Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

স্বৈর ও তন্ত্র

স্বৈরাচারী শাসক ও গণতন্ত্রের সম্পর্কের অপ্রিয় প্রসঙ্গ এই আলোচনায় আসিবেই। কেননা, স্বৈরাচারী শাসকেরাও সাধারণত ক্ষমতায় আসেন গণতন্ত্রের পথেই।

জনতার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে পুলিশ লাঠি চালাইবার পরে সংবিধান হস্তে রাস্তায় বসিয়া পড়ে সপ্তদশ বর্ষীয়া কিশোরী ওলগা মিসিক। জনতার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে পুলিশ লাঠি চালাইবার পরে সংবিধান হস্তে রাস্তায় বসিয়া পড়ে সপ্তদশ বর্ষীয়া কিশোরী ওলগা মিসিক।

জনতার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে পুলিশ লাঠি চালাইবার পরে সংবিধান হস্তে রাস্তায় বসিয়া পড়ে সপ্তদশ বর্ষীয়া কিশোরী ওলগা মিসিক। জনতার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে পুলিশ লাঠি চালাইবার পরে সংবিধান হস্তে রাস্তায় বসিয়া পড়ে সপ্তদশ বর্ষীয়া কিশোরী ওলগা মিসিক।

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ০১:২১
Share: Save:

আসন্ন মস্কো শহরের ডুমা নির্বাচনে বিরোধী নেতাদের অংশগ্রহণ করিতে দেওয়া হইতেছে না। উহার বিরুদ্ধে জনতার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে পুলিশ লাঠি চালাইবার পরে সংবিধান হস্তে রাস্তায় বসিয়া পড়ে সপ্তদশ বর্ষীয়া কিশোরী ওলগা মিসিক। পিছনে ব্যাটনধারী, হেলমেটপরিহিত রায়ট পুলিশ আর সম্মুখে রাশিয়ার সংবিধান পাঠরত সপ্তদশী— ছবিটি রাশিয়ার গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতীক হইয়া উঠিয়াছে। সন্দেহজনক ভাবে বিরোধী নেতা খুন হইলে অভিযোগ ফুৎকারে উড়াইয়া দেওয়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরিচিত ভঙ্গি। মার্কিন নির্বাচনে রুশ হ্যাকিংয়ের অভিযোগ উঠিবার পরেও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার তৎপরতাকে তাচ্ছিল্য করিয়াছিলেন তিনি। তবে ওলগা মিসিককে অগ্রাহ্য করা সম্ভবত তত সহজ হইবে না। ইতিহাসে কিছু মুহূর্ত আছে, যখন গগনচুম্বী ক্ষমতার নৃশংস অত্যাচারে ভীত না হইয়া গণতন্ত্রের জন্য একা লড়িয়া গিয়াছেন জনতার কোনও এক প্রতিনিধি, পরবর্তী কালে তাঁহার প্রতিবাদ প্রতীক হইয়া উঠিয়াছে। উদাহরণ হইতে পারেন ১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের ট্যাঙ্ক ম্যান, কিংবা ১৯৬৭-র পেন্টাগনগামী মিছিলে সেনা রাইফেলের মুখে ফুল গুঁজিয়া দেওয়া ব্যক্তি। আপন অধিকারে সচেতন ওলগাও উপায়ান্তর না দেখিয়াই নিজস্ব ভঙ্গি বাছিয়া লইয়াছে, এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি একটি সহজ বার্তা দিয়াছে— শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সংবিধানস্বীকৃত, এবং বেআইনি নহে।

স্বৈরাচারী শাসক ও গণতন্ত্রের সম্পর্কের অপ্রিয় প্রসঙ্গ এই আলোচনায় আসিবেই। কেননা, স্বৈরাচারী শাসকেরাও সাধারণত ক্ষমতায় আসেন গণতন্ত্রের পথেই। ক্ষমতা লাভের পরে সেই গণতন্ত্রকে তাঁহারা অবহেলা করিতে থাকেন। গত বৎসর অভূতপূর্ব ৭৬.৬৯ শতাংশ ভোট পাইয়া চতুর্থ বারের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হইয়াছিলেন পুতিন। এবং শাসক হইবার পর বারংবার জনবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত লইতে দ্বিধান্বিত হন নাই তিনি। যেমন, ২০১২ সালে পদে বসিবার পরেই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ চার হইতে ছয় বৎসর করিয়া দিয়াছিলেন। সেই স্বৈরাচারের ধারাবাহিকতার চরমতম অবয়বটি মস্কোর নির্বাচনে প্রকট হইয়াছে। পুতিনের আচরণ— তুলনীয় না হইলেও— স্মরণ করাইতে পারে নাৎসি জার্মানিকে। চ্যান্সেলর হইয়াই ভাইমার প্রজাতন্ত্রকে জার্মান রাইখে পরিণত করিয়াছিলেন ফুয়েরার অ্যাডল্‌ফ হিটলার। অনুমান করা চলে, বিপুল জনসমর্থন পাইবার পরে আপনাকেই সংবিধান ভাবিতে শুরু করেন স্বৈরাচারী শাসক। স্মরণীয়, ক্ষমতার শিখরে পৌঁছাইয়া ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই ঘোষণা করিয়াছিলেন ‘আমিই রাষ্ট্র’! হীরক রাজার সুচতুর রাজজ্যোতিষী পদ্য শুনাইয়াছিলেন: ‘লগ্ন তো সম্রাটের হাতে/ পঞ্জিকা কী বলে কী এসে যায় তাতে!’ শেষাবধি, সর্বশক্তিমান শাসকের মুখনিঃসৃত বাণীই কানুন হইয়া উঠে। সেই কারণেই হয়তো বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতেও গত বৎসর ‘সংবিধান বাঁচাও’ মিছিলে শামিল হইয়াছিলেন জিগ্নেশ মেবাণী, কানহাইয়া কুমারের ন্যায় তরুণ বিরোধী রাজনীতিকরা। অতএব, যুগ যুগ ধরিয়াই স্বৈরাচার প্রাথমিক ভাবে জনতা প্রদত্ত বলে বলীয়ান। রাশিয়ার রাজপথে সৃষ্ট প্রতীক সেই সত্যটি আর এক বার উস্কাইয়া দিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Anarchy Vladimir Putin Olga Misik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy