আক্রান্ত সেই শিক্ষক।—ফাইল চিত্র।
এ রাজ্যের শিক্ষাঙ্গন যে তাণ্ডবের চেহারা দেখছে গত বেশ কয়েক বছর ধরে, সেই তাণ্ডবের ঘটনা পরম্পরায় এই প্রথম বার সামান্য ব্যত্যয় দেখা গেল। অধ্যাপক বা শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনায় প্রশাসনকে একটু স্পষ্ট ভাবে নড়েচড়ে বসতে দেখা গেল এ বার। শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন অধ্যাপক এবং সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার হচ্ছেন অভিযুক্তরা, এমন দৃশ্য গত কয়েক বছরে খুব একটা সহজলভ্য ছিল না। নিগৃহীত অধ্যাপক ফোন পাচ্ছেন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে, এমনটাও বিরল ছিল। কিন্তু এ বার এই সব কিছুই ঘটল। পরিস্থিতিতে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন এল। কিন্তু উদ্বেগটা এখনও রয়েই গেল।
কোন্নগরের কলেজে যে ঘটনা ঘটেছে, তাকে ন্যক্কারজনক বললেও কম বলা হয়। কলেজ চত্বরেই উন্মত্তের মতো একদল তরুণ ঝাঁপিয়ে পড়ছে অধ্যাপকের উপরে, চলছে অজস্র কিল-চড়-ঘুষি, বেপরোয়া মারের মুখে অসহায়, দিশাহারা হয়ে পড়া অধ্যাপককে রক্ষা করতে ছুটে আসতে হচ্ছে ছাত্রীদের— এইরকম দৃশ্য শুধু নিন্দনীয় নয়, গোটা সমাজের পক্ষে অসীম লজ্জার। কিন্তু এ রকম লজ্জার মুখোমুখি গত বেশ কয়েকটা বছর ধরেই হতে হচ্ছে আমাদের। কখনও রায়গঞ্জে ‘বাচ্চা ছেলেদের’ হাত ধরে, কখনও ভাঙড়ে ‘দামাল’ নেতার সৌজন্যে। কিন্তু প্রায় কোনওদিনই সে সবের প্রতিকার হত না। এ বার মুখ্যমন্ত্রী যে ফোন করলেন আক্রান্ত অধ্যাপককে, তিনি যে পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন, দুই অভিযুক্তকে যে গ্রেফতারও করা হল, এই ছবিকে স্বাগত জানানোই যেতে পারে।
২৩ মে তারিখটা অনেকখানি বদলে দিয়েছে সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি। বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষককে চমকে দিয়ে বাংলার জনতা ১৮টি লোকসভা আসন ভরে দিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। নির্বাচনের এই ফলাফলের নেপথ্যে বিজেপির কৃতিত্ব নিশ্চয়ই রয়েছে। তবে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দুষ্কর্মের ভূমিকা তার চেয়েও বেশি। সে কথা যদি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝে থাকেন এবং পরিস্থিতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে উদ্যোগী হন, তা হলে সেই উদ্যোগ বা প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাতেই হয়।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আরও পড়ুন: কোন্নগরে আক্রান্ত অধ্যাপককে ফোন মমতার, কলেজে গিয়ে ক্ষমা চাইলেন তৃণমূল নেতা
কিন্তু এ কথা মাথায় রাখা দরকার যে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ অনেক ভাল। আবার বলছি কোন্নগরের কলেজটায় যে ঘটনা ঘটল, তার নিন্দা কোন ভাষায় করব বুঝতে পারছি না। তাই এই ধরনের ঘটনা বার বার না ঘটনাই সবচেয়ে বেশি করে কাম্য। আগে এমন লজ্জাজনক ঘটনা ঘটলেও, প্রশাসন উপযুক্ত পদক্ষেপ করত না, এখন থেকে করবে— এ বার তা খারাপ নয়। কিন্তু আক্রান্ত অধ্যাপকের কাছে ক্ষমা চাইলে বা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করলে কলঙ্কের দাগটা মুছে যায়, এমনও নয়।
আরও পড়ুন: ফের শিক্ষককে মার, কোন্নগরের কলেজে তাণ্ডবে অভিযুক্ত টিএমসিপি
অতএব এই কলঙ্কের পুনরাবৃত্তি আর চাই না। এই লজ্জার মুখ আর দেখতে চাই না। সেই দায়িত্বটা শাসকদল এবং প্রশাসনকেই বেশি করে নিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy