Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
David Warner

বরং শুরু থেকে আবার শুরু করো, জীবন ঠিক ফিরিয়ে দেবে

দল থেকে বাদ পড়লে খারাপ লাগে। কিন্তু আমরা তো সবসময় উৎকর্ষকে তাড়া করি। উই আর এন্টারটেইনার্স। উই প্লে টু পুশ ফর এক্সেলেন্স।’’

 যে ছবিতে থমকে আছে সময়। যে ছবির বজ্রনির্ঘোষ থেকে ফুটে ফুটে বেরোচ্ছে ফিরে আসার ঘোষণা।

যে ছবিতে থমকে আছে সময়। যে ছবির বজ্রনির্ঘোষ থেকে ফুটে ফুটে বেরোচ্ছে ফিরে আসার ঘোষণা। ফাইল ছবি।

অনিন্দ্য জানা
অনিন্দ্য জানা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১ ১০:৩৭
Share: Save:

টুইটটা কি ঠিক তখনই করেছিলেন ক্যানডিস ওয়ার্নার? ঠিকই। তখনই। রবিবার রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে।

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার ড্রেসিংরুমের বাইরের ব্যালকনিতে ঘুরছিল টেলিভিশন ক্যামেরার প্রখর শক্তিধর লেন্স। ঘুরতে ঘুরতে সেই চোখ গিয়ে আটকে গেল খর্বকায় এক চেহারার উপর। যেখানে থমকে রয়েছে অনেকখানি সময়। যার সঙ্গে মাখামাখি রক্ত, স্বেদ, অপরাধ, অপমান আর অনতি-অতীতের অনাদর এবং তৎপরবর্তী প্রতিজ্ঞার ইতিহাস।

মুষ্টিবদ্ধ দু’হাত। শক্তিশালী বাহুর পেশি ভেদ করে ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে শিরাগুলো। ফুলে ফুলে উঠছে ক্রমাগত। সতীর্থদের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে সেই চেহারাটা প্রাণপণ চিৎকার করছে। হাঁ-করা মুখের ভিতর সারি সারি ঝকঝকে দাঁতের সারি। ফুলে ফুলে উঠছে গলার শিরা। এতটাই যে, চাইলে গুনে ফেলা যায়। খুলে গিয়েছে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। ভলকে ভলকে বেরিয়ে আসছে লাভাস্রোত। অন্তঃসলিলা অ্যাড্রিনালিনের ক্ষরণ টান মেরে খুলে ফেলতে চাইছে ভালবাসার আগল। ছিঁড়ে ফেলতে চাইছে অদৃশ্য সব বন্ধন। ঠিকরে বেরোচ্ছে ফেলে-আসা রক্ত, স্বেদ, অপরাধ, অপমান, অনাদর আর সব হিসেব চুকিয়ে প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস।

রাত ১১টা ৪৬ মিনিট। ঠিক তখনই টুইটটা করেছিলেন ক্যানডিস ওয়ার্নার— ‘আউট অব ফর্ম, টু ওল্ড অ্যান্ড স্লো! কনগ্র্যাচুলেশন্‌স’। সঙ্গে আগ্রাসী একটা ছবি। যে ছবি এই লেখার সঙ্গে ব্যবহার করা হল। যে ছবিতে থমকে আছে সময়। যে ছবি জবাব দিচ্ছে ক্রিকেটদুনিয়াকে। জবাব দিচ্ছে কলঙ্ক থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। জবাব দিচ্ছে অপমানের। যে ছবির বজ্রনির্ঘোষ থেকে ফুটে ফুটে বেরোচ্ছে ফিরে আসার ঘোষণা।

টুইটটা করেছিলেন ক্যানডিস ওয়ার্নার— ‘আউট অব ফর্ম, টু ওল্ড অ্যান্ড স্লো! কনগ্র্যাচুলেশন্‌স’।

টুইটটা করেছিলেন ক্যানডিস ওয়ার্নার— ‘আউট অব ফর্ম, টু ওল্ড অ্যান্ড স্লো! কনগ্র্যাচুলেশন্‌স’।

বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটারের ট্রফিটা নিয়ে যে চেহারাটা ট্রেডমার্ক ভাঙা গলায় বলবে, ‘‘আই অলওয়েজ ফেল্ট ভেরি ওয়েল। ফর মি, ইট ওয়াজ গোয়িং ব্যাক টু দ্য বেসিক্‌স।’’ ব্যর্থতার নিদান একটাই— গো ব্যাক টু দ্য বেসিক্‌স! শুরুতে ফিরে যাও। শুরু থেকে আবার শুরু করো।

রবিবার রাতে টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালের পর কিউয়ি অধিনায়ক উইলিয়ামসনের জন্য মনটা একটু দ্রব হল। একটু তপতপে। মনে হল, সবসময় কেন তীরে এসে তাঁরই তরী ডোবে! ভদ্রলোকের খেলার জগতে, যা আসলে আর ভদ্রলোকের নেই, তিনি এক আপাদমস্তক ভদ্রলোক। ‘কাঁধেতে ঝোলানো ব্যাগ’ না থাকলেও ‘কবি-কবি চেহারা’। বাদামি দাড়ি, আয়ত চোখ আর মিতবাক সাহেবকে ভারী ভাল লাগে। মনে হয়, এই মারকাট পেশাদার এবং কোনও কিছু করতেই পিছপা না-হওয়া দুনিয়ায় তাঁর মধ্যে কোথাও এক ক্রিকেট-দার্শনিক বসবাস করে।

সত্যি বলতে কি, মনে হয়েছিল, এই ফাইনালটা উইলিয়ামসন জিতলে বেশ হত। মনে হয়েছিল, কেনই বা সঙ্কটকালে সর্বদা তাঁরই রথচক্র গ্রাস করবে মেদিনী! কেনই বা তিনি ক্রিকেট-মহাভারতে চিরকালীন সূতপুত্র হয়েই ‘নিস্ফলের, হতাশের দলে’ থেকে যাবেন!

তার পর ঝপ করে মনে পড়ল ক্রিকেট-সূতপুত্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের রণভূমিতে গাণ্ডীব-হাতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন স্বয়ং ক্রিকেট-অর্জুন। যিনি দেখছিলেন পাখির চোখ— প্রত্যাবর্তন।

যিনি পরে বলবেন, ‘‘যে দলটাকে আপনি বছরের পর বছর ভালবেসেছেন, যখন কোনও দোষ ছাড়া সেই দল থেকেই আপনাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তখন খুব খারাপ লাগে। যখন কোনও কারণ না দেখিয়েই আপনার অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়, খারাপ লাগে। কিন্তু আমরা তো সবসময় উৎকর্ষকে তাড়া করি। উই আর এন্টারটেইনার্স। উই প্লে টু পুশ ফর এক্সেলেন্স।’’

‘‘উই আর এন্টারটেইনার্স। উই প্লে টু পুশ ফর এক্সেলেন্স।’’

‘‘উই আর এন্টারটেইনার্স। উই প্লে টু পুশ ফর এক্সেলেন্স।’’

তাঁর আইপিএল দলের কর্তা, প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় উইকেটরক্ষক ব্র্যাড হাডিন এক অদ্ভুত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, ‘‘ওকে কোনও ক্রিকেটীয় কারণে বাদ দেওয়া হয়নি। ও বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ড সফরে যায়নি। ম্যাচ প্র্যাকটিসের মধ্যে ছিল না।’’

যার জবাবে এখন সেই বাতিল ক্রিকেটার বলছেন, ‘‘আমাকে আইপিএলের দল থেকে বাদ দেওয়ার কারণ যা-ই হোক, এটুকু বলতে পারি যে, হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেছিলাম। একদিনও প্র্যাকটিসে কামাই দিইনি। নেটেও দুর্ধর্ষ ব্যাট করছিলাম। জানতাম, ভাল সময় আসবে। বাদ পড়ে খারাপ লাগলেও জানতাম, আর একটা সুযোগ আসবে। আসবেই।’’

ঠিকই। আরও একবার শিখলাম। শিখলাম, শুধু নিরলস তাড়া করে যেতে হবে উৎকর্ষকে। শিখলাম, আপনি যদি মাথা নিচু করে নিজের কাজটা করে যান, জীবন আপনাকে সুযোগ দেয়। যদি শুরু থেকে শুরু করেন, জীবন আপনাকে ফিরিয়ে দেয় দরাজ শংসা। আপনি যখন দুনিয়া ভুলে মগ্ন থাকেন অনুশীলন এবং অধ্যবসায়ে, ঘরের কোণে বেড়ালের মতো অপেক্ষা করে সাফল্য। তার পর প্রত্যাবর্তনের ‘ইট মোমেন্টে’ আপনার গায়ে-হাতে-পায়ে লুটোপুটি খায় অনুগতের মতো।

যেমন সে রাতে খাচ্ছিল ডেভিড ওয়ার্নারের সারা শরীর জুড়ে। ধারাস্নানের মতো অতুল সাফল্য নামছিল তাঁর গা-মাথা-হাত বেয়ে।

বয়স পঁয়ত্রিশ। তিন সন্তানের জনক। আক্রমণাত্মক ব্যাটার। সুইচ হিটের জন্য বিখ্যাত। ছোটবেলায় একবার বাঁ-হাতি থেকে ডানহাতে ব্যাট করতে শুরু করিয়েছিলেন কোচ। কিন্তু ঘরের কোচ, মা বলেন, তাঁর ছেলে ডান নয়, বাঁ-হাতেই ব্যাট করবে। সেই শুরু। বাঁ-হাতি বালককে আর থামানো যায়নি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ১৩২ বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ক্রিকেটার, যিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে না খেলেই জাতীয় দলে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বিশ্বক্রিকেটের অন্যান্য বাঁ-হাতির মতো দেখনদারি খেলা নয়। কিন্তু ওয়ার্নার হলেন অস্ট্রেলিয়া টিমে পকেট সাইজ ডিনামাইট। এমনই বিস্ফোরক, খুনে এবং নৃশংস তাঁর ব্যাট চালানোর ভঙ্গি (মনে করুন পাকিস্তানের সঙ্গে সেমি ফাইনাল। দুটো ড্রপ-খাওয়া ‘নো’ বলকেও পিচের বাইরে তাড়া করে গিয়ে ছয় মেরেছিলেন! রেয়াত করেননি। গৌতম গম্ভীর স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের মৃত্যু ইত্যাদি বলে বখেড়া খাড়া করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর সালিশি সভায় রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে সাক্ষী মানতে গিয়েছিলেন। পাত্তা পাননি। কারণ, এই কঠিন এবং নির্মম পেশাদার দুনিয়ায় স্পিরিট-ফিরিট সব উবে গিয়েছে। পড়ে আছে শুধু জয় আর পরাজয়। গরিমা আর গ্লানি)।

আইপিএলে প্রথম বিদেশি ক্রিকেটার, যিনি ৫,০০০ রান করেছেন। গদার মতো ব্যাট ঘোরান। দুই উইকেটের মধ্যে রান নিতে দৌড়োন হরিণ-গতিতে। দুর্ধর্ষ ফিল্ডার। তাঁর হাতের তালুতে বল আটকে থাকে আঠাকাঠির মতো। ক্যাচ-ট্যাচ বিশেষ ফস্কান না।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গ্রেটদের নিরিখে উচ্চতা কম। কিন্তু সেই ‘লো সেন্টার অব গ্র্যাভিটি’-র কারণেই বলের লাইনের তলায় গিয়ে তুলে-তুলে মারতে পারেন। যেমন মারছিলেন সেই রাতে। মনে হচ্ছিল, ধনুকের টানটান ছিলা থেকে ছিটকে বেরোচ্ছে একেকটা শট। প্রতিটা শটে গ্যালারির নির্ভুল ঠিকানা লেখা। সেই শটের পিছুপিছু অন্তরীক্ষে উড়ে যাচ্ছিল গ্লানি আর অপমানের ইতিহাস।

ক্যানডিস ওয়ার্নারের কি তখন মনে পড়ছিল তাঁর গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা? স্বামী বলবিকৃতিতে অভিযুক্ত। বিদেশের মাটিতে সাংবাদিক বৈঠকে চোখের জল ফেলতে ফেলতে দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। সব রকমের ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর কাঁটছাঁট করে অসময়ে দেশে ফিরে আসার সময় গণ-অসম্মান এড়াতে চেয়ে বিমানবন্দরের পিছনের দরজা দিয়ে বেরোতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে স্টিভ স্মিথের পাশাপাশিই ক্যানডিসের স্বামীও ‘জাতীয় ভিলেন’। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ওয়ার্নার পরিবারকে অম্লানবদনে জনতার দরজা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। সম্ভবত তাঁরাও চেয়েছিলেন পুরো ওয়ার্নার পরিবার এসে পড়ুক ক্রুদ্ধ গণরোষের মুখোমুখি।

পরে ক্যানডিস বলেছিলেন, ‘‘আমরা বুঝতে পারিনি বাইরে এত ক্যামেরা, এত ফোটোগ্রাফার থাকবে! বেরোতেই ঝপাঝপ ফ্ল্যাশ। হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের দুটো মেয়ে ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছিল। ওই দিনটা কোনও দিন ভুলব না।’’

ক্যানডিস বলেছিলেন, ‘‘আমরা বুঝতে পারিনি বাইরে এত ক্যামেরা, এত ফোটোগ্রাফার থাকবে! ওই দিনটা কোনও দিন ভুলব না।’’

ক্যানডিস বলেছিলেন, ‘‘আমরা বুঝতে পারিনি বাইরে এত ক্যামেরা, এত ফোটোগ্রাফার থাকবে! ওই দিনটা কোনও দিন ভুলব না।’’

আরও একটা দিন ভুলতে পারবেন না প্রাক্তন লৌহমানবী (ক্যানডিস সত্যিই ‘আয়রনওম্যান’ ছিলেন এককালে। নিয়তির কী পরিহাস!)। বলবিকৃতি এবং তজ্জনিত জনরোষ ও লজ্জার যে অভিঘাত তাঁদের পরিবারের উপর আছড়ে পড়েছিল, তার চোটে মিসক্যারেজ হয়ে গিয়েছিল ক্যানডিসের। শৌচাগারে বহমান রক্তের ধারা দেখে ডেভিডকে ডেকে এনে বলেছিলেন, ‘‘বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেল!’’ তার পর? ‘‘তার পর দু’জনে দু’জনকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদেছিলাম।’’

রক্ত, স্বেদ, অপরাধ, অপমান আর অনাদরের ইতিহাস।

রবিবার রাতে বায়োস্কোপের স্লাইডের মতো ঘুরে ঘুরে আসছিল মুহূর্তগুলো। তার সঙ্গে ছায়ার মতো আটকে যাচ্ছিল মাসদুয়েক আগের আরও কিছু ফ্রিজ ফ্রেম। আইপিএলের ম্যাচে গ্যালারিতে বসে ফ্র্যাঞ্চাইজির পতাকা নাড়াচ্ছে একটা চেহারা। কোভিডে টুর্নামেন্ট মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে ব্যাটে রান নেই (আট ম্যাচে মাত্র ১৩৫)। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পর দু’ম্যাচে শূন্য এবং ২ রান। ফ্র্যাঞ্চাইজি ধুঁকছে। মরসুমের মাঝপথে কেড়ে নেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্ব। প্রথম একাদশ থেকেও বাদ। ডাগ আউটে বসতে দেওয়া হয়নি। গ্যালারিতে বসে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পতাকা নাড়তে নাড়তে ক্লান্ত এবং ধ্বস্ত ওয়ার্নার কয়েকটা ম্যাচে হোটেল থেকে মাঠেও আসেননি।

সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পতাকা নাড়তে নাড়তে ক্লান্ত এবং ধ্বস্ত ওয়ার্নার।

সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পতাকা নাড়তে নাড়তে ক্লান্ত এবং ধ্বস্ত ওয়ার্নার।

বলা হচ্ছে, বুড়ো এবং বাতিল ঘোড়া। শ্লথ হয়ে গিয়েছে। ফর্ম হারিয়ে গিয়েছে পাকাপাকি ভাবে। সকলে মনে করতে শুরু করেছেন, সূর্যোদয়ের দিন শেষ। ওয়ার্নারের ক্রিকেট-সূর্য পশ্চিম দিগন্তে ঢলে পড়তে শুরু করেছে। আর তিনি নিজে মনে মনে ভাবছেন (বলেও ফেলছেন কোথাও কোথাও), অনেক হয়েছে! এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে আর নয়।

এ-ও বোধহয় এক আশ্চর্য পোয়েটিক জাস্টিসই যে, রবি-রাতে যখন অনুচ্চ সেই চেহারা থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে সাফল্য, বিরামহীন ঝরে পড়ছে প্রশংসা, তখন মাঠের এক পাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক উইলিয়ামসন। ওয়ার্নারকে সরিয়ে যাঁকে আনা হয়েছিল হায়দরাবাদের অধিনায়কত্বে। এটাও হওয়ার ছিল!

জুলজুল করে ক্রিকেট-দার্শনিক দেখলেন, টি২০ বিশ্বকাপে সাত ম্যাচে ২৮৯ রান (গড় ৪৮ প্লাস, ফাইনালে-সহ তিন ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি) করে টুর্নামেন্টের সেরা হয়ে চলে যাচ্ছেন কিছুদিন আগে মলিন মুখে গ্যালারিতে বসে-থাকা তাঁর আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্রাত্য সতীর্থ। যাঁর সম্পর্কে কয়েক মাস আগে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘‘ডাভিকে নিয়ে চিন্তা কোরো না। ও বিশ্বকাপের সেরা প্লেয়ার হবে।’’ আর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম বার টি২০ বিশ্বকাপটা জেতার পর বললেন, ‘‘ভালুককে খোঁচালে এটাই হয়! ও অলটাইম গ্রেট ব্যাটারদের অন্যতম। ও একজন যোদ্ধা। ডেভিড ওয়ার্নারের সেরাটা কখন পাওয়া যায় জানেন? যখন দেওয়ালে ওর পিঠটা ঠেকে যায়!’’

অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ  প্রথম বার টি২০ বিশ্বকাপটা জেতার পর বললেন, ‘‘ভালুককে খোঁচালে এটাই হয়!’’

অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ প্রথম বার টি২০ বিশ্বকাপটা জেতার পর বললেন, ‘‘ভালুককে খোঁচালে এটাই হয়!’’

ঝলমলে রবি-রাতে অস্ট্রেলীয় ড্রেসিংরুমের বাইরের ব্যালকনিতে ঘুরতে ঘুরতে টেলিভিশন ক্যামেরার শক্তিধর লেন্স আটকে গেল এক খর্বাকৃতি চেহারায়। স্টিভ স্মিথ আর অ্যারন ফিঞ্চের আলিঙ্গন ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে চেহারাটা। মুখেচোখে বন্য উন্মাদনা। গলার শির ফুলে ফুলে উঠছে। কণ্ঠ বিদীর্ণ করে বেরিয়ে আসছে ভুবনজয়ের নির্ঘোষ।

ডেভিড ওয়ার্নারকে দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, জীবনের মতোই ক্রিকেটও এক মহাসমুদ্র। যা নেয়, তা ফিরিয়েও দেয়। ভাল হোক বা খারাপ। মনে হচ্ছিল, ব্যর্থতার নিদান একটাই— বরং শুরুতে ফিরে যাও। শুরু থেকে আবার শুরু করো। গো ব্যাক টু দ্য বেসিক্‌স! তোমার মার নেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy