মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিথ্যাবাদী— দাবি করেন তাঁহার সমালোচকরা। ঠিক ক্রিসমাসের পূর্বে ট্রাম্প সত্যবাদিতার যে দৃষ্টান্ত রাখিলেন, তাহা বিরল। এক বালিকাকে তিনি প্রশ্ন করিলেন, সাত বৎসর বয়সেও সে কি সান্তা ক্লজ়-এ বিশ্বাস করে? প্রশ্নের ইঙ্গিত স্পষ্ট: এই বয়সে পৌঁছাইবার আগেই এখন শিশুরা সান্তা-রহস্য জানিয়া যায়। ওই বালিকাটির সান্তা-বিশ্বাস হয়তো এখনও অটুট, কিন্তু, সমীক্ষায় জানা গিয়াছে, আজকাল পাঁচ বৎসর হইতে আট বৎসরের মধ্যে শিশুরা বুঝিয়া যায়, সান্তা অ-বাস্তব। কিন্তু, বেচারি ডোনাল্ড ট্রাম্প, সত্য বলিয়াও রক্ষা নাই। তাঁহার সত্য-সঙ্কেতে অনেকে চটিয়াছেন। নিন্দুকদের বক্তব্য, শিশু এক দিন সত্যটি জানিবে, তাহা জানিয়াই তাঁহারা সান্তায় শিশুর বিশ্বাসকে প্রশ্রয় দিয়া আসিতেছেন। ইহা এক অকথিত চুক্তি। শৈশবের সম্পূর্ণ বিশ্বাস হইতে বাল্যের সংশয়ী দোলাচল, অতঃপর সম্পূর্ণ অবিশ্বাস— ইহাই মানুষের অন্তর্জগতের পথ। তাহার মধ্য দিয়া আপন সময়ে, আপন উপায়ে শিশুদের পরিক্রমা চলিতেছে প্রতি প্রজন্মে। ইহাই স্বাভাবিক। জ্ঞানবৃক্ষের ফলটি টেলিভিশন সম্প্রচারে বিতরণ না করিলেই কি চলিত না মার্কিন প্রেসিডেন্টের?
ক্ষুব্ধ বাবা-মায়ের প্রতি সহানুভূতি রাখিয়াও একটি কথা বলিতে হয়। শিশু সব জানিতে-বুঝিতে চায়। তাহার অন্তর্জগতে বিশ্বাস-অবিশ্বাস, কল্পনা-বাস্তব নিয়ত মেঘ ও রৌদ্রের মতো খেলা করিতেছে। সে নিজের মনে নানা ব্যাখ্যা গড়িয়া, ভাঙিয়া, আবার গড়িয়া লয়। কল্পনার অজস্র উপাদান সে আপনিই খুঁজিয়া লয়, মিথ্যার জোগান দিতে হইবে কেন? গল্পের দানব বা পরিকে যদি সে গ্রহণ করে, সান্তার সত্যও সহিতে পারিবে। বস্তুত মা-বাবাই অস্বস্তিকর সত্য শিশুকে বলিবার দায় এড়াইতে চাহেন। ‘এলেম আমি কোথা হইতে’ এই সহজ প্রশ্নের উত্তরেও নানা কল্পকাহিনি শুনাইয়া থাকেন। তাঁহাদের আশা, এক দিন সন্তান নিজেই বুঝিয়া লইবে। নিশ্চয় লইবে, কিন্তু খুলিয়া বলিতে বাধা কোথায়? বিশেষত যে কোনও তথ্য যখন আদিগন্ত অন্তর্জালে একটি ‘ক্লিক’-এর অপেক্ষায় বসিয়া আছে, তখন অস্বস্তিকর সত্য লুকাইবার চেষ্টা অর্থহীন। ট্রাম্প সত্য বলিয়া ভুল করেন নাই। তবে টেলিফোনে দুই-এক মিনিটে কথা বলিবার সময়ে হঠাৎ সত্য উদ্ঘাটন করিবার কাজটি হয়তো অনুকরণের যোগ্য নহে।
কেবল খোকাখুকুরাই কি সান্তা ক্লজ়-এ বিশ্বাস করে? ইচ্ছাপূরণের প্রতিশ্রুতি বুড়ো খোকারাও বিশ্বাস করিয়া থাকে। এই কারণেই নির্বাচনের পূর্বে সান্তা ক্লজ়-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন প্রার্থীরা। ট্রাম্পের ঝুলিতে সকলের জন্য উচ্চ বেতনের চাকরি, উন্নত জীবনযাত্রা মজুত আছে, সেই আশ্বাসে তাঁহাকে ভোট দিয়াছিলেন মার্কিন ভোটদাতারা। চাকরি বাড়িয়াছে মাত্র তিন শতাংশ। বিদেশি কর্মী যুক্তরাষ্ট্রে আসিবার, কিংবা ভিনদেশের কর্মীদের মার্কিন সংস্থায় কাজের বরাত দিবার পথ যথাসাধ্য বন্ধ করিয়াও মার্কিনদের নিয়োগ তেমন বাড়ে নাই। সান্তা নাই, মা-বাবাই খেলনা কিনিয়া দেন— জানিলে শিশুর বড় ক্ষতি নাই, কিন্তু খেলনা কিনিবার পয়সা কর্মহীন বাবা-মায়ের নাই, ইহা জানিলে বাস্তবিকই ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে শৈশবের মন। উত্তরমেরুর বরফের প্রাসাদ হইতে উপহার আসে না ঠিকই। কিন্তু ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসও শূন্য হাতে ফিরাইতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy