তাদের পরিবার দুশ্চিন্তা বোধ করে এবং পূর্বতন অশান্তি ভুলে ছেলেটির বাবা এবং মেয়েটির বাবা-মা বম্বে উপস্থিত হয়। তত দিনে এই দম্পতির যমজ সন্তান হয়েছে। শিশুদু’টিকে দেখে ছেলেটির কট্টর ব্রাহ্মণ বাবা দ্রবীভূত হন। একদিন নাতিকে নিয়ে বিনায়ক মন্দিরে মহাআরতি দেখে ফেরার সময়ে আক্রান্ত হন বৃদ্ধ। নাতিকে কাঁধে নিয়ে ফিরছিলেন তিনি। কাঁধে বসে থাকা শিশুটি সবার আগে ঠাকুরদার কপালের তিলকটি মুছে দেয়। কারণ এর আগে সে ও তার যমজ ভাই আক্রান্ত হয়েছিল দুষ্কৃতীদের হাতে। তাদের গায়ে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে মারার উপক্রম করে দাঙ্গাবাজরা। দেশলাই জ্বালানোর আগে বার বার জিজ্ঞেস করতে থাকে তাদের ধর্মীয় পরিচয়। হিন্দু বাবা ও মুসলমান মায়ের সন্তান দুই বালক আতঙ্কিত অবস্থায় কিছুই বলতে পারেনি। এমন সময় পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। এই অভিজ্ঞতা থেকে সে জানে, ‘তিলক’ ঠিক কতটা বিপদ ডেকে আনতে পারে। এমন সময় সেখানে হাজির হন তার মুসলমান দাদামশায়। তিনি আক্রমণকারীদের নিরস্ত করেন। পরিচয় দেন তাঁর অগ্রজতুল্য বলে। ফেজ পরিহিত, দাড়িওয়ালা মুসলমান ভদ্রলোকের কথায় নিষ্কৃতি পান ব্রাহ্মণ।
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
উপরের আখ্যানগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে, এ দেশে ধর্মীয় আইডেন্টিটি দাঁড়িয়ে রয়েছে কতকগুলো ‘লক্ষণ’-এর উপরে। সময় ও ক্ষেত্র বিশেষে তা তিলক, দাড়ি, লুঙ্গি, ফেজ, সিঁদুর, স্তোত্র, কলমা— যা খুশি হতে পারে। শুধুমাত্র এই লক্ষণগুলোই নির্ধারণ করে দিতে পারে, আক্রান্ত মানুষের জীবন রক্ষা পাবে কি পাবে না। এই লক্ষণগুলো থেকেই নির্ধারিত হতে পারে, ব্যক্তিটি আক্রমণের লক্ষ্য হবেন কি হবেন না। সাম্প্রতিক সময়ে যখন নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে, উত্তেজিত জনতা রেল অবরোধ করছে, তখন কিছু বিক্ষিপ্ত নাশকতার ঘটনাও ঘটতে থাকে। এমতাবস্থায় কিছু লোক ট্রেনে আগুন দেয় এ রাজ্যেরই একটি স্টেশনে। ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যায়, তারা লুঙ্গি ও ফেজ পরিহিত। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, এই দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িতদের পোশাক থেকেই বোঝা যায় তারা কোন পক্ষের। প্রধানমন্ত্রীর এ হেন উক্তিতে বিপুল ক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। রাজপথ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া— সর্বত্রই ফুঁসে ওঠেন সংবেদী মানুষ। পোশাক কী করে একজনের আইডেন্টিটি হতে পারে, সেই বহুব্যবহারে দীর্ণ প্রশ্নটিই আবার সামনে আসে।
‘পিকে’ ছবির একটি দৃশ্য
প্রশ্নটি ক্লিশে হলেও আজকের সমস্যার দিনেও প্রাসঙ্গিক। কী করে বুঝবো, ‘তুমি কোন দল’? কী নির্ধারণ করে দেবে তুমি ‘বধ্য’ না ‘অবধ্য’? হামলাকারীদের ‘ধর্মীয়’ লক্ষণ ধারণ করলেই তোমার নিষ্কৃতি, নইলে...? একটু যাঁচ করলেই দেখা যায়, মুসলিম সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশই দাড়ি রাখেন না। সাম্প্রতিক প্রজন্মের অনেকেই লুঙ্গি পরতে চান না। আবার দাড়িওয়ালা হিন্দুর সংখ্যাও কম নয় (প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও দাড়ি, বেশ যত্নলালিত দাড়ি বিদ্যমান)। তা হলে কি হয়ে দাঁড়াচ্ছে আমার/ আমাদের পরিচয়? আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় নিশ্চয়ই ভোটার আইডি অথবা প্রস্তাবিত নাগিরিকপঞ্জির অভিজ্ঞান পকেটে নিয়ে ঘুরবেন না সকলে? তা হলে দাঙ্গার চক্রব্যুহে আবদ্ধদের বেঁচে থাকা নির্ভর করবে দাড়ি, ফেজ, পৈতে, স্তোত্রোচ্চারণ, কলমা পড়া অথবা এ সবকে অতিক্রম করে আরও কিছুর উপরে? সম্প্রতি আইডেন্টিটি প্রমাণার্থে এক সাংবাদিকের প্যান্ট খোলারও নির্দেশ দেয় দাঙ্গাকারীরা। সেই লালন ফকিরের তোলা প্রশ্ন আবার সারফেসে উঠে আসে— “নারীর তবে কী হয় বিধান?” হিজাব বা বোরখা সবাই পরেন না। বামনি চিনি কী প্রকারে? আক্রমণের মুহূর্তে কোন অভিজ্ঞান এসে প্রাণ বাঁচাতে পারে, তা ভাবতেই প্রাণান্ত হয়ে যাবে।
আরও মুশকিল রয়েছে। সাম্প্রতিক ফ্যাশনে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে যে সব তরুণ গোঁফ কামিয়ে ‘গোটি’ বা ‘স্পাইস’ দাড়ি রাখেন, আক্রমণের কালে তাঁদের কী হবে? কী হবে অবিবাহিতা, বিধবা অথবা ব্যক্তিগত কারণে সিঁদুর না-পরা হিন্দু মহিলাদের? ঘোটালা বাড়তেই থাকে। এই প্রসঙ্গে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের একটি লেখায় উল্লিখিত একটি রসিকতার কথা মনে পড়ছে। পূর্ব পাকিস্তানে তখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে। খানসেনারা যখন তখন হানা দিচ্ছে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বাঙালি বাড়িতে। এমনই এক সময়ে এক বাঙালি মুসলমান অধ্যাপকের বাড়িতে খানাতল্লাশের অভিপ্রায়ে ঢুকে পড়েছে খানসেনারা। অধ্যাপকের বসার ঘরের দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের ছবি। সেগুলি দেখিয়ে জনৈক সেনা প্রশ্ন তোলে, এঁরা সেই অধ্যাপকের কে হন। অধ্যাপক বিতণ্ডা এড়ানোর জন্য রবীন্দ্রনাথকে তাঁর ‘দাদাজি’ আর নজরুলকে তাঁর ‘নানাজি’ বলে উল্লেখ করেন। খান জানায়, দাদাজি খুবই শরিয়তি আদমি ছিলেন। দাড়ি রাখতেন আর নানাজি একেবারেই বেশরিয়ত, পাষণ্ড। দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে যা-তা। সে হিসেবে দেখলে হিন্দুত্ববাদীদের এক বড় অংশ যে বজরংবলীর ভক্তোঁ, তাঁর মুখমণ্ডল শ্মশ্রূ সম্বলিত কিন্তু গুম্ফবিহীন। তিনি স্বয়ং যদি দাঙ্গার মাঝে পড়ে যান, তো তাঁর কী দশা করবে দাঙ্গাবাজ ভক্তোঁকুল? ভারি ঘোটালা লাগে মাথার মধ্যে। হিজিবিজি গিঁট পড়ে যায়। মেলানো ভার হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন-সুপবন বহিতেছে
এই প্রসঙ্গে আর একটি সিনেমার কথা মনে পড়ছে। কমল হাসন পরিচালিত ‘চাচি ৪২০’। এখানে সিরাজ নামক এক ব্যক্তিকে শিবরাজ নাম নিয়ে গোঁড়া হিন্দু বাড়িতে পাচকের কাজ নিতে হয়। পাজামা ছেড়ে সিরাজ কাছা দিয়ে ধুতি পরে, কপালে তিলক কাটে, বোবার অভিনয় করে। তার ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে তাকে গায়ত্রী মন্ত্র জিগ্যেস করা হয়। সে আজানের সুর আওড়াতে গেলে সর্ব্ববিঘ্নহন্তা চাচি রূপী নাওক সেটাকেই গায়ত্রীর সুরের ছাঁচে ফেলে দেয়। সিরাজ শিবরাজ হিসেবে কাজে বহাল হয়। কিন্তু একদিন সে ধরা পড়ে। চাকরি যাওয়ার উপক্রম হয়। আবার সর্ববিঘ্নহন্তা চাচি রূপী নায়ক মানবতা ও ধর্মীয় আত্মপরিচয়ের ধোঁয়াশা বিষয়ে যুক্তি তুলে মালিকের ভ্রম সংশোধন করে। মালিক সিরাজকে কাজে বহাল রাখেন। কিন্তু শর্ত দেন, তাঁর বাড়িতে তাঁর নিয়মেই তাকে থাকতে হবে। মাছ-মাংসের নামগন্ধও যেন প্রবেশ না করে সেখানে।
‘চাচি ৪২০’ ছবির একটি দৃশ্য
যে কমল ‘হে রাম’ তোলেন, তিনিই তোলেন ‘চাচি ৪২০’। তা হলে কী মেসেজ এখানে উলটে যাচ্ছে? চরম পিতৃতান্ত্রিক পারিবারিক পরিসরে (যা কার্যত রাষ্ট্রেরই আর এক রূপ) পিতা বা প্রধানের সিদ্ধান্তই চরম। এখানে সংখ্যালঘুকে সংখ্যাগুরুর ছাঁচেই টিকে থাকতে হবে। দরকার পড়লে তিলক কাটতে হবে, সিঁদুর পরতে হবে, নিজের খাদ্যাভ্যাস বিসর্জন দিতে হবে, আজানকে গায়ত্রীর খাপে ফেলে দিতে হবে, প্রয়োজনে বোবা সাজতে হবে। কমল সম্ভবত একটা ইতিবাচক বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন এর মধ্যে দিয়ে। গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী পেট্রিয়ার্ক জাতপাতও মানেন। সেই কারণে মেয়ের ডিভোর্স করাতেও পিছপা হন না। মেয়ে পরে কিছু প্রশ্ন তুললে তাকে জানান, সে তার বিবাহিত জীবনকে ফেলে এসেছে। তাঁর তাঁবেতে থাকতে হলে তাঁর নিয়মেই থাকতে হবে। সংখ্যালঘু আর নারী— এখানে একই ক্ষমতাযন্ত্রে পিষ্ট। তাদের আইডেন্টিটি ক্ষমতা-নির্ধারিত, নিয়ন্ত্রিত। আক্রমণের কালে এটাই ঘুরে যায়। অস্ত্রধারী সংখ্যালঘু হলেও সে আক্রান্তের মধ্যে নিজের চিহ্ন খোঁজে। না পেলেই আক্রমণ নিশ্চিত হয়ে দাঁড়ায়।
এ দেশ এখন সমানে লক্ষণ খুঁজে চলেছে। ‘আমরা’ আর ‘ওরা’ চিহ্নিত করার তাগিদে লক্ষণই লক্ষ্যবস্তুকে পয়েন্ট আউট করছে। একটি হৃদয়বান পরিবার উপায়ান্তর না দেখেই তিলক আর সিঁদুরের বর্মে প্রতিহত করেছেন প্রতিবেশীর নিশ্চিত বিপর্যয়কে। এ ভাবেই ১৯৪৬-এ নোয়াখালি-চট্টগ্রামে বহু মুসলমান পরিবার হিন্দু প্রতিবেশীদের জীবন রক্ষা করেছিল, এ দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে রয়েছে সাহিত্যে, অগণিত স্মৃতিকথায়। শুধু লক্ষণ বদলে দিলেই প্রাণে বেঁচে যাওয়া যায়— এ হেন প্রহসনে নিরাপদ দূরত্বে থাকা মানুষ তিক্ত বেদনামাখা একটা হাসি হাসতে পারেন, কিন্তু আক্রান্ত পারেন না। বাঁচার তাগিদে তাঁকে ধারণ করতে হয় আক্রমণকারীর অভিজ্ঞান। এটা মানবতার কতটা অপমান, মুক্ত চিন্তার কতটা শ্বাসরোধকারী কাজ, তা ঠান্ডা মাথায় ভাবলে বোঝা যায়। কিন্তু, রাষ্ট্রশক্তি আর তার থাম ধরে থাকা সংখ্যাগুরুর একটা লক্ষণীয় অংশই সেটা বোঝে না। আক্রমণ ঘনিয়ে উঠতে থাকে, শুধুমাত্র কিছু অন্তঃসারশূন্য চিহ্নকে আঁকড়ে আক্রমণ ঘনিয়ে উঠতে থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy