ছবি: পিটিআই।
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ঘোর সঙ্কটকাল। মাত্র দিন কয়েকের ব্যবধানে বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত প্রায় পাঁচশতাধিক নার্স রাজ্য ছাড়িয়াছেন। ইঁহারা প্রত্যেকেই ভিন রাজ্যের বাসিন্দা। বলা হইতেছে, পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রীর অভাব এবং সামাজিক দুর্ব্যবহারই স্বগৃহে ফিরিতে চাহিবার প্রধান কারণ। একসঙ্গে এত জন কর্মীর অনুপস্থিতিতে যে কোনও পরিষেবাই বেহাল হইয়া পড়িতে বাধ্য। ইহার সঙ্গে যোগ করিতে হইবে করোনা-আক্রান্ত ও রোগী-সংস্পর্শে আসিবার পর কোয়রান্টিনে চলিয়া যাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যাটিও। অর্থাৎ রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবায় স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাব উদ্বেগ তৈরি করিতেছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে তিলধারণের জায়গা নাই। ক্রমবর্ধমান রোগীর তুলনায় স্বাস্থ্যপরিষেবা প্রদানকারীদের সংখ্যাটি রীতিমতো উদ্বেগজনক। মুখ্যমন্ত্রী বলিয়াছেন, অবসরপ্রাপ্ত নার্সদের ডাকিয়া অবস্থা সামাল দিতে। সন্দেহ হয়, সেইটুকু সামালে বিপদ কাটিবে না।
সঙ্কটের ক্ষেত্রটি কিন্তু বহু পূর্ব হইতেই প্রস্তুত হইয়াছিল। বিগত কয়েক বৎসরে রাজ্যে একাধিক হাসপাতাল তৈরি হইয়াছে। অথচ পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয় নাই। বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবা অনেকাংশেই নির্ভরশীল ভিনরাজ্য হইতে আসা স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর। এবং সরকারি ক্ষেত্রগুলি ধুঁকিতেছে উপযুক্ত সংখ্যা ও প্রশিক্ষণের অভাবে। ২০১৮ সালের কেন্দ্রীয় সরকার প্রদত্ত পরিসংখ্যানই বলিতেছে, রাজ্যের প্রাথমিক এবং মধ্যবর্তী— উভয় স্বাস্থ্যব্যবস্থাতেই পরিকাঠামো এবং পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব তীব্র। রাজ্যের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা নামমাত্র। গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে যেখানে ১০,৩৫৭ জন পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন, সেখানে আছেন মাত্র ২,৮৪৮ জন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে প্রয়োজন ৯১৩ জন মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর, অথচ কাজ করিতেছেন ২৭৭ জন। অথচ, গ্রামীণ স্বাস্থ্যপরিষেবার এক বৃহৎ অংশই এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির উপর নির্ভরশীল। দৈন্যের চিহ্ন এই একটি বা দুইটি ক্ষেত্রে নহে, সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রায় সর্বত্র, প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকট। স্বাস্থ্যকর্মী-সঙ্কট এই সুবিশাল ফাঁকগুলির একটি দিকমাত্র। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর গর্ব, এই রাজ্যে সমস্ত সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু পরিকাঠামো বেহাল হইলে বিপুল সংখ্যক রোগীর চাপ সেই ব্যবস্থা সহ্য করিবে কী উপায়ে? পশ্চিমবঙ্গের জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামোর এই দৈন্যদশাই এত কাল বেসরকারি পরিষেবার দিকে মানুষকে ঠেলিয়া দিয়াছে।
এই সঙ্কটকালে বিপর্যয় মোকাবিলার উপায়টি প্রচলিত পথে ভাবিলে চলিবে না। কোভিড-এর আগমন স্পষ্ট করিয়াছে, সারা দেশেই পরিযায়ী শ্রমের ধরনটি আগামী দিনে পরিবর্তিত হইবে। সমাজের একটি বৃহৎ অংশ চাহিবে ভিনরাজ্যের পরিবর্তে, প্রয়োজনে অল্প উপার্জনেও, নিজ বাসস্থানের সন্নিকটে জীবিকার সংস্থান করিতে। রাজ্যও চাহিবে নিজ রাজ্যের লোককে ধরিয়া রাখিতে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও এই প্রবণতা দেখা দিবার সম্ভাবনা। ইহা এক দিকে যেমন সমস্যার, তেমনই অন্য দিকে ইহা এক নূতন সুযোগেরও জন্ম দিবে। এই রাজ্যের ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে প্রশিক্ষিত করিবার সুযোগ। কর্মসংস্থানের সুযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy