পণ্য ও পরিষেবা করের (জিএসটি) জন্য দেশ প্রস্তুত কি না, তাঁহার সেই প্রশ্নের কোনও সন্তোষজনক উত্তর অমিত মিত্র মহাশয় এখনও পান নাই। কিন্তু, দিনে চব্বিশ ঘণ্টা বেগে পয়লা জুলাই আগাইয়া আসিতেছে। অতএব, এই কর চালু করিবার সর্বভারতীয় উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গ শামিল হইবে কি না, তাহা লইয়া ধোঁয়াশা কাটে নাই। তবে ধোঁয়াশা আরও আছে। জিএসটি বিলটি যখন আইনে পরিণত হইতেছিল, যখন সংবিধান সংশোধিত হইতেছিল, তখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকিয়া তাহাদের আপত্তি যথেষ্ট প্রবল ও কার্যকর ভাবে জানায় নাই কেন, কেন তাহারা বিভিন্ন বৈঠক কার্যত বয়কট করিয়াছিল, তাহার সদুত্তরও মেলে নাই। জিএসটি পরিষদের পরিসরটিকে তাঁহারা ব্যবহার করেন নাই কেন, অমিত মিত্রদের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হইবে। জিএসটি বিষয়ে তাঁহাদের মূল আপত্তি— এই করব্যবস্থা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী— অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বালিতে মুখ গুঁজিয়া থাকিলে সদুত্তর মিলিবে না।
বরং, জিএসটি-র পরিসরটিকে ব্যবহার করিলে বহু দূর অবধি যাওয়া সম্ভব। পরিষদে কেন্দ্রীয় সরকার কার্যত ভেটো প্রদানের ক্ষমতার অধিকারী, ইহাতে রাজ্যগুলির আপত্তি থাকাই সঙ্গত। কর সংক্রান্ত যে কোনও সিদ্ধান্ত পাশ করাইবার জন্য পরিষদে অন্তত ৭৫ শতাংশ ভোটের প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকার একাই ৩৩.৩ শতাংশ ভোটের মালিক। ফলে, কেন্দ্রের আপত্তি থাকিলে কোনও সিদ্ধান্তই পাশ করানো সম্ভব নহে। কিন্তু, রাজ্যগুলিও চাহিলে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত নাকচ করিয়া দিতে পারে। তাহাদের হাতে মোট ভোট কেন্দ্রের দ্বিগুণ। হিসাব বলিতেছে, ১২টি রাজ্য একমত হইলেই ২৫ শতাংশ ভোট একত্র হয়— অর্থাৎ, রাজ্যগুলিও রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাইতে পারিলে কেন্দ্রের বিরোধিতায় সফল হইতে পারে। এই ঐকমত্যে পৌঁছাইবার কাজটি রাজনীতির। বিরোধী দলগুলিকে তাহাদের সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠিয়া এক জায়গায় আসিতে হইবে। তাহা সম্ভব হইবে কি না, সেই প্রশ্নটি খোলা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা কি সেই রাজনৈতিক পরিণতমনস্কতার পরিচয় দিতে পারিবেন? বিরোধী শিবিরের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো গ্রহণযোগ্য অবস্থান বজায় রাখিতে পারিবেন? জিএসটি পরিষদের বৈঠককে এড়াইয়া চলিলে ইতিবাচক রাজনীতির এই সম্ভাবনাটিই থাকে না।
অন্য একটি কথাও প্রাসঙ্গিক। জিএসটি আসিয়া রাজ্যগুলির করনীতি নির্ধারণের স্বাধীনতা কাড়িয়া লইতেছে বটে, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারও তাহার স্বাধীনতা খোয়াইল। এত দিন অবধি কেন্দ্রের হাতে থাকা পরোক্ষ করগুলির হার নির্ধারণের সম্পূর্ণ অধিকার কেন্দ্রেরই ছিল। এখন তাহাও জিএসটি কাউন্সিলের মতের উপর নির্ভরশীল। ইহাকে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার আরও একটি ধরন ভাবিয়া লওয়া যাইতে পারে কি না, নেতারা বিবেচনা করিবেন। কিন্তু, দেশের পরোক্ষ করনীতির ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির মতপ্রদানের অধিকার যতখানি খর্ব হইতেছে বলিয়া হইচই পড়িয়াছে, বাস্তব ততখানি মারাত্মক নহে। কাউন্সিলের পরিসরটিকে রাজ্যগুলি যথাযথ ভাবে ব্যবহার করিতে পারে কি না, তাহাই মূল প্রশ্ন। পারিলে, ক্ষমতার এক নূতন ভারসাম্য তৈরি হওয়া সম্ভব। আর না পারিলে, গোঁসাঘরে খিল দেওয়াই একমাত্র পথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy