Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

শেষ অবধি

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যে শেষাবধি বিশেষ ভাবে সক্ষম নাগরিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হইবার চেষ্টা করিলেন, এই জন্য সাধুবাদ তাঁহাদের প্রাপ্য।

দমদম বিমানবন্দর। —ফাইল চিত্র

দমদম বিমানবন্দর। —ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৫২
Share: Save:

কোনও কাজ একেবারে না হইবার অপেক্ষা দেরিতে হওয়া শ্রেয়— এই প্রবাদবাক্য যে আমাদের প্রশাসনের আপ্তবাক্য, তাহা বারংবার প্রমাণিত। এই শহরে উড়ালপুল ভাঙিয়া না পড়িলে সারানো হয় না, কোনও বাড়ি ভস্মীভূত না হইয়া যাওয়া অবধি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার তদারক করা হয় না। সেই শহরের বিমানবন্দরও যে কিছু প্রবল ঠেলা না খাইলে সকল নাগরিককে সুষ্ঠু পরিষেবা দিবে না, ইহা কি বলিবার অপেক্ষা রাখে? ঘটনা হইল, গত ২০ অক্টোবর প্রতিবন্ধীদের অধিকার লইয়া উদ্যোগী দুই নাগরিকের সহিত অমানবিক আচরণ করিবার অভিযোগ ওঠে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এক জনকে একা বিমানে উঠিতে বাধা দেওয়া হয়, অপর জনের ক্যালিপার (পায়ের কৃত্রিম ধাতব বিকল্প) যথাযথ রূপে কাজ করে কি না, সেই প্রমাণ দিতে বলা হয়। সহযাত্রীদের প্রতিবাদ প্রবল হইয়া উঠিলে দুই সপ্তাহের ভিতর বিমানবন্দরকে প্রতিবন্ধী-বান্ধব করিয়া তুলিতে একাধিক পদক্ষেপ করিলেন কর্তৃপক্ষ।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যে শেষাবধি বিশেষ ভাবে সক্ষম নাগরিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হইবার চেষ্টা করিলেন, এই জন্য সাধুবাদ তাঁহাদের প্রাপ্য। বিলম্ব হইলেও চক্ষু উন্মীলিত হইল, নাগরিকের পরিষেবা পাইবার বন্দোবস্ত হইল— হুইলচেয়ারে সওয়ার ব্যক্তিদের জন্য অপেক্ষাকৃত নিচুতে ডিসপ্লে বোর্ড বসিল, তাঁহাদের জন্য সিঁড়িতে ফ্লুয়োরোসেন্ট মার্কিং হইল, দৃষ্টিহীনদের জন্য বিশেষ ধরনের পথ তৈয়ারি হইল, এবং বিশেষ ভাবে নির্মিত হইল শৌচাগার। এবং এই সকল ব্যবস্থাকে আদর্শ মানিয়া দ্রুত কত দূর অগ্রসর হওয়া যায়, সেই পরিকল্পনা প্রয়োজন। পশ্চিমের উন্নত দেশগুলিতে হুইলচেয়ারে সওয়ার কোনও নাগরিক একাই গণপরিবহণে যে কোনও স্থানে পৌঁছাইতে পারেন। রাস্তাঘাট, বাস-ট্রাম সেই ভাবেই প্রস্তুত করা হয়। ভারত এখনও এত দূর ভাবিতে না পারিলেও ধাপে ধাপে কাজ আগাইতে পারে। যেমন, কলিকাতার উদাহরণ হইতে শিক্ষা লইয়া দেশের প্রতিটি বিমানবন্দরকে প্রতিবন্ধী-বান্ধব করিয়া তোলা যাইতে পারে।

আশা বেশি নাই, কেননা আমাদের লজ্জার ঐতিহ্যটি কী করিয়া বিস্মৃত হওয়া সম্ভব? আঠারো বৎসর পূর্বে ভারতে আসিয়া কতকগুলি শ্রেষ্ঠ পুরাকীর্তি দেখিবার ইচ্ছাপ্রকাশ করিয়াছিলেন স্টিফেন হকিং। সেই সূত্রে প্রশাসনের টনক নড়িয়াছিল— একটি স্থানেও হুইলচেয়ার লইয়া পৌঁছাইবার ব্যবস্থা নাই! যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চারটি অস্থায়ী কাঠের র‌্যাম্প তৈয়ারি করা হইয়াছিল। ইহার পর সেই ব্যবস্থা কিছু উন্নত হয়। কিন্তু প্রশ্ন হইল, হকিং না আসিলে কি কোনও বিশেষ ভাবে সক্ষম নাগরিকের পক্ষে এই জগদ্বিখ্যাত সৌধগুলি দর্শন করা সম্ভব হইত? আসলে, আমাদের সমাজে বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের আজও অক্ষম বলিয়া দেখা হয়, যাহার সহিত অনিবার্য ভাবে চলিয়া আসে অবহেলা। দুই-ই কেবল অন্যায় নহে, অপরাধ। কেননা প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার পাইবার কথা সংবিধানে স্বীকৃত। এই অধিকার নিশ্চিত করিবার কথা প্রশাসনেরই। বাস্তবিক, প্রশাসনের দায়িত্ব দুইটি। প্রথমত, সহমর্মী হইবার পাঠ গ্রহণ করা, এবং দ্বিতীয়ত, নাগরিক পরিষেবা যে কানুনের অন্তর্গত তাহা স্বীকার করা। না হইলে এই অব্যবস্থাই ভবিতব্য।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy