অতিমারির আগে দেশের বেশির ভাগ জায়গাতেই শিশুদের স্কুলে ভর্তির হার একশো শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। —ফাইল চিত্র।
অনির্বাণ: পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষার সমস্ত স্তরেই অনেক দিন ধরে অনেক সমস্যা। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেটা অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরে সঙ্কটটা তো এখন সর্বনাশের রূপ নিয়েছে। তা-ই নয় কি?
সুকান্ত: সঙ্কট নিশ্চয় আগেও ছিল। কিন্তু কোভিডের পরে সেটা অনেক বেড়ে গিয়েছে, বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে। প্রথমেই যদি একেবারে গোড়ার কথাটা দেখি— অতিমারির আগে দেশের বেশির ভাগ জায়গাতেই শিশুদের স্কুলে ভর্তির হার একশো শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। কোভিডের পরে খাতায়-কলমে হয়তো অনেক জায়গায় সেটা আবার মোটামুটি ঠিকঠাক হয়েছে, অন্তত যতটা খারাপ হবে ভাবা গিয়েছিল ততটা হয়নি। কিন্তু স্কুলের খাতায় নাম আছে, অথচ স্কুলে আসছে না, এমন শিশুর সংখ্যা কত, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর, স্কুলে যাচ্ছে কিন্তু লেখাপড়া কিছুই শিখছে না, এই সমস্যা তো সম্ভবত অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমার একটা বড় চিন্তা হল, সব মিলিয়ে একটা খুব বড়সড় নিরক্ষরতার বলয় তৈরি হচ্ছে— বহু ছেলেমেয়ে পড়তে-লিখতে শিখছে না, গুনতে শিখছে না, তারা পুরোপুরি অক্ষরজ্ঞানহীন থেকে যাচ্ছে। অন্য অনেক রাজ্যে অবস্থা হয়তো আরও খারাপ, কিন্তু সেটা তো কোনও সন্তুষ্টির জায়গা হতে পারে না।
তার পর আছে অর্থনীতির সমস্যা, কোভিড সেখানে চরম ঘা দিয়েছে। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অনেকে রোজগারের জন্যে স্কুল ছেড়ে দিচ্ছে, অনেকে হয়তো কিছুই করছে না, কিন্তু স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এটা বেশি ঘটছে ছেলেদের ক্ষেত্রে, ফলে কোথাও কোথাও অভূতপূর্ব ভাবে ছেলেদের স্কুলছুটের হার আজ মেয়েদের চেয়ে বেশি। এতে মেয়েদের খুশি হওয়ার কারণ নেই। জীবিকার তাড়া তাদেরও অনেককে স্কুলছুট করছে। উপরন্তু বহু মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, পাচার হচ্ছে কেউ কেউ।
উচ্চশিক্ষার স্তরে এর একটা প্রচণ্ড প্রভাব পড়বে। যারা কলেজে ভর্তি হবে, তাদের একটা বড় অংশেরই কলেজের পাঠ গ্রহণ করার জন্য যেটুকু ভিত দরকার সেটা একেবারেই থাকবে না। এই সমস্যা চিরকাল আছে, কিন্তু এটা অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। এবং কলেজের পড়াশোনাতেও প্রকৃত শিক্ষার ভাগটা কমে যাচ্ছে, তার জায়গায় জোর দেওয়া হচ্ছে ‘স্কিল ডেভলপমেন্ট’-এর উপরে। সারা পৃথিবীতেই এটা হচ্ছে, আমরাও তার বাইরে নই। সত্যিকারের বিদ্যাচর্চার উপর জোর যত কমছে, তার প্রভাব এসে পড়ছে স্কুলশিক্ষার স্তরেও। পশ্চিমবঙ্গে আগে বলা হত, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে আর কিছু না হোক লেখাপড়ার ভিতটা ভাল করে তৈরি করে দেওয়া হয়। এখন আর তা বলা যায় কি?
বিশেষ করে বিজ্ঞান-শিক্ষার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের স্কুলের ছবিটা সাংঘাতিক। কোন রাজ্যে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ছেলেমেয়েরা কতটা বিজ্ঞান পড়ছে, সম্প্রতি সেই বিষয়ে একটা রিপোর্টের খবর পড়লাম। সংখ্যাটা সবচেয়ে কম পশ্চিমবঙ্গে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, কম ছেলেমেয়ে বিজ্ঞান ‘বেছে নিচ্ছে’। কিন্তু আসলে তো এটা বেছে নেওয়ার ব্যাপার নয়, বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ থাকা না-থাকার প্রশ্ন।
কুমার: গত কিছু বছরে পশ্চিমবঙ্গে এই অভাব অনেক বেড়েছে। এখন এমনকি ব্লক স্তরেও অনেক উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে বিজ্ঞান পড়ানোর সুযোগ নেই।
সুকান্ত: সে দিন শুনলাম, উত্তর চব্বিশ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে একটাও স্কুল নেই যেখানে এখন এগারো-বারো ক্লাসে বিজ্ঞান পড়ানো হয়।
কুমার: বিজ্ঞান কী ভাবে পড়ানো হয় সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। এমন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের কথা জানি যেখানে অঙ্কের শিক্ষক নিজেই বলেছেন যে, ছাত্রদের জ্যামিতির কয়েকটা উপপাদ্য মুখস্থ করিয়ে দেন, তার থেকেই পরীক্ষায় ‘কমন’ চলে আসে, পাশ নম্বর উঠে যায়।
সুকান্ত: স্কুলে বিজ্ঞান পড়ানোর ব্যবস্থা আগেও যথেষ্ট ছিল না, কিন্তু উন্নতির বদলে এখন আরও ভয়াবহ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কয়েক বছর আগে শোনা গেল, রাজ্যের প্রত্যেক স্কুলে মাধ্যমিক স্তরে গড় এক জনও পূর্ণ সময়ের অঙ্কের শিক্ষক নেই। সেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি? স্কুলের বাইরে পরিপূরক বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রেও সরকারি ব্যবস্থার একই ছবি। যেমন, আগে জেলায় জেলায় সরকারি উদ্যোগেই বিজ্ঞান শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি হয়েছিল, ছেলেমেয়েদের বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহ দেওয়ার কিছু কিছু কাজও হত, এক সময় সরকারি টাকা বন্ধ হয়ে যায়, কেন্দ্রগুলোতেও তালা পড়ে যায়, বাড়িগুলো আছে, যন্ত্রপাতি কোথায় কী অবস্থায় আছে জানি না, চালু করার কথা কেউ ভাবছেন বলেও মনে হয় না।
অনির্বাণ: একেবারেই মনে হয় না। বস্তুত, আমাদের রাজ্যে এখন যাঁরা সরকার চালাচ্ছেন, ছেলেমেয়েরা কেমন লেখাপড়া শিখছে বা আদৌ কিছু শিখছে কি না, তা নিয়ে তাঁদের এতটুকুও মাথাব্যথা আছে বলে বিশ্বাস হয় না, শিক্ষার ব্যাপারে তাঁদের চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণ শূন্য মনে হয়। কিন্তু তার পাশাপাশি আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের আচরণেও যেন এই একই ঔদাসীন্য। নিজের ছেলেমেয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই নজর, তার জন্য সব রকম চেষ্টার ত্রুটি নেই, কিন্তু সাধারণ ভাবে রাজ্য জুড়ে লেখাপড়ার যে ভয়ঙ্কর অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে আমাদের যেন কিছুই যায় আসে না।
সুকান্ত: সেটা তো খুবই ঠিক কথা। আর, আমরা যাঁদের ওই এলিট বা শিক্ষিত সমাজের সদস্য বলে মনে করি না, যাঁদের ছেলেমেয়েরা প্রধানত সরকারি স্কুলে পড়ছে, তাঁদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রসঙ্গত বলা দরকার, পুরো ভারতবর্ষে মাত্র ৫০ শতাংশ ছেলেমেয়ে সরকারি স্কুলে পড়ে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে— কোভিডের আগের হিসাব— শতকরা ৮৬ জন সরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রী। এটা তো আমাদের একটা সম্পদ। এই ছেলেমেয়েদের অভিভাবকরা কেন শিক্ষার দুরবস্থা নিয়ে যথেষ্ট সরব হচ্ছেন না? এই যে এতগুলো স্কুলে বিজ্ঞান পড়বার কোনও উপায় নেই, সেটা লোকে ভবিতব্য বলে মেনে নিচ্ছেন। এই সচেতনতাটা কী করে...
অনির্বাণ: অনেক বিষয় নিয়ে তো এখানে হইচই হচ্ছে, হওয়া দরকারও বটে, কিন্তু এটা নিয়ে...
সুকান্ত: হচ্ছে, যেমন আবাস যোজনা নিয়ে... ও বাড়ি পেয়েছে, আমার প্রয়োজন আছে কিন্তু আমি পাইনি— এই সব নিয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু ওদের এলাকায় স্কুলে ভাল পড়াশোনা হয়, বিজ্ঞান পড়ানো হয়, আমাদের এ দিকে কেন সেই ব্যবস্থা থাকবে না— এই বলে কোথাও কোনও দাবি তো উঠছে না।
অনির্বাণ: আবার, অন্য দিকে, ওই এলিট সমাজেও তো শিক্ষার এই সামগ্রিক দুরবস্থা নিয়ে কোনও তাপ-উত্তাপ নেই।
সুকান্ত: নেই। অথচ সাধারণ ভাবে সমস্ত স্তরেই অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের শিক্ষা প্রবল ভাবেই চান, সে জন্য সাধ্যাতীত খরচও করছেন তাঁরা।
অনির্বাণ: তার মানে কি এই যে, তাঁরা লেখাপড়া শেখানোটাকে যার যার ব্যক্তিগত দায়িত্ব হিসাবেই দেখছেন, সুশিক্ষার অধিকার যে ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সমস্ত নাগরিকের একটা প্রাথমিক অধিকার, তার সুবন্দোবস্ত করাটা যে সরকারের দায়িত্ব, সেই ধারণাটা খুব দুর্বল হয়ে গিয়েছে?
কুমার: এর পিছনে একটা বড় কারণ সম্ভবত এই যে, প্রতিবেশী হিসাবে আমাদের যে দায়িত্ব, সেটা আমরা মনে রাখছি না। এক জন রিকশা-চালক সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যা রোজগার করছেন তার অর্ধেক টাকা চলে যাচ্ছে বাচ্চার পড়াশোনার জন্য, অথচ তাঁর প্রতিবেশী হিসাবে এ বিষয়ে আমার কোনও ভাবনাচিন্তা নেই। আমরা প্রশ্ন তুলছি না যে, এমনটা কেন হবে? সরকারি স্কুলে কেন তাঁর সন্তানের ঠিকঠাক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে না? প্রাইভেট টিউশন দেওয়ার দরকার হবে কেন?
অনির্বাণ: সত্যি বলতে কি, প্রতিবেশীর সন্তানের শিক্ষার সমস্যা সম্পর্কে, যেমন অন্য নানা প্রাথমিক প্রয়োজন মেটানোর সমস্যা সম্পর্কেও আমরা যে চুপ করে থাকতে পারি না, আমাদের যে সে বিষয়ে কিছু করা দরকার, বলা দরকার, এটা বোধ হয় বহু মানুষ মনেও করেন না। এ বিষয়ে প্রশ্ন তুললেও মনে হয় তাঁরা বলবেন, “এখন তো লেখাপড়ার খরচ অনেক বেড়ে গেছে, কী আর করা যাবে?” একটা স্তর পর্যন্ত সকলের লেখাপড়া শেখাটা যে একেবারে মৌলিক প্রয়োজন, ‘বেসিক নিড’, তার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করাটা যে সরকারের আবশ্যিক কর্তব্য, এটাই বোধ হয় এখন আর ভাবা হচ্ছে না।
সুকান্ত: এবং এই প্রয়োজনটা তো কেবল আমার নিজের জন্য নয়, প্রত্যেককে শিক্ষিত করে তোলাটা সকলের জন্য, গোটা সমাজের জন্যই প্রয়োজনীয়। যাঁরা ভাবছেন নিজের ছেলেমেয়েকে ভাল করে লেখাপড়া শিখিয়ে দিলেই তার ভবিষ্যৎ পাকাপোক্ত হয়ে যাবে, তাঁরাও মস্ত ভুল করছেন। শিক্ষাদীক্ষার যদি এই হাল চলতে থাকে, অর্থনীতির অবস্থা যদি এমনটাই দাঁড়ায়, তা হলে আজ থেকে দশ বছর বাদে কী হবে? আমার ছেলেমেয়েকে আমি পয়সাকড়ি দিয়ে যতই লেখাপড়া শেখাই, তারা তখন কী করবে? কতটুকু কাজের সুযোগ পাবে? কী সমাজেই বা বাস করবে? রাস্তায় বেরিয়ে নিশ্চিন্তে হাঁটতে পারবে?
আর একটা কথা আমার মনে হয়। সেটা একেবারে প্রাথমিক একটা কাজের কথা। আমাদের যে শিক্ষাব্যবস্থাটা আছে, সেটাকেই আর একটু সুষ্ঠু ভাবে চালানোর জন্য কী দরকার, সেটাও আমরা জানি না। মানে, কোন চাকাটা নড়বড় করছে, কোন স্ক্রুগুলো ঢিলে হয়ে আছে, কোথায় জং ধরেছে, এগুলো তো আগে সামগ্রিক ভাবে জানতে হবে। তার জন্য প্রথমেই পুরো ব্যবস্থাটার একটা সমীক্ষা দরকার। স্কুলে বিশেষ করে, কিন্তু উচ্চশিক্ষার স্তরেও। ক’টা প্রতিষ্ঠান আছে, কোথায় কত ছাত্রছাত্রী, কত শিক্ষকশিক্ষিকা, এবং তার পাশাপাশি, অমুক বিষয়, অমুক পাঠক্রম পড়াতে গেলে ন্যূনতম কত শিক্ষক দরকার, সেই অনুসারে যথেষ্ট সংখ্যায় শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে কি না, তার তুলনায় কোথায় শিক্ষকের সংখ্যা কত কম, এই সমস্ত হিসাব হাতের কাছে থাকা চাই। এবং না থাকার কোনও সঙ্গত কারণই নেই।
কুমার: আপনার পরামর্শে ‘শিক্ষা আলোচনা’ গোষ্ঠীর উদ্যোগে বেশ কিছু প্রাথমিক স্কুলের জন্য এই হিসাবটাই করা হয়েছিল। এবং তাতেই তো দেখা গিয়েছিল যে, আমাদের স্কুলগুলোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটা বিরাট ঘাটতি আছে। ২০১৮ সালের হিসাবে এক-একটা স্কুলে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৩০০০ থেকে ৬৯০০০ টাকা। এটা একেবারে ন্যূনতম প্রয়োজনের ভিত্তিতে করা হিসাব।
সুকান্ত: এটাই তো সমস্ত ক্ষেত্রের জন্য জানা দরকার। সম্প্রতি দেখলাম, ২০১৬-র পরে যত শিক্ষকদের চাকরি হয়েছে তাঁদের ব্যাপারে রাজ্য সরকার বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়েছেন। এটা তো, বোঝাই যায়, দুর্নীতির নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে করা হচ্ছে। তা হোক, কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার গোটা ছবিটা জানার প্রয়োজন তো আরও অনেক বেশি। বস্তুত, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে অনেক কিছু হচ্ছে, সে সব অন্য কথা, কিন্তু এই ডামাডোলে, এবং সব কিছু মিলিয়ে, শিক্ষার যে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, ছেলেমেয়েরা যে লেখাপড়া শিখতে পারছে না, এটা নিয়ে কিন্তু বিশেষ কোনও কথা নেই, সংবাদমাধ্যমেও নয়, লোকজনের ভিতরেও আলোচনা নেই, রাজনৈতিক দলগুলোরও এ নিয়ে তেমন কোনও বক্তব্য শোনা যাচ্ছে না।
এবং যেখানে যেটুকু আলোচনা হচ্ছে, সেটাও অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ানো বই কিছু নয়। দু’এক বার শোনা গেল, সব তথ্য জানার জন্য বিকাশ ভবন থেকে খোঁজখবর করা হচ্ছে, স্কুলে স্কুলে জানতে চাওয়া হচ্ছে। এই একুশ শতকের কম্পিউটার নেটওয়ার্কের যুগে এ তো খুব অদ্ভুত ব্যাপার। এই যে বলা হচ্ছে, এখানে আড়াইশো লোকের চাকরি হল, ওখানে তিন হাজার লোকের চাকরি গেল, এই অঙ্কগুলো থেকে কোনও সামগ্রিক হিসাব রাখা অসম্ভব। গত বছরের শেষের দিকেও শিক্ষামন্ত্রী বিধানসভায় যে হিসাব দিয়েছিলেন, তাতে দেখা যায়, যত লোক চাকরির দাবি নিয়ে বছরের পর বছর রাস্তায় বসে রয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকের চাকরি হয়ে যায়— দুর্নীতির কারণে কারও চাকরি না গেলেও সেটা সম্ভব। বিশেষত প্রাথমিক এবং উচ্চতর প্রাথমিক স্তরে।
অনির্বাণ: এখানে অর্থের অভাব একটা সমস্যা হতে পারে, কিন্তু তা হলে সেটাও তো সরকারের পরিষ্কার করে বলা দরকার যে, এত শিক্ষক আমাদের দরকার, অন্যান্য সম্পদেরও এই ঘাটতি আছে, কিন্তু টাকা নেই। সেটা পরিষ্কার হলে তখন কী ভাবে টাকার জোগাড় করা যাবে তা নিয়ে ভাবা যায়। দরকার হলে কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপ দেওয়া যায়, সব দল মিলে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থে দিল্লিতে দরবার করা যায়, কিন্তু তার কোনও রকম চিন্তাভাবনাই নেই।
কুমার: আমাদের শিক্ষা প্রশাসনের পুরো ব্যাপারটাই একেবারে দিশাহারা হয়ে গিয়েছে। তবে ইদানীং নানা জায়গায় কথা বলে মনে হচ্ছে, অন্তত কিছু মানুষের মধ্যে একটা ধারণা জোরদার হয়েছে যে, যা করার আমাদের নিজেদেরই করতে হবে। সুতরাং এখন একটা উদ্যোগ শুরু করা গেলে তার সুফল মিলতেই পারে। সরকারি স্কুল ব্যবস্থা, শিক্ষকদের একটা বড় অংশ, সমাজের জন্য কিছু করতে চান এমন অনেক তরুণতরুণী, সব মিলিয়ে এখনও আমাদের যে বিরাট সম্পদ আছে, সেটা সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার এবং বলা দরকার যে, এই সম্পদ কাজে লাগালে আমরা এই জায়গায় যেতে পারি। আবার, আপনি একটা ব্যাপারে বার বার সাবধান করে আসছেন, লোকেদের নিজেদের করে নেওয়ার সুযোগ নিয়ে সরকার যেন তার নিজের দায়িত্বটা সযত্নে এড়িয়ে যেতে না পারে। এই সতর্কতাটাও বিশেষ ভাবে জরুরি। সরকারকে তার কাজটা করতে বাধ্য করাটাও সমাজের সচেতন লোকেদের নিজেদের কাজ, খুব বড় কাজ।
সুকান্ত: এই প্রসঙ্গেই বলি, গত কিছু দিনে আলাদা আলাদা ভাবে বেশ কয়েক জন দায়িত্বশীল ওয়াকিবহাল মানুষের মুখে শুনেছি যে, একটা কিছু করা দরকার, আর এ ভাবে চলতে পারে না, এখনই যদি কিছু একটা না করা যায়, তা হলে এর পরে আর কোনও উপায়ই থাকবে না। আমার মনে হয়, যার যেখানে যে ভাবে সম্ভব এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা দরকার, যাতে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় যে বিরাট ঘাটতি তৈরি হয়েছে, সেটা পূরণ করা যায়। সরকারের উপর চাপ দেওয়া তো নিশ্চয়ই দরকার, কিন্তু শুধু সরকারিব্যবস্থা দিয়ে ঘাটতি পূরণ হবে না। ইতস্তত কিছু কিছু কাজ হচ্ছে, কিন্তু এটা অনেক বড় করে করবার প্রয়োজন আছে এবং সুযোগ আছে। এবং এক জায়গায় একটা উদ্যোগ শুরু হলে, তার খবরটা আরও অনেক জায়গায় পৌঁছে দিতে পারলে হয়তো ব্যাপারটা অনেকটা জোর পেতে পারে। তাতে সরকারের উপরে চাপটাও বাড়তে পারে। এটা আসলে একটা সামাজিক আন্দোলনের প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy