২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে কোনও উপনির্বাচনে বিজু জনতা দল (বিজেডি) পরাজিত হল, আসনটি জিতল বিজেপি। ফাইল ছবি।
ওড়িশার রাজনীতি কি একটা মোড় ঘোরার দিকে এগোচ্ছে? উন্নয়নের রাজনীতি এবং নির্বাচনী রাজনীতি, দু’ধরনের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতেই কি এই দিক-পরিবর্তন দেখা সম্ভব? যদিও সম্প্রতি দু’টি উপনির্বাচনের ফলাফলে এর কোনও স্পষ্ট প্রমাণ নেই, কিন্তু ধামনগর, পদমপুর— দু’টি বিধানসভা আসনেই বাস্তবকে খুঁটিয়ে দেখলে ওড়িশার রাজনীতিতে নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত পাওয়া সম্ভব। ধামনগর আসনটি বিজেপিরই ছিল, কিন্তু তাতে বিজেপির ফের জয়ী হওয়া যে রাজনৈতিক বার্তা দিল, তা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে এই প্রথম কোনও উপনির্বাচনে বিজু জনতা দল (বিজেডি) পরাজিত হল, আসনটি জিতল বিজেপি।
দ্বিতীয়ত, এই নির্বাচন দেখাল যে, কিছু ভাঙন ধরেছে মেয়েদের ভোটেও। এত দিন মেয়েদের ভোটই ছিল বিজেডির সমর্থনের মূল ভিত্তি। এখন তা থেকে একাংশ সরে যাচ্ছে বিজেপির দিকে।
তৃতীয়ত, এই নির্বাচনের ফল মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের রাজ্যব্যাপী অপরাজেয় ভাবমূর্তিতে ধাক্কা দিয়ে যেন বিজেডির মধ্যে পরাজয়ের ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে, এমন বলছেন অনেকেই।
পশ্চিম ওড়িশায় পদমপুরের নির্বাচনে বিজেডি জিতেছে, বেশ বড় মার্জিনে। কিন্তু সেখানেও কী যেন আশঙ্কার ইঙ্গিত। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ বলছেন, আগে থেকে পরাজয়ের ভয়েই মুখ্যমন্ত্রী এ বার অনেকখানি সময় দিলেন পদমপুরে, একটি বিধানসভা এলাকায় তিনটি জনসভা করলেন। কেবল তা-ই নয়, গোটা রাজ্যের ক্ষমতা পরিকাঠামো কোনও না কোনও ভাবে কাজে লাগানো হল। তাই বিজেপি হেরে গিয়েছে, তবু মনে করার কারণ আছে যে নবীনবাবুর নির্বাচনী প্রচার শেষে হয়তো বিজেপির সুবিধেও করতে চলেছে। কেননা, ক্রমশ উন্নয়ন-বিষয়ক এক সুচিন্তিত কর্মসূচির উপর ভিত্তি করে এখানে বিজেপি তাঁর দলের এক শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। স্থানীয় স্তরে ও রাজ্য স্তরে উন্নয়নের নানা প্রশ্নকে তারা সামনে রেখেছিল। এই নির্বাচন কংগ্রেসের সমর্থনেও ধস নামিয়েছে, এবং বিজেপিকে একমাত্র বিরোধী কণ্ঠ, রাজ্য রাজনীতিতে শক্তিশালী বিকল্প হিসাবে সামনে এনেছে। সব মিলিয়ে, ওড়িশাতে অনেকেই এখন মনে করছেন যে, বিজেপি ক্ষমতার দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে, উন্নয়নের রাজনীতির কর্মসূচিতে নতুন দিশা নিয়ে আসছে। একে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার রাজনীতি বলে মনে হতে পারে।
বিজেপির সমর্থন বৃদ্ধির একটা বড় কারণ হতে পারে এই যে, গরিবদের কল্যাণের নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্প, যা নরেন্দ্র মোদী শুরু করেছেন, সেগুলির প্রাপক বা ‘বেনিফিশিয়ারি’ রাজ্যে বেড়েই চলেছে। সম্ভবত তাই অনেক মানুষ জাতপাতের সীমা পেরিয়ে ভোট দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা, উজ্জ্বলা প্রভৃতি প্রকল্প রাজ্যের রাজনৈতিক পটভূমি ধীরে ধীরে বদলে দিচ্ছে। নতুন উন্নতির স্বপ্ন দেখানো বিকল্প দলকে রাজ্যে গরিবদের কাছে গ্রহণযোগ্য করছে, এমন সিদ্ধান্ত ভুল হবে না। তৃণমূল স্তরে সমর্থন বাড়াতে অক্লান্ত চেষ্টা করছে বিজেপি। কেবল বড় নেতাদের ভাবমূর্তি নয়, নীচের স্তরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্যেও বদলাচ্ছে রাজনীতি।
ওড়িশাতে বিজেপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কৌশল হল, উন্নয়নের সঙ্গে পরিচিতির মেলবন্ধন। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ধারণাকে সামনে আনছে বিজেপি, সেখানে স্থানীয় স্তরের অণু-প্রয়োজনের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে উন্নয়নের অতিকায় উদ্যোগ, যেমন উপকূলে মহাসড়ক, রেল, পেট্রো-কেমিক্যাল শিল্প, ইত্যাদি। অন্য দিকে, বিজেডি স্থানীয় স্তরের মৌলিক প্রয়োজনগুলি মেটানোর আশ্বাস দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বড় মাপের কোনও স্বপ্ন তৈরি কিংবা দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের কোনও লক্ষ্য খাড়া করতে পারছে না। পদমপুরের ভোটের ফল যা-ই হোক, সেখানে নাগরিকদের বিজেপি কর্মীরা ‘শ্রেষ্ঠ ওড়িশা’ তৈরির স্বপ্ন দেখিয়েছেন। ওড়িয়া পরিচিতির বোধ, ওড়িয়াবাসী বলে গৌরবের অনুভব তৈরি করা, এবং তাকে ‘শ্রেষ্ঠ ভারত’ তৈরির অন্যতম উপাদান বলে তুলে ধরার জন্য বিজেপি যথেষ্ট সচেতন। অর্থাৎ, ওড়িশায় রাজনৈতিক উত্থানের পথে এগোনোর কৌশল হিসাবে বিজেপি বেছে নিয়েছে গৌরব, আত্মপ্রত্যয় এবং উন্নয়নের উচ্চাশা। নরেন্দ্র মোদীর উপর আস্থাও ওড়িশাতে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওড়িশা এখন দু’ধরনের রাজনীতির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখছে— এক দিকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক, ভাবমূর্তি-নির্ভর রাজনীতি, অন্য দিকে সাংগঠনিক শক্তি ও উন্নয়নের নতুন ধারণা। সাম্প্রতিক অতীতে ওড়িশাতে বিজেপি যে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের এক শক্তিশালী বিকল্প হয়ে দেখা দিয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
তবে আঞ্চলিক দল বিজেডি সম্প্রতি নিজেদের রৌপ্য জয়ন্তী উদ্যাপন করল— তারাও রাজ্যে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সচেষ্ট। তাদের কানের কাছে এসে দরজায় ঘা দিচ্ছে বিজেপি। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতার গতি কোন দিকে যায়, এখন তার দিকে তাকিয়ে থাকার পালা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy