জগদীপ ধনখড়। —ফাইল চিত্র
এই বার কলিকাতা চলচ্চিত্রোৎসবে ডাক না পাইয়া রাজ্যপাল উষ্মা প্রকাশ করিলেন। ইহার পূর্বে দুর্গাপূজার কার্নিভালে তিনি আমন্ত্রিত ছিলেন, কিন্তু অভিযোগ জানাইয়াছিলেন যে তাঁহাকে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করা হয় নাই, এমনকি টিভিতেও দেখানো হয় নাই। ইহার পরে ক্ষোভ জানাইয়াছিলেন, তাঁহাকে কোনও সরকারি অনুষ্ঠানেই ডাকা হয় না। একের পর এক এই রূপ অভিমানের বন্যা উৎসারিত হইতেছে দেখিয়া রাজ্যবাসী কিঞ্চিৎ বিস্ময় ও কৌতুক লইয়া তাঁহার পানে তাকাইয়া আছে। রাজ্যের সরকারের সহিত তাঁহার বিরোধ হইতে পারে, রাজনৈতিক মতান্তরও ঘটিতে পারে, কিন্তু তাহা বলিয়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণপত্র না পাইয়া তিনি ক্রমাগত নালিশ জুড়িবেন, ইহা তাঁহার ন্যায় পদাধিকারীর শোভা পায় কি না— ভাবিতেছে। তিনি অতীব গুরুত্বপূর্ণ, তাই রাজ্যের সকল কর্মেই তাঁহাকে আহ্বান জানানো হইবে, ইহা ঠিক ভাবনা নহে। বরং তিনি প্রবল গুরুত্বপূর্ণ বলিয়াই, তাৎপর্যহীন অনুষ্ঠানে তাঁহাকে অধিক না ডাকাই বিধেয়। তিনি প্রশাসনের ত্রুটি হইলে সভা ডাকিবেন বা সভায় আহূত হইবেন, রাজ্য সঙ্কটাপন্ন হইলে তাঁহার মূল্যবান পরামর্শ কাজে লাগিবে, কিন্তু পিঠাপুলি মেলায় কেন তাঁহাকে ফাউ দেওয়া হইল না এই লইয়া যদি অনুযোগ জানাইতে থাকেন, তবে তাঁহার লঘু-গুরু বিবেচনা লইয়া প্রশ্ন উঠিতে পারে।
ঘটনা হইল, তাঁহার পদটি আলঙ্কারিক। এই রাজ্যে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সাংবিধানিক প্রতিনিধি। তিনি রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সেতুর ন্যায় রহিয়াছেন, কিন্তু সেই সেতু নিত্য-ব্যবহার্য নহে, অলঙ্কার। অলঙ্কার বস্তুটি সহজ নহে। আরও মনোযোগ দিয়া রাজ্যপাল মহাশয়কে অলঙ্কারের প্রখর মর্যাদার কথা অনুভব করিতে হইবে। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এ কথা সত্য, কিন্তু তাহা বলিয়া ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের সভায় প্রতি বিষয়ে তাঁহার মতামতের প্রয়োজন নাই। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ডি-লিট ও ডি-এসসি ডিগ্রিতে সম্মানিত করিবার কথা হইতেছে, তাঁহাদের বায়োডেটা চাহিবার কথা নয়। কোন সংস্থা কাহাকে সম্মান জানাইবে, কোথায় সিনেমার পসরা বসিবে, ইহা তাঁহার পদে আসীন ব্যক্তির ভাবনাবৃত্তে স্থান পাইবার যোগ্য নহে। আর যদি বা পায়, তাহা লইয়া প্রকাশ্য বিবৃতি বিচক্ষণতার পরিচায়ক নহে, কারণ সংবাদমাধ্যমে ততক্ষণাৎ সেই ঘটনাগুলিকে অযথা স্ফীত ও রঞ্জিত করিয়া, অনভিপ্রেত কলরব সৃষ্টি করা হইবে। যেখানে রাজ্যপালের যাওয়ার অধিকার রহিয়াছে কিন্তু রেওয়াজ নাই, মুখ্যমন্ত্রী আয়োজিত যে বিজয়া সম্মিলনীতে রাজ্যপাল আসিবার ন্যায় প্রোটোকল মানা হয় না, সেইখানে যাইতে মুখাইয়া থাকিবার মধ্যে পরিণতমনস্কতার অভাবই দৃষ্ট হয়।
এখন যুগটিই পড়িয়াছে মুড়ি ও মিছরি গুলাইয়া ফেলিবার। সমাজমাধ্যমে, বাস্তব পৃথিবীতেও, কখন যে কী লইয়া বহু মানুষ উত্তেজিত হইয়া উঠিতেছেন, তাহার ঠিকানা নাই। যে কোনও তুচ্ছ ঘটনা অকস্মাৎ গুরুত্ব পাইতেছে, তুচ্ছ মানুষ সাত দিনের নায়ক হইয়া উঠিতেছেন। যদি রাজ্যের অভিভাবকপ্রতিম মানুষও এই গড্ডলিকায় ভিড়িয়া পড়েন, সাম্প্রতিক সারহীন প্রবণতায় মন ঢালিয়া দেন, তবে তাহা বিশেষ দুর্ভাগ্যের বিষয়। যাঁহাদের স্থিতি ও সংযমের দিকে তাকাইয়া রাজ্যবাসীর দিশা পাইবার কথা ছিল, তাঁহারাও দিগ্ভ্রান্তের ন্যায় অস্থির হইলে চলিবে কী করিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy