দে শ যদি এক হয়, করের হারই বা অভিন্ন হইবে না কেন? জিএসটি-র পক্ষে নরেন্দ্র মোদীদের এই সওয়ালটি হইতে সস্তা জাতীয়তাবাদকে ছাঁটিয়া ফেলিলেও কিছু নিখাদ সমস্যা পড়িয়া থাকে। পশ্চিমবঙ্গের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা সেই সমস্যার সম্মুখীন হইতেছেন। জিএসটি-তে মিষ্টান্নের উপর পাঁচ শতাংশ কর ধার্য হইয়াছে। কাজুর বরফি বা লাড্ডুতেও পাঁচ শতাংশ, রসগোল্লা বা মালাই চমচমেও। পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানাইয়া বলিয়াছেন, বাংলার মিষ্টান্ন দ্রুত পচনশীল। ফলে, তাহাকে উত্তর ভারতের অপেক্ষাকৃত বেশি দিন ভাল থাকা মিষ্টান্নের শ্রেণিভুক্ত না করিয়া দ্রুত পচনশীল খাদ্যপণ্যের দলে ফেলাই বিধেয়। সেই শ্রেণিতে জিএসটি-র হার শূন্য। বাংলার মিষ্টান্ন একটি উদাহরণমাত্র। নরেন্দ্র মোদীরা যাহাকে ‘এক দেশ, এক বাজার’ বলিয়া চালাইতেছিলেন, তাহার প্রতিটি প্রান্তে এমনই বৈপরীত্য বর্তমান। দিল্লিতে বসিয়া সেই ‘এক দেশ’-এর জন্য অভিন্ন করের হার নির্ধারণ করিবার অর্থ, প্রতিটি বৈচিত্রের উপর অভিন্নতার রোলার চালাইয়া দেওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্রের হাতে ক্ষমতার আধিক্য ঘটিলে এই বিপদই হয়। এই কারণেই জিএসটি আপত্তিকর। প্রশ্নটি মিষ্টান্নের নহে। প্রশ্ন কেন্দ্রে বসিয়া প্রান্তকে নিয়ন্ত্রণ করিবার বাসনার অসম্ভাব্যতার। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন বাজারে যত পণ্য ও পরিষেবা বিক্রয় হয়, কেন্দ্রে বসিয়া প্রত্যেকটির চরিত্রের খুঁটিনাটির খবর রাখা অসম্ভব। যে পণ্যগুলি চরিত্রে ‘জাতীয়’ বা ‘আন্তর্জাতিক’ নহে, সেগুলির সহিত স্থানীয় সংস্কৃতির যোগসূত্রের কথাও দিল্লিতে বসিয়া স্মরণে রাখা কঠিন। এবং, যে পণ্য বা পরিষেবার চরিত্রই অজ্ঞাত, তাহার উপর করের হার ধার্য করিবার মধ্যে যাহা আছে, তাহার নাম গা-জোয়ারি। কেন্দ্র হইতে প্রান্তকে নিয়ন্ত্রণ করিবার ইচ্ছা। এই বাসনাটি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় চরিত্রের পরিপন্থী। এবং, নাগপুরের রাজনৈতিক কর্মসূচির সহিত সংগতিপূর্ণ। ভারতীয়ত্বের একটি বিশেষ ধারণাকে নাগপুর যে ভঙ্গিতে গোটা দেশের উপর আরোপ করিতে চাহে, জিএসটি ঠিক সেই ভঙ্গিতেই দেশের বাজারকে ‘এক’ বলিয়া দেখাইতে চাহে। ভারতে ‘বৈচিত্রের মধ্যে একতা’ বহু-আলোচিত। কিন্তু, এই বাক্যবন্ধে জোর যে শুধু ‘একতা’-র উপরই নহে, ‘বৈচিত্র’-র উপরও সমান ভাবে প়়ড়ে, নাগপুর সচেতন ভাবে তাহা ভুলিয়াছে। মোদীরা সুকৌশলে গোটা দেশকে কথাটি ভুলাইয়া দিতে চাহেন।
এবং, ‘অভিন্ন ভারত’-এর চেহারাটি কী রকম হইবে, তাহাও রাজনীতির প্রশ্ন। ‘মিষ্টান্ন’ বলিতে রাষ্ট্র কেন লাড্ডুই বুঝিবে, কেন মালাই চমচম নহে, ইহা ক্ষমতার প্রশ্ন। হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্থানের আধিপত্য বিস্তারের প্রশ্ন। ‘অভিন্ন’ ভারতীয় সংস্কৃতি বলিতে কেন উত্তর ভারতের উচ্চবর্ণ হিন্দু সংস্কৃতির কথাই বুঝিতে হইবে, কেন বাংলা বা কেরলের নিম্নবর্গ মুসলমান সংস্কৃতি নহে, অথবা ছত্তীসগঢ়ের আদিবাসী সংস্কৃতি নহে, এই প্রশ্নের উত্তর জিএসটি পর্ষদের বৈঠকে মিলিবে না। ইহার জন্য বৃহত্তর রাজনীতিকে প্রশ্ন করিতে হইবে। এখানে লড়াই ভাষার, বর্ণের, অঞ্চলের। ‘অভিন্ন ভারত’-এর নামাবলিতে এই বৈচিত্রগুলিকে ঢাকিয়া রাষ্ট্র যদি একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করিতে চাহে, তাহার প্রতিস্পর্ধী অবস্থান গ্রহণই কর্তব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy