Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
CBSE

পেন্ডুলামে দুলছে ভবিষ্যৎ

করোনা সংক্রমণ এখন নিম্নমুখী হলেও তৃতীয় ঢেউ কবে আছড়ে পড়বে সেই আশঙ্কায় সবাই। তবে এর ফলে মেধাবী মধ্যবিত্ত ছাত্রছাত্রীরা সমস্যায় পড়ল না তো?

ঈশা দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২১ ০৫:২৩
Share: Save:

বৈঠক, আলোচনা, পর্যালোচনা ওদের নিয়ে। ৭ জুলাই আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, আরও কিছু তর্কবিতর্ক হয়ে গেল ওদের নিয়ে। সংখ্যার বিচারে ওরা মাথাগোনা। সারা দেশে সিবিএসই দশমের পরীক্ষার্থী ১২ লক্ষ, দ্বাদশের ৮ লক্ষ, আইসিএসই দশমের পরীক্ষার্থী ২ লক্ষ, দ্বাদশের ৮৮ হাজার। এবং পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ লক্ষ, উচ্চমাধ্যমিকের ৮ লক্ষ।

এরা আমার আপনার বাড়ির সন্তান, প্রায় দু’বছর ধরে যারা অনিশ্চয়তার পেন্ডুলামে দুলছে। পরীক্ষা শুরুর এক মাস আগেও তারা জানে না, পরীক্ষা হবে, না কি হবে না। এবং শেষপর্যন্ত পরীক্ষা যখন হল না, তখন তাদের জন্য ঠিক কী বিকল্প থেকে গেল?

এই অবধি পড়ে অনেকেই বলবেন, যাদের নিয়ে চিন্তা, তারা তো খুব খুশি। খুশি, সন্দেহ নেই। সম্প্রতি এক ফুড অ্যাপের হিসাব বলছে, ১ জুন পরীক্ষা বাতিল হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ১৪ হাজার প্যাকেট মিষ্টির অর্ডার পেয়েছিল তারা। পরীক্ষা বাতিল হওয়ার আনন্দ উদ্‌যাপন করেছিল সারা রাজ্য। এত আনন্দ কিসের? আপাত ভাবে মনে হয়, এই সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হল না, এটা তো কম কথা নয়! নিশ্চয়ই এটা স্বস্তির বিষয়, খুশির বিষয়। কিন্তু এতটা খুশি, যাতে মিষ্টি বিতরণ করা যায়?

সত্যিটা সম্ভবত অন্যত্র লুকিয়ে আছে। আমরা চিন্তিত, আতঙ্কিত সন্তানের সংক্রমণের আশঙ্কায়। অনিশ্চয়তা, স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত চিন্তাকে একটা সম্ভাবনা ধরে নিয়েও এ কথা কি আমরা, অভিভাবকরা অস্বীকার করতে পারি যে, আমরা পরীক্ষার ফলাফল নিয়েও কিঞ্চিৎ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম?

সারা বছর অনলাইন ক্লাসে এক রকম জোড়াতালি দিয়ে চলেছে পড়াশোনা। স্কুলের তরফ থেকে পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়নি, তা তো নয়। কিন্তু, সে পরীক্ষা কী ভাবে দিয়েছে ছেলেমেয়েরা, তা আমাদের অজানা নয়। নিশ্চয়ই এর ব্যতিক্রম থাকতে পারে। কিন্তু মা হয়ে, অধ্যাপিকা হয়ে যে দুঃখজনক বাস্তব দেখেছি, তার কথাই বলা। “মা, ও কিন্তু বাংলা ব্যাকরণ একদমই পারে না, জানো তো ওর এক সপ্তাহ আগে কোভিড হয়েছিল, তুমি যদি ওর ব্যাকরণের প্রশ্নগুলো করে পাঠিয়ে দিতে, খুব ভাল হত। তুমি আমাকে হেল্প করবে না জানি, কিন্তু ও তো ঠিক তোমার মেয়ে নয়।”

টেস্ট পরীক্ষার আগে যখন শিক্ষকদের স্বাভাবিক প্রবণতায় বলতে শুনেছি, “তোমরা কিন্তু এই বার ভাল করে প্রিপারেশন শুরু করো”, অনেকেরই উত্তর “পরীক্ষাটা আগে হোক, ম্যাম।” তাদের আশা এবং শিক্ষকদের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে পরীক্ষাটা শেষপর্যন্ত হল না। অতএব মিষ্টি বিতরণ।

পরীক্ষার ফলাফলের নানা রকম ফর্মুলা সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় এল এবং সকলেই মতামত পোষণ করলেন— ফর্মুলাটা লোকদেখানো, সবাইকে গড় নম্বর দেওয়া হবে, যেমন আগের বার না-হওয়া পরীক্ষার ক্ষেত্রে হয়েছিল। আবারও একই সঙ্গে আনন্দিত ও আতঙ্কিত হওয়ার মতো বিষয়। সত্যতা, ফল প্রকাশ হলেই জানা যাবে।

কিন্তু এখনও যা জানা যাচ্ছে না, তা হল ভর্তির মাপকাঠি। পরীক্ষা হল না, ফলাফল ঘিরে ধোঁয়াশা, তা হলে কি ভর্তির প্রবেশিকা পরীক্ষা হচ্ছে? এই নিয়ে চলল বেশ কিছু দিনের দোটানা। ৭ জুলাই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে উপাচার্যদের বৈঠকে এক রকম নিদান দেওয়া হয়ে গেল— স্নাতক, স্নাতকোত্তর স্তরের সব প্রবেশিকা পরীক্ষা বাতিল। ৮ জুলাই জানা গেল, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রবেশিকা পরীক্ষা হবে না, কারণ জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড, যারা সেই পরীক্ষার দায়িত্বে থাকে, তারা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরীক্ষা না নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

করোনা সংক্রমণ এখন নিম্নমুখী হলেও তৃতীয় ঢেউ কবে আছড়ে পড়বে সেই আশঙ্কায় সবাই। তবে এর ফলে মেধাবী মধ্যবিত্ত ছাত্রছাত্রীরা সমস্যায় পড়ল না তো? তারা তো লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বেসরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে পারছে না। প্রেসিডেন্সি, যাদবপুরের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে, তাও সাধ্যের মধ্যে— এটাই তাদের স্বপ্ন। প্রবেশিকা পরীক্ষায় ভাল ফল করার হাতিয়ারটুকু না থাকলে, গড় মূল্যায়নের কোপে পড়লে প্রভাবিত হওয়ার সংখ্যা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারা ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় অনেক বেশি।

এই সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু তাদের ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলতে পেরেছে শুধু অর্থের আদানপ্রদানের উপর ভিত্তি করে। বোর্ডের পরীক্ষা, ফলাফল কিছুই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। যে মুষ্টিমেয় ছাত্রছাত্রী এই সুযোগ পেল, তারা মিষ্টি বিতরণের লক্ষ্য ছিল কি না, ভাবার বিষয়।

তাই অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী, তাদের অভিভাবকরা এখন অনিশ্চয়তার পেন্ডুলামের আর একটি ঘূর্ণনের দিকে তাকিয়ে— কী হবে ভর্তির পদ্ধতি? প্রবেশিকা পরীক্ষাকে যদি সম্পূর্ণ বাতিলই ধরা যায়, তা হলেও থেকে যায় শিক্ষাবর্ষ, সন্তানের উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ ইত্যাদি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

প্রশ্নগুলো চেনা, উত্তর তো অজানা।

অন্য বিষয়গুলি:

CBSE ICSE West Bengal Board
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy