১ ফেব্রুয়ারি সংসদে বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। — ফাইল চিত্র।
চাপ কিন্তু বাড়ছে। রাত পোহালেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে জানাবেন এই চাপ তিনি কী ভাবে মোকাবিলা করবেন। কিন্তু যে ভাবেই করুন তাতে আমজনতার কী হবে সেটাই দেখার। নির্বাচনের আগে এটাই তাঁর সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। সাধারণ ভাবে এই বাজেটগুলোতে প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়। তাই অনেকেই বলছেন এই বাজেটেও সেটাই দেখা যাবে। একই সঙ্গে যদি মাথায় রাখি যে আগামী আর্থিক বছর নিয়ে গোটা বিশ্বই সংশয়ে, এবং এই সরকার নির্বাচনে জিতে ফেরার সম্ভাবনাও বেশ অনেকটাই তা হলে কিন্তু গল্পটা বদলে গিয়ে একটু অন্যরকম দাঁড়ায়।
অন্য রকম, কারণ বিশ্বের সাম্প্রতিক ইতিহাস কোভিডের কারণে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্ব জুড়ে সামাজিক অস্থিরতা আর রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ। আমাদের সীমান্তে চিন বসে রয়েছে আগ্রাসী হয়ে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মুদ্রাস্ফীতির চাপ, বৃদ্ধির হার হ্রাস, অসাম্য বৃদ্ধি। এবং এ চিত্র কমবেশি বিশ্বের সব দেশেই।
ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়। যদি তুলনামূলক ভাবে বিশ্বের অন্য অনেক দেশের থেকে ভারতের বৃদ্ধির হার বেশি হয় তা হলে তা শুনতে ভাল লাগে। কিন্তু তার মানে যে কী তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সীতারামন বিগত বাজেটে যে আয় করবেন বলে দাবি করেছিলেন তার ৩৫ শতাংশই ছিল বাজার থেকে করা ঋণ, আর ১৬ শতাংশ ছিল জিএসটি থেকে আয়। তৃতীয় স্থানে ছিল সংস্থা থেকে পাওয়া কর যা আয়ের ১৫ শতাংশের দাবিদার ছিল।
একটি অঙ্ক বলছে এই ভাবে জিএসটির ৬৬ শতাংশই নাকি সাধারণ মানুষের পকেট থেকে এসেছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, উত্তর কোভিড পর্বে সরকার চালানোর খরচের একটা বড় অংশই গত বাজেটে সীতারামন সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপাতে বাধ্য হয়েছেন।
সরকারের বাজেটের সঙ্গে একটি সংস্থার বাজেটের ফারাক হল সরকারের আয় ও ব্যয় সম্পদের পুনর্বণ্টনকে দিশা দেখায় এক জটিল আর্থিক প্রক্রিয়ায়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, সরকার যদি রাস্তায় বিনিয়োগ করে তা হলে রাস্তা তৈরির কাজে স্থানীয় মানুষের নিয়োগ হয়, যান চলাচলের সুবিধা হওয়ায় বাজারের প্রসার হয় এবং এক জটিল আর্থিক সম্পর্কের শৃঙ্খলে স্থানীয় উন্নতি হতে থাকে। অর্থাৎ সরকারের খরচের ধরন কিন্তু দেশে আয়ের পূনর্বণ্টন করতে পারে। কিন্তু গত বছরের বাজেটের হিসাবই বলছে পরিকাঠামো খাতে দেশে যে টাকা খরচ হয়েছে তার মাত্র ৩০ শতাংশ এসেছে সরকারের কোষাগার থেকে।
এটা ঠিক যে কোভিড উত্তর ভারতে কোষাগারের উপর যে চাপ ছিল তাতে অনেক কিছুই করা অসম্ভব। বিশ্বে সব সরকারের কাছেই কোষাগার বাঁচিয়ে খরচ করাটা বেশ চাপের ছিল। সরকার ঠিক কতটা ঋণ নিতে পারে তার কোনও নির্দিষ্ট অঙ্ক নেই। তবে মোদী সরকার ২০২৫/২৬ এর মধ্যে ৪.৫ শতাংশ রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে চায়। এই লক্ষ্য থেকে ভ্রষ্ট হতে চায় না তারা। তাই সব সরকারি সম্পত্তিকে আয়ের সূত্র করে তুলতে বদ্ধপরিকর বর্তমান সরকার। ফাঁকা জমি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বিক্রি করে টাকা তোলা ইত্যাদি। পাশাপাশি, খরচ কমাতে ক্রমাগত কোপ পড়ে ভর্তুকিতে। এটা ভাল না খারাপ সে অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু যা সত্যি তা হল কোষাগারে চাপ বাড়িয়ে আয় এবং সম্পদের পুনর্বণ্টনের রাস্তায় হাঁটার কোনও তাগিদ এই মুহূর্তে অন্তত দেখা যাচ্ছে না।
এ বার যদি মাথায় রাখি যে দেশের বৃদ্ধির হার আগামী আর্থিক বছরে যা হবে ভাবা হয়েছিল তার থেকে আরও কমবে এবং প্রতিটি সমীক্ষাই তার আগের সমীক্ষা থেকে সম্ভাব্য বৃদ্ধির হারকে কমিয়ে চলেছে এবং সরকারও তা মানছে, তা হলে চাপটা আরও বেশি। কারণ বৃদ্ধির হার কমা মানে সরকারের আয়ও কমে যাওয়া। কারণ সরকারের আয়ের প্রধান সূত্র কর।
পাশাপাশি, আয় কমা মানেই সরকারের খরচ করার পথ সঙ্কুচিত হওয়া। তাই নানান ভাবে ভর্তুকির পথ আরও সরু হবে। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য দেওয়া সুবিধা রেল ছেঁটে ফেলেছে। সে আর ফিরবে বলে মনে হয় না। বিশ্ববাজারে পেট্রোপণ্যের বাজার স্থিতিশীল। এই সুযোগ নিয়ে সারের ভর্তুকির উপর কাঁচি চালানোর সম্ভাবনা প্রবল।
এটাও সত্যি যে অর্থমন্ত্রীর কাছে চ্যালেঞ্জটা এই মুহূর্তে সাংঘাতিক। এমনিতেই কোভিডের আগে থেকে ভারতের উন্নয়নের গতিপথ বদলাতে শুরু করেছিল। বিভিন্ন সমীক্ষায় আর্থিক অসাম্য বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছিল। কোভিড তা আরও বাড়িয়েছে। কোষাগারের চরিত্রও বদলেছে কোভিডের কোপে। আর পাশাপাশি এই সরকার এমনিতেই উন্নয়নের প্রথাগত রাস্তায় হাঁটতে রাজি নয়। তাই এটা ভেবে নিতে অসুবিধা নেই যে কালকের বাজেটে খুব বিরাট কিছু পরিবর্তন হবে না। যেটা দেখার তা হল এই বাজেট আগামী দিনে সরকার তার জনকল্যাণ নীতি নিয়ে সাধারণ ভাবনাকে আদৌ চ্যালেঞ্জ করবে কি না। এটাও তো ঠিক যে এই বাজেট প্রাক নির্বাচনী শেষ পুর্ণাঙ্গ বাজেট। তাই অর্থমন্ত্রীর কাছে কি সত্যিই এই বাজেট শাঁখের করাত হয়ে উঠবে নাকি কোষাগার সামলাতে জনকল্যাণে সরকারি ভূমিকাকে সঙ্কুচিত করে যেমন হাঁটতে তাঁর সরকার অভ্যস্ত সেই পথেই তিনি এগোবেন। আর এক রাত। তার পরেই আমরা এর উত্তর পেয়ে যাব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy