কোর্টের পাশের চেয়ারে বসে প্রবল যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রচণ্ড গরমে পায়ে বড় বড় ফোস্কা পড়ে গিয়েছে। পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে এক বার অপাঙ্গে তাকালেন তিনি। তার পর নিজের কোর্টে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। আসলে সঙ্কেত পাঠাতে লাগলেন। খানিক অসহিষ্ণু। খানিক অধৈর্য। দু’চোখে তীব্র সূচিমুখ দৃষ্টি (ইংরেজ টেনিস-লিখিয়ে একেবারে ঠিকঠাক বর্ণনা দিয়েছিলেন সেই দৃষ্টির— মিনেসিং)। যে দৃষ্টি ফালাফালা করে দিচ্ছিল যন্ত্রণাকাতর প্রতিপক্ষকে। যে দৃষ্টিতে সহানুভূতির লেশমাত্র নেই। উল্টে রয়েছে অঘোষিত নির্ঘোষ— নাকে কান্না অনেক হয়েছে! এ বার এসো হে, ম্যাচটা শেষ করি!
আহত, প্রায় অবসৃত বিপক্ষকে বাগে-পাওয়া পেশাদার তত ক্ষণে নিশ্চিত জয়ের গন্ধ পেয়ে গিয়েছে।
খোঁড়াতে খোঁড়াতে কিছু ক্ষণের মধ্যে অস্ট্রেলীয় ওপেনের ম্যাচটা হেরে গেলেন মার্টিন চিলিচ। গ্রাফাইটের র্যাকেট-সহ আকাশের দিকে দু’হাত তুললেন তিনি। তার পর নেটের সামনে এসে ধ্বস্ত বিপক্ষকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তত ক্ষণে তাঁর মুখে আবার ফিরে এসেছে দেবদূতোপম এবং টেনিসের ব্র্যান্ডদূতসম স্বর্গীয় হাসি। তখন তিনি বিধ্বস্ত প্রতিপক্ষের টুঁটি কামড়ে-ধরা ডোবারম্যান সুলভ পেশাদার এবং জয়ের জন্য উদগ্র আত্মা নন। তখন তিনি আবার শিল্পী।
তিনি যখন এই গ্রহে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা শুরু করেছিলেন তখনও এই পৃথিবীতে আইফোন আসেনি। তখনও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তখনও ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। তখনও ভারতীয় ক্রিকেটদলের প্রবল পরাক্রান্ত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই তখন থেকে এই সে দিন পর্যন্তও টেনিসবিশ্ব শাসন করেছেন তিনি। যিনি নিজেই বিদায়ের চিঠিতে লিখেছেন, ‘২৪টা বছর। মনে হয় ২৪ ঘণ্টার মতো কেটে গেল!’
সত্যিই। ২৪টা বছর কেটে গেল। তবু, তবুও রজার ফেডেরারের অবসর ঘোষণা বিবশ করে। মনে হয়, সত্যি? সত্যিই তো? লন্ডনে ওই ফচকে ‘লেভার কাপ’ ছাড়া আর কোনও দরের টুর্নামেন্টে তাঁকে খেলতে দেখা যাবে না?
রজার ফেডেরারকে এক বারই দেখেছি চর্মচক্ষে। ২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিক্স কভার করতে গিয়ে। খানিকটা কোর্টে। খানিকটা কোর্টের বাইরে। কোর্টে ডাবলসে সোনা জিতেছিলেন ঠিকই। তবে সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ পদক পর্যন্তও সম্ভবত যেতে পারেননি। আর কোর্টের বাইরে স্রেফ ঘটনাচক্রে কয়েক হাত দূরত্বে এসে পড়েছিলেন। একটা কথা তখনই মনে হয়েছিল— লোকটাকে (নাকি, তখনও ‘লোক’ হননি। ‘ছেলেটিকে’ বলাই ঠিক হবে) অসম্ভব সুন্দর দেখতে। টিভিতে যেমন দেখায়, তার চেয়েও সুন্দর।
পরবর্তী সময়ে অজস্র বার তাঁকে দেখতে দেখতে মনে হয়েছে, রজার ফেডেরার শুধু দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ টেনিস খেলোয়াড় নন। তিনি সবচেয়ে সুন্দর। সবচেয়ে নয়নাভিরাম। যিনি পৃথিবীর বিভিন্ন সেন্টার কোর্টের বাতাসে ভেসে বেড়ান। সাঁতার কাটেন। কী পরিমিতিবোধ! কী অসম্ভব গ্রেস! এক ইংরেজ টেনিস ধারাভাষ্যকার লিখেছিলেন, ‘হিজ লেগ্যাসি ইজ হিজ গ্রেস।’ রজার ফেডেরারের ঐতিহ্য তাঁর মার্জিত আচরণ। ঠিকই লিখেছিলেন। খেলছেন, বড় ম্যাচের চাপ সামলাচ্ছেন, শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, রাজাদের সঙ্গে রয়েছেন, রানিদের সঙ্গে রয়েছেন, কোর্টে নড়াচড়া করছেন, গেমের মাঝখানে কোর্টের ধারে চেয়ারে চুপচাপ বসে আছেন, জিতছেন, হারছেন— সব সময় তাঁকে ঘিরে রয়েছে এক পরিমিতিবোধ। পৃথিবীর সমস্ত ভাষায়, সমস্ত দেশে তিনি একই রকমের মার্জিত। ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, আফ্রিকান— সমস্ত। পরিমার্জন আসলে তাঁর শিরা, ধমনী, মজ্জায় মিশে থাকে।
কী লিখলাম? ‘থাকে’? নাহ্, ‘থাকত’। অতীতকাল। আর তো তাঁকে সে ভাবে দেখা যাবে না!
১৪ বছর আগেও মনে হয়েছিল, কী আশ্চর্য মার্জিত উপস্থিতি! এলোমেলো এবং আপাত-অবাধ্য চুলে আঙুল চালিয়ে শাসন করছেন। প্রতি বার একই রকম ভাবে উঠছে তাঁর আঙুলের গুচ্ছ। একই রকম ভাবে কপালের উপর এসে পড়া চুলের গোছা সরিয়ে দিচ্ছেন কানের পাশে। মধ্য-কুড়ির সেই যৌবনে তাঁর চিবুকে তখনও কিছু বেবি ফ্যাটের মিশেল। কিন্তু অবিশ্বাস্য পোক্ত কাঁধ। ট্র্যাকস্যুটের আপারের জিপ খ়ানিকটা খোলা। ভিতরের সাদা টি-শার্টের আবডালে ছিপছিপে বেতের মতো চেহারা। কী একটা সাংবাদিক বৈঠকে এসেছিলেন যেন। খুব সিরিয়াস কিছু নয়। তাঁর বক্তব্য যতটা না মন দিয়ে শুনছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম মানুষটাকে। কথা বলছিলেন। ভরাট, গম্ভীর, নাভিমূল থেকে উঠে-আসা কণ্ঠস্বরে গমগম করছিল বেজিং অলিম্পিক্সের মেন প্রেস সেন্টারের সাংবাদিক সম্মেলনের কক্ষ। কথা বলতে বলতে হাসছিলেন। মনে হচ্ছিল ঝরঝর করে একরাশ মুক্তোই ঝরে পড়ল বুঝি। কিন্তু কখনও নিজের টেনে-দেওয়া লক্ষ্মণরেখার বাইরে যাচ্ছিলেন না। নিজের উপর কী অসম্ভব নিয়ন্ত্রণ!
কয়েক হাত দূরের নিরাভরণ টেবিল-চেয়ারে বসা একলা রজার ফেডেরারকে দেখতে দেখতে সে দিন মনে হয়েছিল, জীবনে একটা মোচড় খুব জরুরি। একটা অভিঘাত। ভিতরে ভিতরে একটা ভাঙচুর।
সেই বিনির্মাণ কি সেই ২০ বছরের তরুণের মধ্যে তখনই হয়ে গিয়েছিল, যখন ২০০২ সালে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে টরন্টোর হোটেলের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে রাস্তায় গাড়ির ভিড় সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে খালিপায়ে পাগলের মতো দৌড়োচ্ছিল সে?
সেই দৌড় সম্ভবত ছিল সেই লক্ষ্যের দিকে, যা ২০০৩ সালে জীবনের প্রথম উইম্বলডন জিতে নিজের অ্যাকাডেমির কর্তাকে ইমেলে লিখেছিলেন রজার ফেডেরার, ‘এভরিটাইম আই প্লে আ গুড শট অর এভরিটাইম আই উইন আ গুড ম্যাচ, আই থিঙ্ক অফ পিটার। আই অ্যাম শিওর, হি উইল বি লুকিং ডাউন অন মি অ্যান্ড হি উড বি প্রাউড। হি ডিড নট ওয়ান্ট মি টু বি আ ওয়েস্টেড ট্যালেন্ট। আই হোপ দ্যাট হি উড বি প্রাউড।’ যখনই আমি একটা ভাল শট মারি বা ভাল ম্যাচ জিতি, আমার পিটারের কথা মনে পড়ে।
আট বছর বয়সে টেনিস খেলা শুরু। কোচ পিটার কার্টার সেই কিশোরকে দেখে তখনই বলেছিলেন, এ ছেলে একদিন এই গ্রহের এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড় হবে। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক এবং পেশাদার টেনিস সার্কিটে তত সফল-নয় পিটার কোচের চেয়েও অনেক বেশি ছিলেন কিশোর ফেডেরারের ‘মেন্টর’। ২০০২ সালে বিলম্বিত মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে পিটারের সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু রজার ফেডেরারকে আমূল বদলে দেয়। তার আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন কোর্টের মধ্যে অস্থির, বদমেজাজি। পিটারের মৃত্যুর বিপুল তরঙ্গ তাঁর প্রিয় শিষ্যের মধ্যে ধৈর্য এনেছিল। স্থৈর্য এনেছিল। আর এনেছিল পরিমিতিবোধ। কৃতজ্ঞতা (যে কৃতজ্ঞতার বশে প্রতি বছর অস্ট্রেলীয় ওপেন খেলতে গিয়ে পিটারের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতেন রজার ফেডেরার। বিশ্ববিশ্রুত টেনিস সম্রাটের বিশেষ অতিথি হয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা হাজির থাকতেন অস্ট্রেলীয় ওপেনে)। প্রতিটা ভাল শট খেলার পর, প্রতিটা কঠিন ম্যাচ জেতার পিছনে এনে দিয়েছিল সেই দুর্মর আকাঙ্ক্ষা আর উদগ্র বাসনা— পিটার যেন বোঝে যে, আমি মেজাজ হারিয়ে বখে যাইনি! পিটার যেন আকাশ থেকে আমাকে দেখে গর্বিত হয়।
বিবিধ কারণে টেনিস সিঙ্গলস হল পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন স্পোর্টগুলোর অন্যতম। তার শারীরিক কারণ টেকনিক্যাল এবং ফিটনেস সংক্রান্ত দাবি। যা সাফল্যকামী এবং সফল টেনিস খেলোয়াড়কে কোনও ছায়ার তলায় জিরোতে দেয় না, কোনও ভুলচুক করতে দেয় না, কোথাও লুকিয়ে পড়তে দেয় না। আর মানসিক কারণ— অমোঘ একাকিত্ব। আন্দ্রে আগাসি তাঁর আত্মজীবনী ‘ওপেন’-এ লিখেছেন, ‘কোর্টে টেনিস সিঙ্গলস খেলোয়াড় হল পৃথিবীর সবচেয়ে একলা মানুষ।’
ঠিকই। বক্সিং, টেবিল টেনিস বা ব্যাডমিন্টনও ব্যক্তিগত স্পোর্ট। কিন্তু তাতে বিপক্ষের ঘামের গন্ধ পাওয়া যায়। আঁচ পাওয়া যায় তার জিঘাংসার। চোখে চোখ রাখা যায়। কোথাও একটা সেতু রচনা হয়। হয়তো বিরুদ্ধতার সেতু। তবু তো সেতু! কিন্তু দুই টেনিস সিঙ্গলস খেলোয়াড় যখন নিজেদের কোর্টের বেসলাইনে দাঁড়িয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুযুধান থাকেন, তখন তাঁদের মধ্যে যোজন দূরত্ব থাকে। মানসিক তো বটেই। শারীরিকও।
রজার ফেডেরার সেই একাকিত্বকে জয় করেছিলেন।
কারণ, রজার ফেডেরার কখনও একা খেলতেন না। চমৎকার লিখেছিলেন এক ইংরেজ টেনিসলিখিয়ে— ‘ফেডেরারমোন’। ফেডেরার-সম্পৃক্ত হরমোন। তিনি কোর্টে আসামাত্র যার ক্ষরণ শুরু হত।
গেমের পর গেম, সেটের পর সেট দেখতে দেখতে একটা বিভ্রম তৈরি হত। মনে হত, কোর্ট জুড়ে একই সঙ্গে অজস্র রজার ফেডেরার খেলছেন! অবিশ্বাস্য হরিণ-পায়ে কোর্টে বিচরণ করছেন তিনি। এই নেটের কাছে তো ওই বেসলাইনে। এই ডাইনে তো ওই বাঁয়ে। প্রতি মুহূর্তে এক আশ্চর্য এবং নতুন জ্যামিতি আঁকা হয়ে যাচ্ছে। এমনই ঈর্ষণীয় তাঁর কোর্ট মুভমেন্ট! আর ওই এক হাতে ডাউন দ্য লাইন ব্যাকহ্যান্ড। র্যাকেটের ফলো-থ্রু শেষ করার পর দেহের দু’পাশে সমকোণে ছড়ানো দু’হাতের বিস্তার দেখে অ্যালবাট্রসের ডানার কথা মনে পড়ত। আবার কখনও সেই একই অ্যাকশনে প্রতিপক্ষকে ভ্যাবলা বানিয়ে প্রায় নেট চুঁইয়ে-পড়া দুষ্টু ব্যাকহ্যান্ড টপস্পিন। মনে হত, লোকটা কোর্টের যে কোনও প্রান্ত, যে কোনও এলাকা থেকে একই রকম অবলীলাক্রমে বল নেটের ও পারে ফেরত পাঠাতে পারে। শুধু কি বলই ফেরত পাঠায়? নাহ্, সেই ফিরতি বলে লেপ্টে থাকে নিখুঁত শট নির্বাচনের মুন্সিয়ানা, এক আপাদমস্তক লড়ুয়ে ইচ্ছে আর স্পোর্টিং দুনিয়ার রাজা হওয়া সত্ত্বেও সেখানে টিকে থাকার আকুলতা।
সাধে কি সুইৎজারল্যান্ডের বাসেল শহরের সামান্য এক বলবয় থেকে টেনিস দুনিয়ার একচ্ছত্র অধিপতি পদে উত্তরণ!
‘গ্রেটনেস’কে কোন নিক্তিতে মাপা যায়? ট্রফির সংখ্যা? সক্রিয় থাকা বছরের সংখ্যা?
২০টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়। মোট ৩১০ সপ্তাহ র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে। রেকর্ড! ২৩৭ সপ্তাহ ধরে টানা এক নম্বরে। রেকর্ড! এক মাত্র পুরুষ টেনিস খেলোয়াড়, যিনি তিনটি স্ল্যাম পাঁচ বার করে জিতেছেন (অস্ট্রেলীয় ওপেন ছ’বার, ইউএস ওপেন পাঁচ বার, উইম্বলডন আট বার)। রেকর্ড! সবচেয়ে বেশি বার উইম্বলডন জয় (আট বার)। রেকর্ড! সবচেয়ে বেশি বয়স্ক খেলোয়াড় (৩৬ বছর) হিসেবে র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে। রেকর্ড! পর পর ২৪টি ফাইনালে জয়। ২০০৪-২০০৭ কেরিয়ারের পিক ফর্মে ছিলেন। সেই উত্তুঙ্গ চূড়ায় প্রতি বছর র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর হয়েছেন। সেই চার বছরে খেলা মোট ১৬টি গ্র্যান্ড স্লামের মধ্যে ১১টি জিতেছেন। এমন ভাবে টেনিস সাম্রাজ্য বিস্তার আর কোনও খেলোয়াড় করতে পারেননি। এখনও পর্যন্ত। রেকর্ড!
রজার ফেডেরার পৃথিবীতে শান্তিস্থাপন বা ক্ষুধা নিরসনের জন্য কোনও গণ আন্দোলন করেননি। যুদ্ধ থামাতে যাননি। কিন্তু তিনি যা করেছেন, তা পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ করতে পারেন না। তিনি টেনিসটা খেলেছেন। এবং মনপ্রাণ দিয়ে খেলেছেন। ‘আমি অমুক’ মার্কা অহমিকা-সর্বস্ব অ্যাথলিটে ভরা দুনিয়ায় বছরের পর বছর শিল্প, সামর্থ্য এবং শালীনতার জীবন্ত অভিজ্ঞান হয়ে রয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পাশাপাশিই নিজের মধ্যে জয়ের জন্য একটা বন্য খিদেও লালন করেছেন।
হতে পারে সমস্ত এটিপি খেলোয়াড়ের ভোটে নির্বাচিত ‘স্তেফান এডবার্গ স্পোর্টসম্যানশিপ অ্যাওয়ার্ড’ ১৩ বার জিতে রেকর্ড করেছেন। কিন্তু তার মধ্যে কোথাও একটা আগুনও ছিল। অন্তরে অহর্নিশ একটা গনগনে আগুন জ্বলতে না-থাকলে শুধু মিষ্টি হাসি আর দৈবী চেহারা দিয়ে এই সাফল্য আসে না।
অনায়াস। অনাবিল। আকর্ষণীয়। রজার ফেডেরার ছিলেন মানবশরীরে ‘ইনস্টলেশন আর্ট’। একটু বিভ্রম, একটু সত্যি। কিন্তু বাকিটা আগুনে পোড়ানো। শালীনতা, ভদ্রতা, মার্জিত ব্যবহারের ছাইচাপা থাকলেও আগুন তো আগুনই থাকে। যাঁরা বোঝার তাঁরা বোঝেন। যেমন মার্টিন চিলিচ বুঝেছিলেন সেই অস্ট্রেলীয় ওপেনে।
টেনিসের সর্বোত্তম সময়ের সর্বোৎকৃষ্ট খেলোয়াড় চলে যাচ্ছেন চিরকালীন অবসরে। এই গ্রহে নক্ষত্রদের বিচরণের সুখের সময় চলে যাচ্ছে। বয়ে যাচ্ছে নদীর মতো। সরে যাচ্ছে ভক্তের বাড়ানো হাতের নাগাল পেরিয়ে। সে ভাবছে, মনুষ্যজীবনের একটা বাক্সে আর ‘টিক’ দেওয়া হল না! আইভিলতা-বিছানো অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সবুজ ঘাসে ঝকঝকে সাদা টি-শার্ট আর শর্টসে লোকটাকে দেখা হল না! সেই মধ্যবয়সি আকুল ভক্ত তাই বিদায়বেলায় ‘মিস্টার টেনিস’কে সেটাই প্রাণপণে বলছে, যেটা বিদায়ী চিঠিতে তিনি টেনিসকে বলেছেন— আই লাভ ইউ অ্যান্ড আই উইল নেভার লিভ ইউ।
ভালবাসি। কখনও ছেড়ে যাব না। কারণ এই ভালবাসাটা রজার ফেডেরারের বাঁ-হাতের মণিবন্ধে বাঁধা মহার্ঘ ব্র্যান্ডের ঘড়ির মডেলের মতো। ‘পারপেচুয়াল’। চিরস্থায়ী।
(গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy