ভারতীয় দলের বিদায়ী কোচ রবি শাস্ত্রী। ফাইল চিত্র
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হতে না হতেই বিরাট কোহলীরা ছিটকে গিয়েছেন। আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের অভিযান শেষ হতে না হতেই দুটি বিষয় বারবার আলোচনায় চলে আসছে। আইপিএল এবং জৈবদুর্গ (বায়ো বাবল)।
দায়িত্ব ছাড়ার পরেই বিদায়ী কোচ রবি শাস্ত্রী অপ্রত্যাশিত হারের দায় চাপিয়েছেন আইপিএল এবং জৈবদুর্গের ঘাড়ে। পারলে এটাও সরাসরি বলে দিতেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ভারতের সাততাড়াতাড়ি বিদায় নেওয়ার পিছনে আসলে দায়ী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
এই নিয়ে প্রথম মুখ খুলেছিলেন যশপ্রীত বুমরা। নিউজিল্যান্ডের কাছে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে হারার পরেই ভারতের বিদায় মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। ওই ম্যাচের পর বুমরা প্রথম আইপিএল-এর খারাপ প্রভাব নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে এই জোরে বোলার বলেছিলেন, “বিশ্রামের দরকার হয়। টানা ছ’মাস খেলে যাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। সবারই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর দরকার হয়। খুব বেশি দিন পরিবার থেকে দূরে থাকলে সেটা সারাক্ষণ মনের মধ্যে চলতে থাকে। কিন্তু মাঠে নামলে সেটা ভাবলে চলে না। বিসিসিআই চেষ্টা করেছে আমাদের সাহায্য করতে। কিন্তু সূচি কী হবে, সেটা আমাদের হাতে থাকে না। জৈবদুর্গের মধ্যে থাকলে মানসিক ক্লান্তি আসেই। কিছু করার নেই।”
বুমরা, কোহলীদের মাথায় হাত বুলিয়ে বাবা-বাছা করে শাস্ত্রী সোমবার শেষ ম্যাচের পরে বলেছেন, “জৈবদুর্গে যদি ছ’মাস যদি থাকতে হয়, তা হলে তো ক্লান্তি আসবেই। এই দলে একাধিক ক্রিকেটার রয়েছে, যারা তিন ধরনের ক্রিকেটই খেলে। শেষ দু’বছরে মাত্র ২৫ দিন বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ওরা। কে ব্যাট করছে, তাতে কিছু যায়-আসে না, জৈবদুর্গে থেকে খেলতে হলে ডন ব্র্যাডম্যানেরও গড় কমে যেত। ক্রিকেটাররা মানুষ, এমন তো নয় যে, পেট্রল ঢেলে দিলাম আর খেলতে শুরু করে দেবে তাঁরা।”
প্রথমে বুমরার বক্তব্য প্রসঙ্গে আসা যাক। পেশাদার বলে নিজেদের দাবি করলে বিশ্রাম, পরিবার, ক্লান্তি এই শব্দগুলি আর মুখে সাজে না। কোভিডের সময় চিকিৎসক, নার্সদেরও দিনের পর দিন নিভৃতবাসে থেকে কাজ করে যেতে হয়েছে। হাসপাতালই তাঁদের ঘর-বাড়ি হয়ে গিয়েছে। এমনও দেখা গিয়েছে, বাবার হাত ধরে চিকিৎসক মা-র সঙ্গে দেখা করতে এসেছে ছোট্ট মেয়ে। টানা এক মাস হাসপাতালে পিপিই কিট পরে কোভিড রোগীর চিকিৎসা করা মা-র কাছে যাওয়ার উপায় নেই। গেটের ওপার থেকেই বাবার কোলে চেপে মেয়ের কাতর কান্না, ‘মামমামের কাছে যাব। মামমাম, আমাকে একটু কোলে নাও না।’ পেশাদার মা সে দিন কোলে নেননি সন্তানকে। পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা তাঁকে ঘেঁসতে দেয়নি সন্তানের কাছে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তি তালিকায় ‘এ+’ ক্যাটিগরিতে থাকা বুমরা বছরে ৭ কোটি টাকা পান। ম্যাচপিছু পারিশ্রমিক আলাদা। সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকের পারিশ্রমিক তার ধারে-কাছে নয়। তবু কি সেই ‘মা’-র কাছ থেকে একটু শেখা যায় না? তিনি আবার যে আইপিএল-এর দোহাই দিয়ে ক্লান্তির কথা তুলে ধরেছেন, সেই আইপিএল-এ দেড় মাস খেলে তিনি আরও ৭ কোটি টাকা পকেটে পোরেন। কোটি কোটি টাকা রোজগার করতেই পারেন। কিন্তু যেটা করে খান, সেখানে ব্যর্থতা এলে আবার সেটাকেই শিখণ্ডীর মতো খাড়া করলে, তাকে তো শুধু অপেশাদারিত্ব নয়, পেশার প্রতি তঞ্চকতাও বলে।
আইপিএল খেলে যদি এতই ক্লান্তি আসে, তা হলে জো রুটের মতো আইপিএল-এ না খেলার ‘অপেশাদার’ সিদ্ধান্ত নিতেই পারতেন বুমরা। দু’ পকেটেই সাত কোটি করে ঢুকলে তার প্রতি ন্যূনতম দায়বদ্ধতা তো দেখাতেই হবে।
রবি শাস্ত্রীর কাছ থেকে অবশ্য পেশাগত দায়বদ্ধতা আশা করা অন্যায়। কারণ, তিনি পেশা থেকে সরে আসার পরে (একটুও সময় নষ্ট না করে) ব্র্যাডম্যানকে জৈবদুর্গে বসিয়ে দিয়েছেন। দায়বদ্ধ না থেকে নিজেকে দায়মুক্ত করাই হয়ত পৃথিবীর সহজতম কাজ। এটা ঠিকই, ক্রিকেটাররাও মানুষ। এমন নয় যে, পেট্রল ঢেলে দিলাম আর তারা খেলতে শুরু করে দিল। কিন্তু পেট্রল যদি না লাগে, তা হলে তো ঢাকনাটা বন্ধ রাখতে হবে। সেটা হলে কারও কিছু বলার থাকে না। কিন্তু মালিকের থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে পেট্রল ভরব, আর চালক হয়ে গাড়ি চালাব না, সেটা তো দায়বদ্ধতা নয়।
বুমরাদের মুখপাত্র হিসাবে শাস্ত্রী অনায়াসে বোর্ডকে বলতে পারতেন, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম দেওয়ার জন্য। কিন্তু শাস্ত্রীর বক্তব্য, “আমার দায়িত্ব নয় বোর্ডকে বিশ্রামের জন্য বলা। যে কোনও বড় ক্রিকেট খেলিয়ে দেশের বোর্ডও প্রতিযোগিতার আগে ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দিতে চাইবে। মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখতে সেটাই করা হয়।’’ তা হলে তাঁর দায়িত্ব কী? কী করে ব্যাট ধরতে হয়, সেটা কোহলীকে শেখানোর জন্য নিশ্চই তাঁকে রাখা হয়নি।
যাওয়ার সময় বোলিং কোচ ভরত অরুণকে দলে টেনে নিয়েছেন। অরুণের বক্তব্য, “ছ’মাস ধরে খেলে চলেছে দলটা। কেউ বাড়ি যায়নি। আইপিএল-এর প্রথম পর্বের পর একটু বিশ্রাম পেয়েছিল ওরা। জৈবদুর্গে আটকে রয়েছে ছ’মাস ধরে। আইপিএল এবং টি২০ বিশ্বকাপের মাঝে একটু বিশ্রাম পেলে ছেলেদের জন্য ভালই হত।” সত্যিই ছেলেদের ভাল চাইলে বাবার মতো তাদের আগলানোটাই দায়বদ্ধতা, সেটাই কর্তব্য।
চলে যাওয়ার সময় তাদের মাথায় মিথ্যা সহানুভূতির হাত রাখলে ছেলেরা উচ্ছন্নে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy