এই মহামন্দার মরশুমেও ফেসবুক কেনাকাটা করিল। মুকেশ অম্বানীর জিয়ো প্ল্যাটফর্মস লিমিটেড সংস্থাটির ৯.৯৯ শতাংশ সম্প্রতি শেয়ার কিনিয়া লইল ফেসবুক— ৪৩,৫৭৪ কোটি টাকায়। ২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপ কিনিবার পর ফেসবুক আর কোনও সংস্থা কিনিতে এত টাকা খরচ করে নাই। আরও গুরুত্বপূর্ণ— এই প্রথম ফেসবুক কোনও সংস্থার ‘মাইনরিটি শেয়ার’ কিনিল। অর্থাৎ, এই বিপুল বিনিয়োগের পরও সংস্থার পরিচালনভার ফেসবুকের আয়ত্তাধীন হইল না। ফেসবুক হঠাৎ এত খরচ করিল কেন? এই প্রশ্নের প্রাথমিক উত্তর: বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ হিসাবে ভারতের বাজারের গুরুত্ব ফেসবুকের নিকট অপরিসীম— বিশেষত, চিনের বাজারটি তাহার নিকট অবরুদ্ধ বলিয়া। সমাজমাধ্যমের মঞ্চ হিসাবে ভারতের বাজারে ফেসবুকের উপস্থিতি বিপুল। ব্যবসার ভিন্নতর সম্প্রসারণের জন্য তাহাকে ব্যবহার করা ফেসবুকের পক্ষে যেমন লাভজনক, তেমনই সুবিধাজনক।
এই ভিন্নতর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেই রিলায়্যান্স জিয়ো-র সহিত ব্যবসায়িক উদ্যোগ তাৎপর্যপূর্ণ। মাত্র কয়েক বৎসরে জিয়ো ভারতের বৃহত্তম টেলিকম সংস্থা হইয়া উঠিয়াছে। তাহার গ্রাহকসংখ্যা বিপুল, অর্থাৎ কোনও বার্তার বাহক হিসাবে তাহা ভারতীয় বাজারের গভীরে প্রবেশ করিতে সক্ষম। অন্য দিকে, তিনটি সমাজমাধ্যম মঞ্চের দৌলতে ফেসবুক ভারতীয় গ্রাহক সংক্রান্ত তথ্যের বাজারে অবিসংবাদী সম্রাট। দুইয়ের যুগলবন্দি হইলে ক্রেতাকে ‘মাইক্রোটার্গেট’ করা বা দেশের প্রতিটি আনাচকানাচকে এক ছাতার নীচে বাঁধিয়া ফেলা সম্ভব হইবে। ভারতীয় বাজারের পক্ষে তাহা সুসংবাদ নহে। প্রথমত, দুই অতিবৃহৎ সংস্থা মিলিত ভাবে বাজারে প্রবেশ করিলে নিছক আর্থিক পেশিশক্তির জোরেই একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করিয়া ফেলিতে পারে। বস্তুত, সম্ভাবনাটি এমনই প্রকট যে এই ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তটিকে কম্পিটিশন কমিশনের ছাড়পত্র লইতে হইবে বলিয়া সংবাদে প্রকাশ। কিন্তু, তাহারও অধিক তাৎপর্যপূর্ণ তথ্যের একচেটিয়া অধিকার। তথ্যই ‘একুশ শতকের পেট্রোলিয়ম’, এবং তাহার খনিটি যে সংস্থার হাতে, তাহা যদি সুপার-অ্যাপ অর্থাৎ একই অ্যাপে যাবতীয় পরিষেবা প্রদায়ী হইয়া উঠে, তবে বাজারের উপর তাহার প্রভাব অপরিসীম। একচেটিয়া বাজার ক্ষতিকারক। সমাজের পক্ষে, অর্থনীতির পক্ষেও। সাবধান হওয়া বিধেয়।
ফেসবুক এবং রিলায়্যান্স জিয়ো, ঘটনাচক্রে দুইটি সংস্থার বিরুদ্ধেই অতীতে বাজারের অবাধ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের, আর্থিক আধিপত্যের জোরে প্রতিযোগিতার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ উঠিয়াছে। ব্যবসায়িক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিপর্যস্ত করিবার অভিযোগও অশ্রুত নহে। পাশাপাশি, রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক প্রয়োজনে নৈতিকতার স্বাভাবিক অনুশাসনকে তাহারা সর্বদা প্রাপ্য সম্মান করিয়াছে কি না, সেই বিষয়েও সংশয় সম্ভবত অহেতুক নহে। বস্তুত, যে ভঙ্গিতে রিলায়্যান্স জিয়ো মাত্র কয়েক বৎসরে টেলিকম বাজারটির সিংহভাগ দখল করিল এবং যে ভঙ্গিতে টেলিকমের লাইসেন্স বাতিল হইতে বকেয়া কর সংক্রান্ত মামলার ‘ঐতিহাসিক’ রায় ইত্যাদি ঘটিল, তাহা দেখিলে অ্যালিস হয়তো বলিত: কিউরিয়সার অ্যান্ড কিউরিয়সার! অন্য দিকে, ফেসবুকের ইতিহাসও, কাহারও অজানা নাই, বর্ণময়। এ হেন সংস্থার হাতে যদি দেশের ক্রেতাসাধারণের সম্পর্কে বিপুল তথ্যভান্ডার থাকে, তাহার বাণিজ্যিক তো বটেই, রাজনৈতিক অপব্যবহারের আশঙ্কা উড়াইয়া দিবার কোনও উপায় নাই। বিশেষত, রাষ্ট্র যখন ক্রমেই ‘বিগ ব্রাদার’ হইয়া উঠিবার সাধনায় রত। ফেসবুক-জিয়ো’র বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তটিকে শুধু বাণিজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেখিলে ভুল হইবে। সর্বাধিপত্যকামী রাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রকল্পের প্রেক্ষাপটটি ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রের স্বার্থেও।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গি দমনে যদি এমনটা হত
আরও পড়ুন: পরিষেবায় গলদ থাকলে দায় সরকারের ঘাড়ে পড়বেই
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy