Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
income tax

আয়করদাতার সংখ্যা বাড়াতে

এই লেখায় যে ধারণাটি নিয়ে কথা বলতে চাই, তা করের হার বদলে স্ল্যাব চওড়া করা সংক্রান্ত।

নীলাঞ্জন দে
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২২ ০৫:২৫
Share: Save:

আয়করের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আদায় হল এই অর্থবর্ষে। মার্চ মাসের মাঝামাঝি আদায় গত বছরের তুলনায় ৪৮% বেড়ে পৌঁছেছিল ১৩.৬ লক্ষ কোটি টাকায়। অবশ্যই ইতিবাচক সংবাদ, কিন্তু এখনও যে করদাতার সংখ্যা নিতান্ত সীমিত, সে কথাও ভুললে চলবে না। ভারতে বিভিন্ন ধরনের রোজগেরে মানুষের সংখ্যা বাড়া সত্ত্বেও এখনও বেশির ভাগ নাগরিকই আয়করের আওতায় পড়েন না। করদাতার সংখ্যা যদি ভবিষ্যতে বাড়াতে হয়, তা হলে এখনই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। আদায় না বাড়লে প্রবল অসুবিধায় পড়ব আমরা।

এই লেখায় যে ধারণাটি নিয়ে কথা বলতে চাই, তা করের হার বদলে স্ল্যাব চওড়া করা সংক্রান্ত। বিষয়টি নতুন নয়, তবে তা গত কয়েক বছরে নানা কারণে প্রায় ধামাচাপা পড়েছিল। যে কোনও সরকারই চায় যাতে মানুষ নিয়ম মেনে আয়কর জমা করেন। তাই দরকার কর-নীতির প্রতি আনুগত্য— তা প্রতিটি দেশবাসীর আয় পূর্ণ রূপে ঘোষণাই হোক, নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী কর দেওয়াই হোক বা সে ব্যাপারে জনসাধারণের সামগ্রিক দায়দায়িত্ব বাড়ানোই হোক। আয়কর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পিত ‘অপারেশন ক্লিন মানি’ এখানে উল্লেখ করার মতো। ব্যক্তিগত আয়কর ছাড়া কর্পোরেট ট্যাক্সও এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য।

দেশের জনসংখ্যার এক সামান্য অংশই প্রত্যক্ষ কর দেন। আরও বেশি সংখ্যক মানুষ কেন করের আওতায় আসবেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন করার বিশেষ কেউ নেই। অথবা, এ ব্যাপারে মধ্যবিত্ত উপার্জনকারীদেরই কেন যত মাথাব্যথা থাকবে, বিশেষত তিনি যদি বেতনভুক কর্মী হন, তা নিয়েও কেউ চিন্তিত নন। যেখানে তথ্যের অভাব কমে আসছে, সিংহভাগ নাগরিকই আধার-প্যানের মাধ্যমে সংযুক্ত, সেখানে কর ফাঁকি কেন আগামী কালের সূর্যোদয়ের মতো নিশ্চিত, তা-ও কেউ জানতে চান না। সমস্ত প্রসঙ্গটি আজ একপেশে।

একপেশে বলেই শুধুমাত্র করের হার নিয়ে আলোচনায় ক্ষান্ত দিলে হবে না, আয়করের সীমা বিষয়ে নতুন নীতি তৈরি করা যায় কি না, তাও দেখতে হবে। করযোগ্য আয়সম্পন্ন লোকের সংখ্যা না বাড়লে, কর-নীতির প্রয়োগ যথাযথ ভাবে হবে কী করে? আগামী দিনে এই প্রশ্ন বার বার উঠতে বাধ্য। আর এখানেই চলে আসে চাপা পড়া অন্য প্রসঙ্গটি। সরকারের ঘরে যথেষ্ট রাজস্ব আসা তো দূরের কথা, তুলনায় যৎসামান্যও আসছে না ব্যক্তিগত আয়করের মাধ্যমে। রাজকোষে অর্থের আগমনের সঙ্গে বণ্টনের যোগ তো খুব ক্ষীণ নয়, তাই বৃহত্তর ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অসাম্য দূরীকরণ বিষয়ক ভাবনাটি থেকেই যাচ্ছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের এক রিপোর্টের তথ্যের উল্লেখ করি। বিশ্বের সব প্রান্তেই অতিমারির পর অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের চেষ্টা চলছে। রাজস্ব আদায়কে গতিশীল করার চেষ্টা চলছে। ব্যক্তিগত আয়কর তার অন্যতম হাতিয়ার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী পর্যায় থেকেই তার ভূমিকা যথেষ্ট গঠনমূলক, এবং আয়করকে সে জন্য বিশেষ মান্যতা দেওয়াই দস্তুর। অর্থ ভান্ডারের মতে, ধনী দেশের জিডিপি-র প্রায় ৯ শতাংশ আসে আয়করের কল্যাণে। উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশের গড় সেখানে ২.৫ শতাংশ। কারণ একাধিক, করদাতাদের সংখ্যা কম হওয়াও তার একটি। কর আদায় বাড়লে কী ভাবে বণ্টন পদ্ধতি উন্নত হয়, সে ব্যাপারে মতামত জানিয়েছে অর্থ ভান্ডার।

ভারতে জিএসটি আদায়ের পরিমাণ দেখলে বোঝা যায় যে, বেশ অনেক টাকাই নিয়মিত রাজকোষে আসছে সে দিক থেকে। এই জানুয়ারিতেই নতুন নজির গড়েছে জিএসটি— আদায়ের পরিমাণ প্রায় ১.৪ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে গিয়েছিল সে মাসে। যথেষ্ট পরিকল্পনা আছে বলে কর প্রদানের প্রবণতা বাড়ছে, তা বুঝতে দেরি হয় না।

আয়কর এবং জিএসটি কি আদৌ তুলনীয়? এক কথায় উত্তর, না। তবে করদাতাদের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে পাশাপাশি আলোচনা করা যেতেই পারে। নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন করে প্রত্যক্ষ কর আরও গুছিয়ে পরিচালনা করা দরকার। একটু ঘুরিয়ে, চশমা বদল করে, বিষয়টি অন্য আঙ্গিকে দেখা যাক। একটি হিসাব বলছে ভারতের কেবল তিন লক্ষ মানুষ বছরে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার বেশি উপার্জন করেন, এবং সেই অনুযায়ী আয়কর দেন। এই তথ্যের মধ্যে যে অনেক ঘাটতি লুকিয়ে আছে, না বলা কথাও প্রচুর, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

অতএব, জিডিপির অনুপাতে কর আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে হবে। আরও অনেকে যাতে উপার্জন অনুযায়ী কর দেন, তা নিশ্চিত করা দরকার। এই ডিজিটাল যুগে তা অসম্ভব নয়। তার কারণ, প্রযুক্তি ব্যবহার করে আজ করের পরিধির মধ্যে আনা যাবে অনেককেই। বা বলা ভাল, যাঁদের কর দেওয়ার কথা, তাঁরা প্রত্যেকেই যথাযথ ভাবে কর দিচ্ছেন কি না, তা বোঝা যাবে প্রযুক্তির মাধ্যমে।

অন্য বিষয়গুলি:

income tax Taxes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy