গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দাড়ি রাখছেন নাকি?
তিনি হাসলেন। তার পর কয়েক দিনের বিজবিজে দাড়ি-সহ খরখরে গণ্ডদেশে হাত বুলিয়ে মৃদু হেসে বললেন, ‘‘না-না। এটা একেবারেই আলসেমি। জাস্ট প্লেন লেজ়িনেস।’’
কত বছর আগেকার কথা! সালটাও ভুলে গিয়েছি। সম্ভবত এক দিনের সফরে কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। বাইপাসের ধারের একটা পুঁচকে এবং একেবারেই অনভিজাত হোটেলে প্রদেশ কংগ্রেসের ঝটিতি-ডাকা সাংবাদিক বৈঠক। সে দিন তাঁকে খানিকটা অপরিণতই লেগেছিল। খানিক ছটফটে। খানিক উচাটন। কথাবার্তা খানিক চিত্রনাট্য-নির্ভর। দেখে মনে হয়েছিল, অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড। অনভ্যস্ত ভূমিকায় নেমে খানিকটা যেন খেই হারিয়ে ফেলছেন।
কিন্তু আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক বৈঠকটা হয়ে যাওয়ার পরেই তিনি আবার সহজ, গালে টোল-ফেলা হাসির এক যুবক। যিনি দাড়ি রাখছেন কি না, এই চপল প্রশ্ন শুনেও সৎ এবং আন্তরিক জবাব দিলেন। হাসিমুখে হাত মিলিয়ে এগিয়ে গেলেন পরের জনের দিকে। কিন্তু কী একটা মনে পড়ে যাওয়ায় চকিতে থেমে এক-পা পিছিয়ে এসে আবার হাত বাড়ালেন— ‘‘ভিজ়িটিং কার্ডটা?’’
সেই এক বারই তাঁকে অত কাছ থেকে দেখা। সে দিন তাঁর আর আমার মধ্যে কেবল একটা সুতলি দড়ির ব্যবধান ছিল। বাকিটুকু তাঁর ছুটকোছাটকা নির্বাচনী সভা-সমাবেশ কভার করার যৎসামান্য অভিজ্ঞতাপ্রসূত পর্যবেক্ষণ। যা মঞ্চ থেকে অনেক দূরে। নিরাপত্তার ‘ডি জ়োন’-এর আবডালে। খুব ইচ্ছে ছিল তাঁর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় দিন দুয়েক হাঁটার। হয়ে ওঠেনি। কিন্তু দূর থেকেও মনে হয়েছিল, এই যাত্রাটা তাঁকে পাল্টে দেবে। অবধারিত।
সোমবার দিবা দ্বিপ্রহরে রাহুল গান্ধী যখন ১০ নম্বর জনপথ থেকে নাতিদীর্ঘ কনভয়ে লোকসভার পথে রওনা দিলেন, মনে হচ্ছিল, কী অসম্ভব নাটকীয় প্রত্যাবর্তন!
সাড়ে চার মাস আগে যে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল, সেটাও কম নাটকীয় ছিল না। কিন্তু কে না জানে, প্রত্যাবর্তনের কাহিনি সব সময়েই বেশি চিত্তাকর্ষক! আর ইদানীং তাঁর কাহিনি তো সেই উপন্যাসের পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার প্রতিটি পৃষ্ঠা তার আগের পৃষ্ঠার চেয়ে বেশি আকর্ষণীয়!
‘মোদী’ পদবি নিয়ে তাঁর আক্রমণ (আক্রান্ত হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে বলে থাকলে অন্য কথা। নইলে কিঞ্চিৎ অবিমৃশ্যকারিতাই হয়েছিল। তবে অমন বে-আগল কথাবার্তা তো আজকাল রাজনীতির মঞ্চে আকছারই শোনা যায়), সে বাবদে গুজরাতের সুরাতের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মানহানির মামলা, সেই মামলায় তাঁর দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং দু’বছরের জেল (ঠিক ন্যূনতম যত দিন কারাবাসের মেয়াদ হলে এক জন সাংসদের পদ খারিজ করে দেওয়া যায়), সেই শাস্তির পরে প্রায় নজিরবিহীন দ্রুততায় লোকসভার স্পিকারের রাহুলের লোকসভার সদস্যপদ খারিজ করে দেওয়া। নাটক নয়তো কী!
তবে তার পরেও কিছু বাকি ছিল। সাংসদ পদ খারিজের অব্যবহিত পরে সদ্যপ্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদকে তাঁর তুঘলক লেনের বাংলো থেকে নোটিস পাঠিয়ে উৎখাত করা হয়েছিল। যে বাংলো প্রায় গত দু’দশক ধরে তাঁর ঠিকানা। পদ হারিয়ে, বাড়ি হারিয়ে রাহুল গিয়ে উঠেছিলেন মা সনিয়ার ১০ নম্বর জনপথের বাড়িতে।
কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপি এই সব কাজগুলোই আরও একটু রয়েসয়ে করতে পারত কি না, সেটা কূট তর্কের বিষয়। হয়তো পারত। হয়তো পারত না। আমাদের দেশের রাজনীতি এখন যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে হাতের পাখির কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে ঝোপের পাখিকেও ঝোপের মধ্যেই ছররা গুলি ছুড়ে মেরে ফেলা দস্তুর। সব কিছুতেই এখন আমাদের মনোযোগের পরিধি টেনেটুনে আড়াই সেকেন্ড। সবেতেই হুড়োতাড়া। তাই ১০ মিনিটের ভিডিয়োর বদলে আমরা কয়েক সেকেন্ডের ‘রিল’ নিয়ে বেশি মোহগ্রস্ত। কারণ, আমাদের এখনই চাই! এক্ষুনি! কল খুললে জলের মতো। সুইচ টিপলে আলো-পাখার মতো। স্লট মেশিনে মুদ্রা ফেললে টকাস করে বেরিয়ে-আসা সফ্ট ড্রিংকসের ক্যানের মতো। ফলে রাহুলকে যখন বেকায়দায় পাওয়াই গিয়েছে, এখনই টিপে মেরে ফেলতে হবে! বড্ড ফটরফটর করছে। এই মওকায় গলা টিপে দাও! কিন্তু একটু ধৈর্য ধরলে বোধহয় এমন নাকঘষাটা খেতে হত না।
আদালতের শাস্তির পরেই সাংসদ পদ খারিজ করে, বাংলো কেড়ে নিয়ে এবং তার সাড়ে চার মাসের তফাতে আদালতের নির্দেশেই রাহুলের সাংসদ পদ ফিরিয়ে দিয়ে বিজেপি কি নিজেরাই নিজেদের একটু পিছনের পায়ে ঠেলে দিল? মুখে নেতারা বলছেন বটে, আদালত শাস্তি দিয়েছিল। আদালতই শাস্তি রদ করেছে। এতে আর বিজেপি কোথায়? যেন বিজেপি সেই উদাসীন আদার ব্যাপারী, যার জাহাজের খোঁজ রাখার ইচ্ছেও নেই। কিন্তু যে রাহুল লোকসভায় ফিরে এলেন, তাঁকে তো সত্যিই ২৪ নম্বর আকবর রোডে কংগ্রেস অফিসে রসখ্যাপাদের বয়ে-আনা ফোটোশপ করা পোস্টারের ‘বাহুবলী’র মতো লাগছে।
ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে বোঝানোর জন্য ইংরেজিতে একটা কথা আছে— হোয়েন শিট হিট্স দ্য ফ্যান। অর্থাৎ, ওরে সামাল-সামাল! বিষ্ঠা গিয়ে সিলিং ফ্যানে লেগেছে! অতঃপর ঘূর্ণায়মান সিলিং ফ্যানের চক্র সারা ঘরের দেওয়ালে সেই পূতিগন্ধ ছড়িয়ে দেবে। সব্বোনাশের মাথায় বাড়ি! রাহুলকে নিয়ে গত সাড়ে চার মাসের অধ্যায়ে বিজেপি কি সেই ঘরের একেবারে মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে পড়ল? কে জানে!
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে কর্নাটকের একটি জনসভায় খুব নিরীহ ভাবে রাহুল কয়েক জন ঋণখেলাপি শিল্পপতির প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, ‘‘সব চোরেদের পদবি মোদী হয় কেন?’’ তখন রাফাল বিমান কেনা নিয়ে তাঁর এবং কংগ্রেসের ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ প্রচার চৌদুনে উঠেছে। নিয়ম করে প্রতিটি নির্বাচনী সভায় রাহুল সে কথা বলছেন। তখন তিনি অকারণে প্রগল্ভ, খানিকটা অযথা আক্রমণাত্মকও বটে। সেই ‘জোশ’-এর ফলে, না কি খানিকটা গ্যালারি শো দিতে চেয়ে চোখা-চালাক মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি ওই বাক্যটি বলেছিলেন, তা একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন। কিন্তু তাঁর সেই বক্তব্যের ফল যে এতটা সুদূরপ্রসারী হবে, তা সম্ভবত তিনি নিজেও ভাবতে পারেননি।
রাজনীতির দেবতা কি তখন অলক্ষ্যে একটি হাস্যমোচন করেছিলেন?
রাহুলের মন্তব্যের ভিত্তিতে সুরাতের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ‘পদবি মানহানি’র মামলা দায়ের করেন গুজরাতের এক বিজেপি কর্মী। সেই আদালত রাহুলকে শাস্তি দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে রাহুল আবেদন করেন সুরাতেরই দায়রা আদালতে। সেই আদালতও রাহুলের সাজা বহাল রাখে। যদিও উচ্চতর আদালতে আবেদন করার জন্য তাঁকে ৩০ দিন সময়ও দিয়েছিল দায়রা আদালত। শাস্তি জানার পর রাহুল মহাত্মা গান্ধীকে উদ্ধৃত করেছিলেন— ‘‘আমার ধর্ম সত্য এবং অহিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত। সত্য আমার ঈশ্বর। আর অহিংসা তাকে পাওয়ার মাধ্যম।’’
শাস্তির রায়ের বিরুদ্ধে গুজরাত হাই কোর্টে আবেদন জানান রাহুল। কিন্তু নিম্ন আদালতের সাজা বহাল রাখে হাই কোর্টও। তার পরেই শাস্তির উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে রাহুল দ্বারস্থ হন সুপ্রিম কোর্টের।
বাকিটা, যাকে বলে, ইতিহাস। সোমবার যার আর একটি অধ্যায় শুরু হল— প্রত্যাবর্তন।
রাহুলের এই ‘ফিরে আসা’ যে মহানাটকীয়, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের চেয়েও যেটা আরও বেশি হল— সত্যায়ন। ভিন্ডিকেশন। কিসের সত্যায়ন? সত্যায়ন এটার যে, আসলে এটাই হল ‘প্রসেস’। প্রক্রিয়া। ‘হয়ে ওঠা’র প্রক্রিয়া। সর্বক্ষণ এই ‘হয়ে ওঠা’র সাধনায় ব্যাপৃত থাকতে হয়। এমনকি, ‘হয়ে ওঠা’র পরেও। রাহুল সেই ‘হয়ে ওঠা’র সাধনায় অবিরল একমুখী থেকেছেন। সব ইতিহাসেরই কিছু নির্মাণ থাকে। সোমবার যে প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস রচিত হল ভারতীয় রাজনীতিতে, তার নির্মাণ চলেছিল, আবারও বলছি, কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত রাহুলের পদব্রজে। ওই যাত্রা তাঁর মধ্যে জন্ম দিয়েছিল এক প্রব্রজ্যারও। জন্ম দিয়েছিল ধৈর্য এবং সহনশীলতার। জন্ম দিয়েছিল এক দেশজ প্রজ্ঞার।
সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার পরে আটপৌরে সাদা হাফস্লিভ সুতির শার্ট পরিহিত যে রাহুল লোকসভায় গিয়ে বসলেন, তাঁকে এক স্থিতপ্রজ্ঞ মানুষের মতো দেখাচ্ছিল। যাঁর মধ্যে আর কোনও বালকসুলভ চাপল্য নেই। খোকা-খোকা ভাব নেই। কোনও বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই। তাঁকে ঘিরে বিরোধী শিবিরের নেতাদের হট্টমেলা বসেছে। কিন্তু তিনি সেখানে থেকেও নেই। রাজহাঁসের পাখনা থেকে জল ঝেড়ে ফেলার মতো ওই সমবেত জয়ধ্বনি তিনি তাঁর সাদা পরিধেয় থেকে ঝেড়ে ফেলছেন। অনায়াসে। ধীমান দেখাচ্ছে তাঁকে।
এ কি প্রত্যাবর্তন? না পুনরুত্থান?
রাহুলকে দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, আস্তে আস্তে তিনি বহিরঙ্গেও সর্বজনগ্রাহ্য হয়ে উঠেছেন। সেটা কি তাঁর গালের কাঁচাপাকা দাড়ির জন্য? না কি তাঁর দৃষ্টি থেকে বিচ্ছুরিত জ্যোতির কারণে? লোকসভায় তিনি বসে আছেন। স্থির দৃষ্টি। অন্যমনে ডান হাতের আঙুলগুলো চিবুক ছুঁয়ে আছে। মনে হচ্ছে, তিনি তাকিয়ে রয়েছেন অনেক দূরে কোথাও। দৃষ্টিটা বদলে গিয়েছে।
তিন-চার বছর আগেও যখন কথা বলতেন, তড়বড় করতেন। সব সময় একটা উসখুস ভাব। ধৈর্যহীনতা। সাক্ষাৎকার দিতে দিতে কখনও আঙুল মটকাচ্ছেন, কখনও দু’পা অস্থির ভাবে নাচাচ্ছেন। ঝগড়ুটে বাচ্চারা যেমন করে। ঘাড়টা একটু তেরছা। চোখের দৃষ্টিতে তাড়াহুড়ো। সাক্ষাৎকার শেষ করে হাত বাড়িয়ে খপ করে সাংবাদিকের সঙ্গে করমর্দন করছেন। তার পর ঝপ করে হাতটা ছেড়ে বিনা ভূমিকায় উঠে যাচ্ছেন মঞ্চে। যন্ত্রের মতো বক্তৃতা করছেন। কথা বলতে বলতে কুর্তার হাতা গুটিয়ে আস্ফালন করছেন। ভাষণ শেষ করে নেমে আসছেন। পুতুলের মতো জনতার দিকে হাত নেড়ে হেলিকপ্টারে উঠে ধাঁ হয়ে যাচ্ছেন পরের সভার দিকে।
লোকসভায় নিজের আসন ছেড়ে উঠে গিয়ে সটান নরেন্দ্র মোদীকে জড়িয়ে ধরছেন। ফিরে গিয়ে চোখ মেরে সতীর্থদের বোঝাচ্ছেন— কেমন দিলাম! ভোটে হেরে যাওয়ার পরেও লম্বা গ্লাসে টুটি-ফ্রুটি আইসক্রিম খেতে খেতে সঙ্কেত দিচ্ছেন— আমি দিব্যি আছি। আমার বর্ম অটুটই আছে। কোথাও কোনও রক্তপাত হয়নি।
কেমন বালখিল্যসুলভ লাগত। মনে হত, সুতো ছেড়েছেন আকাশে। কিন্তু সময়মতো লাটাইটা গুটিয়ে আনতে পারছেন না। ফলে তাঁর ঘুড়ি দমকা বাতাসে লাট খাচ্ছে। তার পরে একটা সময়ে ভোকাট্টা হয়ে যাচ্ছে।
সেই রাহুলের একটা অনস্বীকার্য রূপান্তর হয়েছে। যাকে সাধু ইংরেজিতে বলে ‘মেটামরফসিস’। এখন তিনি পরিপার্শ্বকে অন্য রকম ভাবে দেখছেন। নজর বদলে গিয়েছে। চোখে ধরা দিচ্ছে অধীত অভিজ্ঞতা। আগে তাঁকে অভিজাত মনে হত। দূরের মনে হত। মনে হত, দেহের কোথাও কেটে গেলে বুঝি নীল রক্ত বেরোবে। এখন মনে হয়, নাহ্, উনি তো আমাদেরই মতো। কেটেছড়ে গেলে যে রক্ত বেরোবে, তা আমাদের মতোই লাল রঙের। মনে হয়, গোছানো রাজপুত্রের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন এক অগোছালো সৌন্দর্যের পুরুষ।
রাহুল গান্ধী এখন এক জন খুব ভাল দেখতে সাধারণ মানুষ।
তবে সেটা না-হওয়ারও কারণ নেই। ভিতর থেকে ডাক এলে তেমনই হয়। অন্তরাত্মার ডাক না-এলে কি কেউ সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার হাঁটতে পারে? অন্তরে কিছু একটা জাগ্রত না হলে বহিরঙ্গে কি কারও বদল আসে? সেই অন্বেষণ, সেই উন্মেষ এলে যে পরিবর্তন আসে, সেটা বোধহয় পরিবর্তনও নয়। উত্থান।
এই পুনরুত্থিত রাহুলকে কি আটকে রাখা যাবে? যাবে। এবং এই রাহুলকে সম্ভবত আটকাতে পারবেন একমাত্র রাহুল গান্ধীই। দশচক্রে ভারতীয় রাজনীতিতে যে উড়ান তিনি নিয়েছেন, তার গতিরোধ করতে পারেন একমাত্র তিনি নিজে। এখান থেকে একমাত্র রাজনৈতিক ইচ্ছামৃত্যু হতে পারে তাঁর। যে ইচ্ছামৃত্যুর বর কেউ তাঁকে দেয়নি। তিনিই সেটি অর্জন করেছেন।
তবে আড়াআড়ি বিভক্ত এই দেশে অনেকে (বেশির ভাগই ছদ্মবেশী ‘ভক্ত’) এই অবস্থাতেও বলছেন, এটা আসলে রাহুলকে একটা শিক্ষা দেওয়া! যে বাবু, শিখে নাও, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে টক্কর নিতে গেলে কী হতে পারে (যেমন বিজেপির সাংসদ ভরা লোকসভায় বলেছেন, ‘‘চুপ করুন! নইলে বাড়িতে ইডি চলে যেতে পারে’’)! তাঁরা বলছেন (একটু নিমপাতা গেলার মতো মুখ করেই বলছেন), এর ফলে কংগ্রেসের সাময়িক লাভ হতে পারে। রাজনীতিক হিসেবে রাহুলের উচ্চতা একটু বেড়ে থাকতে পারে। বিজেপিও একটু ব্যাকফুটে গিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু লোকসভা ভোটের সময় মানুষের এগুলো মনে থাকবে না। এর ফলে বিজেপির দীর্ঘমেয়াদি কোনও ক্ষতি হবে না। অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন সব ভাসিয়ে লুটেপুটে ভোট নিয়ে যাবে।
শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, একদা এঁরাই রাহুল গান্ধীকে ‘পাপ্পু’ বলতেন। বলতেন, ওর দ্বারা কিচ্ছু হবে না। তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর হ্যাক-ছি করতেন। সমাজের উপরতলার ইকো চেম্বারের এই সব বাসিন্দা এই ক’দিন আগেও রাজনীতিক রাহুলকে পাতে দেওয়ার যোগ্য বা আলোচনার উপযুক্ত বলে মনে করেননি। তাঁর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ নিয়ে মশকরা করেছেন।
তবে কী জানেন? অনভ্যস্ত হাতে গেলাসে বিয়ার ঢাললে উপরে একটা ভুসভুসে ফেনা ওঠে। সমাজের উপরতলাটা হল অনেকটা ওই ফেনার মতো। অভিজ্ঞেরা জানেন, গেলাসের উপরিভাগের ওই গ্যাঁজলাটা আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে যায়। রাহুল যদি লোকসভা ভোটে কংগ্রেসকে ১২০-১৩০টা আসন দিতে পারেন, তা হলেই এই সবজান্তা ফেনাটা অদৃশ্য হয়ে যাবে।
ভবিষ্যতের কথা বলবে ভবিষ্যৎ। আপাতত দুটো কথা লিখেই ফেলি। এক, ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম প্রত্যাবর্তন (না কি পুনরুত্থান) দেখল দেশ! দুই, এ ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy