Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Fake News

অনর্গল ফেকের রাজ্যে পৃথিবী ছলনাময়

কখনও নাগরিকত্ব আইন বা নাগরিক পঞ্জির সমর্থনে মিসড কল দেওয়ার জন্য বিজেপি আইটি সেলের টোপ। কখনও দীপিকা পাড়ুকোনকে বয়কট করতে ‘ছপাক’ ছবির কেটে রাখা টিকিট বাতিল করার একই ‘স্ক্রিনশট’ বারবার শেয়ার। মিথ্যার প্রচারে এগিয়ে সামাজিক মাধ্যম। কী ভাবছে জেলা, শুনলেন মনিরুল শেখএখন তথ্যপ্রযুক্তির হাত ধরে চলে এসেছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারের মতো কত রকম সামাজিক মাধ্যম।

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৪০
Share: Save:

সত্যমেব জয়তে

বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহের উদার অর্থনীতি ও নতুন আসা আর্ন্তজালের দৌলতে গণমাধ্যমে বিপ্লব আসে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে অসংখ্য টিভি চ্যানেল। তাতে গণমাধ্যমের উপর সরকারের রাশ বেশ কিছুটা হ্রাস পায়।

এখন তথ্যপ্রযুক্তির হাত ধরে চলে এসেছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারের মতো কত রকম সামাজিক মাধ্যম। কিন্তু টিভি চ্যানেল বা সোশ্যাল মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ছে। অনেকেই মনে করছেন, খবরের চ্যানেলগুলি অর্থের বিনিময়ে নিজেদের বিকিয়ে দিচ্ছে। ‘ফেক নিউজ’ করছে। রয়েছে রাষ্ট্রশক্তির অদৃশ্য ভীতিও। সরকারের সমালোচনা কিংবা সরকার-বিরোধী খবর পরিবেশন করলেই সঞ্চালকের চাকরি যাওয়া, ইডি বা সিবিআই-কে দিয়ে চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে হেনস্থা করানো রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সরকারের স্তুতি করতে গিয়ে সত্যিকারের খবর হারিয়ে যাচ্ছে। গোয়েবলসীয় কায়দায় একতরফা সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। বিপরীতে গেলেও জুটছে রাষ্ট্রদ্রোহীর তকমা।

সোশ্যাল মিডিয়া আবার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কিছু গোষ্ঠীর দ্বারা। রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীগুলো নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে বিকৃত খবর, মিথ্যা খবর ছড়াচ্ছে। অতিসম্প্রতি বিজেপির নেতৃত্বে চলা এনডিএ সরকার ঘোষণা করেছে যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে সমর্থন করার কথা জানাতে একটি ‘টোল ফ্রি’ নম্বরে ফোন করলেই চলবে। কিন্তু ফোন নম্বরটি ব্যবহার করলেই চলে আসছে হরেক রকমের অফার। চাকরির টোপ, একাকিত্ব দূর করার জন্য বন্ধুত্বের হাতছানি, উষ্ণ ছবি, আরও কত কী। বিরোধীরা বলছেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে সংসদের দুই কক্ষে পাশ করিয়ে সরকার চিন্তিত হয়ে পড়েছে। তাই জনমত যাচাই করার নামে যুবক-যুবতীদের চাকরি বা খোলাখুলি যৌনতার টোপ দিচ্ছে।

অপর দিকে সরকার পক্ষের দাবি, আইনটি বানচাল করার জন্যই বিরোধীরা এ সব নোংরা চক্রান্ত করছে। এখন কে ঠিক আর কে ভুল, কোন খবরটা আসল আর কোনটা নকল, তা বুঝতে জনতা জনার্দন সম্পূর্ণ দিশেহারা। হয়তো আরোপিত সত্যকেই আমরা অজান্তে সত্য বলে প্রতিনিয়ত গ্রহণ করে চলেছি।

তা হলে কি এ ভাবেই চলবে? রবীন্দ্রনাথ বলে গিয়েছেন, মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ। মানুষই তিমিরবিলাসী না হয়ে তিমিরবিনাশী হতে পারবে। রাষ্ট্রশক্তি যতই ভারতকে হীরক রাজার দেশ বানানোর চেষ্টা করুক, যতই চেষ্টা করুক যন্তরমন্তর ঘরে ঢুকিয়ে মগজধোলাই করতে, চরণদাসের মতো নির্ভীক চারণেরা যতক্ষণ থাকবে, নকল খবরের জাল ছিন্ন করে সত্য ঠিক পথ করে নেবে।

স্নেহাশিস চৌধুরী
স্কুলশিক্ষক, ধুবুলিয়া

সত্যের মুখোশ

মুক্ত বাজার অর্থনীতির সুবাদে বিপ্লব এসেছিল গণমাধ্যমে। আর ২০০৭ নাগাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুনামি আসে। গোড়ায় ইয়াহু মেসেঞ্জার, অরকুট, পরে ফেসবুক, টুইটার। হাতে-হাতে স্মার্টফোন চলে আসা আর ডেটার দর তলানিতে চলে যাওয়ার পরে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, টিকটক এখন অনেকের প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী। খরচ কমে যাওয়ায় ওয়েবসাইটও বেড়েছে হু-হু করে। ফলে খবরের এখন হাজার উৎস।

আর ঠিক এখানেই বাধছে গোল। বহু সময়েই স্বার্থ-গোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে। তারা নিজেদের মতো নানা খবর তৈরি করছে। সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে, আবার অনেক সময়ে নিখাদ মিথ্যে সামাজিক মাধ্যম মারফত ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেটগতির যুগে মানুষ সে সব যাচাই না করেই গ্রোগাসে গিলে চলেছে। অনেক সময়ে সাধারণ মানুষের কাছে যাচাইয়ের উপায়ও থাকে না। দ্রুত ‘ফরওয়ার্ড’ বা ‘শেয়ার’ হতে-হতে সে সব ছড়িয়ে পড়ে।

এই বাংলাতেই তো ১৭ বছরের এক কিশোরের ফেসবুক পোস্টের জেরে কিছু দিন আগে হিংসার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে পড়ার ফল যে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা অনেকেই জানেন। বহু প্রান্তিক মানুষকে ছেলেধরা সন্দেহে প্রাণ দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার এক সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি অপর সম্প্রদায়ের বিদ্বেষ উদ্রেক করাই থাকে লক্ষ্য। তাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেষ বারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও ফেক নিউজের বাড়বাড়ন্ত দেখা গিয়েছিল। বোঝা গিয়েছিল, নানা ওয়েবসাইটে প্রচারিত মনগড়া খবর কী ভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। সে দেশের মেসিডেনিয়ায় ক্ষুদ্র শহর ভেলেস। ভোটের আগে সেই শহর থেকেই সংবাদভিত্তিক একশোটি ওয়েবসাইটে ট্রাম্পপন্থী খবর ছাপা হত। এই করে বহু লোক টাকা রোজগার করে। আর একটি সমীক্ষায় জানা যায়, মার্কিন দেশের ৬২ শতাংশ তরুণ-তরুণীই খবরের ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে নির্ভরশীল। আর সেই সুযোগে ওয়েবসাইটগুলি নানা আজগুবি খবর ছড়ায়। যত বেশি লোক ক্লিক করে ওই সব খবর পড়েন, ততই বাড়ে তাদের বিজ্ঞাপনের পরিমাণ ও দর। এ ভাবেই চলে ফেক নিউজের কারবার।

গুগল-ফেসবুক একাধিক বার বলেছে, ভুয়ো খবরের মাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ করতে তারা বদ্ধপরিকর। তবুও কতটা কাজ হচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকেই। আবার কোনও উদার রাষ্ট্রে কিছু বন্ধ করে দেওয়াও কাজের কথা নয়। ফলে বহুপাক্ষিক নজরদারি ও সচেতন পাঠকই পারে এই প্রতারণা বন্ধ করতে।

কাশীনাথ মাহাতো
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কল্যাণী

অন্য বিষয়গুলি:

CAA Social Media Fake News
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy