অগস্ট পার হইল। সেপ্টেম্বরও প্রায় মাঝপথে। অথচ, কলিকাতা বা তাহার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে ডেঙ্গির তাণ্ডব সেই ভাবে পরিলক্ষিত হয় নাই। গত বৎসর উত্তর ২৪ পরগনার শহরাঞ্চলে অগস্ট মাস পর্যন্ত ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা ছিল ৩০০০-এরও অধিক। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, এই বৎসর সেই সংখ্যা সবে ১০০ ছাড়াইয়াছে। কলিকাতাতেও গত বৎসরের তুলনায় ডেঙ্গি রোগী কমিয়াছে অন্তত ৫০ শতাংশ। রাজ্যের অন্যত্রও চিত্রটি প্রায় এক।
স্বস্তির চিত্র। স্বস্তির কারণ অনুসন্ধান করিতে গিয়া বিশেষজ্ঞদের একাংশের অনুমান, করোনার প্রাদুর্ভাবই হয়তো ডেঙ্গির ক্ষেত্রে আশীর্বাদ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। লকডাউনে মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত হইয়াছে। ফলে রোগ ছড়াইবার সুযোগ তেমন পায় নাই মশককুল। সচেতনতা বৃদ্ধিও কিছুটা কাজে আসিয়াছে। তবে, কারণ যাহাই হউক, দুই মারি একসঙ্গে আক্রমণ করিলে সেই ধাক্কা সামলানো কঠিন হইত। তবে, নিশ্চিন্ত হইবার উপায় নাই। বিগত কয়েক বৎসরের অভিজ্ঞতা বলিতেছে, এই রাজ্যে ডেঙ্গির চরিত্রটি প্রতি বৎসর এক থাকে না। কোনও বৎসর জুলাই হইতেই রোগীর সংখ্যা বাড়িতে থাকে, আবার কখনও সংক্রমণ ভয়াবহ রূপে পৌঁছাইতে নভেম্বর মাস আসিয়া পড়ে। সুতরাং, অগস্টে রোগী কম মানেই বিপদ কাটিয়াছে, এমন ভাবিবার কোনও কারণ নাই। বরং বর্ষার ভারী বৃষ্টি থামিবার পর শরতের বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতেই জল জমিবার সম্ভাবনা বাড়ে। বৃষ্টির সেই জমা জলই এডিস ইজিপ্টাই মশার আঁতুড়ঘর। এই সময় জমা জলের উৎসগুলি খুঁজিয়া লার্ভা ধ্বংসের কাজটি না করিলে অক্টোবরের মধ্যেই ডেঙ্গি সংক্রমণ তুমুল গতিতে ছড়াইবে।
সেই সম্ভাবনার প্রতিরোধের জন্য রাজ্য কি প্রস্তুত? ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচিটি এক মাস বা একটি নির্দিষ্ট মরশুমের নহে, সারা বৎসরের। করোনা আতঙ্ক এবং তজ্জনিত লকডাউনের কারণে এই বৎসর সেই কর্মসূচিটি যথাযথ পালিত হইয়াছে কি না, সন্দেহ। আনলক পর্বেও করোনা-রোধে প্রশাসনের সর্বশক্তি নিয়োজিত হইবার কারণে ডেঙ্গি কিছুটা যেন উপেক্ষিতই থাকিয়া গিয়াছে। সমস্যা আরও আছে। রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন প্রশিক্ষিত জনস্বাস্থ্য কর্মীর, যাঁহারা বিভিন্ন মরশুমি রোগ প্রতিরোধের কাজটি সারা বৎসর ধরিয়া নির্দিষ্ট ভাবে সুসম্পন্ন করিয়া থাকেন। পশ্চিমবঙ্গে এই কাজে একটি বড় ফাঁক থাকিয়া গিয়াছে। প্রয়োজন পড়িলে এখানে অন্য ক্ষেত্র থেকে কর্মী আনিয়া কাজ চালানো হইয়া থাকে। কিন্তু সেই ব্যবস্থার দুর্বলতা বার বার প্রমাণিত হইয়াছে। জনস্বাস্থ্য বিষয়টি প্রায় সকল রাজ্যেই উপেক্ষিত। পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নহে। জনস্বাস্থ্য কর্মসূচির জন্য প্রশিক্ষিত কর্মী, উপযুক্ত পরীক্ষাগার, পতঙ্গবিদদের প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্যের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকরা বিভিন্ন পুরসভা, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর, জনস্বাস্থ্য কারিগরি-সহ বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয়সাধন করিয়া কাজ করিবেন, ইহাই প্রত্যাশিত। পানীয় জল, নিকাশি, আবর্জনা অপসারণ, রোগবাহী প্রাণী ও পতঙ্গের নিয়ন্ত্রণ, এমন বহুবিধ ও বিচিত্র কার্যসূচি নিয়মিত পালন করিতে হইবে। পশ্চিমবঙ্গে সমন্বয়সাধনের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিতে বহু ফাঁক রহিয়া গিয়াছে। করোনা হইতে ডেঙ্গি— সকল রোগেরই মারণক্ষমতা কমিত, যদি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাটি সবল হইত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy