Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

এখন সব অলীক

ভারতীয় রাজনীতিতে ‘রাজধর্ম’ শব্দটি ক্রমশ অলীক হইয়া উঠিতেছে। নয়াদিল্লিকেন্দ্রিক রাজনীতির ক্ষেত্রে ইহা বিশেষ রূপে প্রযোজ্য।

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০০
Share: Save:

ভারতীয় রাজনীতিতে ‘রাজধর্ম’ শব্দটি ক্রমশ অলীক হইয়া উঠিতেছে। নয়াদিল্লিকেন্দ্রিক রাজনীতির ক্ষেত্রে ইহা বিশেষ রূপে প্রযোজ্য। সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হিসাবে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে বিশেষ চারটি রাজ্যের ট্যাবলো বাদ পড়িবার প্রসঙ্গটি উঠিয়া আসে। রাজ্যগুলি হইল: পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, কেরল ও বিহার। প্রথম তিন রাজ্যে কোনও না কোনও অ-বিজেপি দল ক্ষমতায়, এবং বিহারে ইদানীং শাসক দল জেডিইউ-র সহিত নিয়মিত মতবিরোধ হইতেছে প্রধান শরিক বিজেপির। বারংবার জোট বিরোধী মন্তব্য করিতেছেন জেডিইউ নেতা প্রশান্ত কিশোর, বিহারে সিএএ চালু করিবেন না বলিয়া ঘোষণা করিয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক শীতল বা মন্দ হইবার পর প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো বাদ পড়িলে ঘটনাক্রমকে আর সরল ভাবে দেখিবার উপায় থাকে না। অনুমান করা যায়, দেশের শাসককে এমন এক রাজনীতিসর্বস্বতা গ্রাস করিতেছে, যেখানে প্রশাসক সত্তাটি তাহারা বিস্মৃত হইয়াছে। দুই পরিচিতি গুলাইয়া যাইলে যাহা হয়— বিন্দুমাত্র সহিষ্ণুতাও প্রশ্নাতীত।

ধরা যাউক পশ্চিমবঙ্গের কথা। রাজ্য সরকারের তরফে তিনটি বিষয় প্রস্তাব করা হইয়াছিল: কন্যাশ্রী, সবুজশ্রী ও জল ধরো জল ভরো। তিনটিই রাজ্য সরকারের (রাজ্যের শাসক দলের নহে) প্রকল্প হইলেও একটি বিষয়কেও উপস্থাপিত করিবার উপযুক্ত বলিয়াই গণ্য করেন নাই বাছাই কমিটির সদস্যেরা। কেরলে আবার বিষয় লইয়াও কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের স্থান ছিল না। দক্ষিণের রাজ্যটির এই বারের বিষয় ছিল নৃত্যশৈলী ও স্থাপত্য, এবং তাহার সহিত ব্যাকওয়াটার। মালয়ালি সংস্কৃতি লইয়া যদি বিরোধ না থাকে, তাহা হইলে এই বিষয় লইয়া সঙ্কট ঘনাইবার কথা নহে। কেরলের আইনমন্ত্রী এ কে বালন জানাইয়াছেন, সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পাশ করাইবার কারণেই ট্যাবলো বাদ পড়িয়াছে বলিয়া অনুমান। বস্তুত, একই কথা খাটিবে অবশিষ্ট তিন রাজ্যের ক্ষেত্রেও। রাজনীতির স্বার্থসিদ্ধি হয়তো হইল, কিন্তু দেশের হইল কি? বিশেষ করিয়া ভারতের মতো দেশের? বিবিধতার যে সহাবস্থান ভারতের সৌন্দর্য, উহা প্রতি দিন কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বগ্রাসী রাজনীতিতে ঢাকা পড়িতেছে।

এই ধরনের নিম্নরুচির রাজনীতিতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কাজকর্মে একটি ভারসাম্য রক্ষা করিবার নীতিটি পালিত হওয়া জরুরি যুক্তরাষ্ট্রীয়তা বজায় রাখিবার জন্যই। অথচ এখন ক্রমশ তাহা অসম্ভব হইয়া দাঁড়াইতেছে, রাজধর্ম অদৃশ্য হইবার সঙ্গে সঙ্গেই প্রদেশগুলির নিজস্বতা বিলীন করিবার চেষ্টা চলিতেছে। প্রজাতন্ত্র দিবস কিন্তু সমগ্র দেশের উৎসব। সমগ্র দেশ বলিতে— আঠাশটি রাজ্য ও নয়টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লইয়া গঠিত এক ভূখণ্ড। বিজেপি পাল্টা যুক্তি দিয়া বলিয়াছে, তাহাদের শাসনাধীন কিছু ট্যাবলোও নির্বাচনের যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হয় নাই। কিন্তু প্রশ্নটি হইল, দেশের প্রজাতন্ত্র দিবসে একটিও প্রদেশ বাদ পড়িবে কেন? দেশের প্রতি অঞ্চল যদি একই আদর না লাভ করে, যদি একই ছত্রচ্ছায়ায় লালিত না হয়, তাহা হইলে উহাকে বিমাতৃসুলভ আচরণই বলিতে হইবে। ক্ষুদ্র গণ্ডি অতিক্রম না করিলে কেবল বৈষম্য বাড়িবে না, দেশের চেহারাটিই পাল্টাইয়া যাইবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Tablo Republic Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy