Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Lok Sabha Election 2024

কমিশন যদি কুলুপ আঁটে

পাঁচ দফা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে, সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠেছে কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে। শাসক দলকে বিভিন্ন সময়ে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে, এ কথা ইতিমধ্যেই চালু।

—ফাইল চিত্র।

সুমন সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৪ ০৮:৪২
Share: Save:

ভারতের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করেন না, কিন্তু তিনি সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকেন, নানা সাংবাদিককে। সেই সাক্ষাৎকার প্রচারিত, প্রকাশিত হয়, বহু মানুষ তা শোনেন, পড়েন। এমনই এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারতের নির্বাচন কমিশন ও ভারতীয় নির্বাচনী ব্যবস্থা একটি শক্তপোক্ত ব্যবস্থাপনা, তাকে সহজে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, বা কারও ব্যক্তিগত ইচ্ছায় ওই সংস্থা কাজ করে না। এ বারের নির্বাচনে আরও একটি বিষয় দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী দেশ-বিদেশের বেশ কিছু মানুষ এসেছেন ভারতের নির্বাচন দেখতে। তাঁর উদ্দেশ্য বিশ্বে এটা প্রমাণ করা, ভারতের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন কী পরিমাণ স্বচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে। কিন্তু সত্যিই কি এ বারের নির্বাচনে স্বচ্ছতা আর নিরপেক্ষতা আছে?

পাঁচ দফা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে, সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠেছে কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে। শাসক দলকে বিভিন্ন সময়ে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে, এ কথা ইতিমধ্যেই চালু। বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বারংবার অভিযোগ করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনে, কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (ছবিতে বাঁ দিকে)। প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার, টি এন শেষনের একটি বক্তব্যকে অসংখ্য পোস্টকার্ডে লিখে, নির্বাচন কমিশনের দিল্লির দফতরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনও ভাবেই কমিশনের নিদ্রাভঙ্গ করা যায়নি। তাঁদের আর কোনও ভাবেই বোঝানো যাচ্ছে না যে তারা সরকারের অধীন কোনও সংস্থা নয়, সরকারকে বাঁচানোর চেষ্টার বদলে তাদের উচিত ভারতীয় গণতন্ত্রকে বাঁচানো।

নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে বেশি অস্বচ্ছতা যে ক্ষেত্রে দেখাচ্ছে তা হল, নির্বাচনে কত মানুষ ভোট দিয়েছেন সেই তথ্য প্রকাশ। একে তো বহু সময় নিচ্ছে, যখন প্রাথমিক ভাবে তা জানিয়েছে, সে তথ্যও অসম্পূর্ণ। প্রথমে তারা তথ্য দিয়েছিল রাজ্যভিত্তিক; যে ক’টি সংসদীয় আসনে ভোট হয়েছে তাতে শতাংশ হিসেবে কত ভোট পড়েছে, সেই হিসাবে। বলা হল এই হিসাব আনুমানিক। তার কিছু দিন পরে তারা আরও একটি তথ্য দিল, সেখানে প্রতিটি রাজ্যের গড় ভোট বেড়ে গেল প্রায় ৫ থেকে ৬ শতাংশ। আবারও বিরোধী দলগুলো এবং বেশ কিছু সাংবাদিক প্রশ্ন তুললেন, কেন নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ তথ্য দিচ্ছে না। যদিও শতাংশের হিসাব দেখে রাজ্যভিত্তিক অঙ্কে পৌঁছনো সহজ, কিন্তু তা তো নির্বাচন কমিশনের কাজ এবং দায়িত্ব, তারা এই বিষয়ে এত গড়িমসি করছে কেন?

বেশ কিছু দিন কেটে যাওয়ার পরে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন রাজ্যব্যাপী ভোটার অংশগ্রহণের তথ্য প্রকাশ করেছে। এ বার অনেক রাজ্যে দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক তথ্যের সঙ্গে পরের তথ্যের প্রচুর তফাত। দেখা গেছে, শুধু তামিলনাডুতেই প্রায় ৪৬ লক্ষ ভোটার বেড়েছে। বাংলার ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি প্রায় ২৪ লক্ষ। রাজনৈতিক দলগুলো এই নিয়ে কথা বললেও, কোন প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করবে, তা তৃণমূল কংগ্রেসের গত বারের সাংসদ ও এ বারের কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের প্রার্থী মহুয়া মৈত্র ছাড়া কেউ দেখাতে পারেননি। প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি এই পদ্ধতি অনুসরণ করে, তা হলেই ওই ভোটার সংখ্যায় গন্ডগোল আছে কি না তা বোঝা যাবে। একটি সংসদীয় ক্ষেত্রে সাতটি বিধানসভা থাকে, প্রতিটি বিধানসভায় বহু সংখ্যক ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থাকে। প্রাথমিক ভাবে, সাংগঠনিক ক্ষমতা অনুযায়ী সব রাজনৈতিক দল প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে তাদের নির্বাচনী এজেন্ট দেয়। তাঁদের কাজ শুধু অঞ্চলের ভোটারদের চেনাই নয়; ভোটগ্রহণ শেষে প্রিসাইডিং অফিসার সেই কেন্দ্রে মোট কত ভোট পড়েছে তা প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে জানিয়ে দিতে বাধ্য। তাঁরা সেটা দেন ফর্ম ১৭সি-র মাধ্যমে।

ধরা যাক, একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে এক হাজার ভোটার আছেন, দিনের শেষে দেখা গেল আটশো জন ভোট দিয়েছেন। এ ভাবে যদি প্রতিটি বুথের তথ্য একত্র করা যায়, তবে একটি সংসদীয় ক্ষেত্রে কত জন ভোট দিয়েছেন তা জানা সম্ভব। মহুয়া মৈত্র এই কাজটিই খুব নির্দিষ্ট ভাবে করে, তাঁর এক্স হ্যান্ডলে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেছেন, তারাও যেন খুব দ্রুত এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা করে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচন কমিশনকে সংসদীয় ক্ষেত্র অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা প্রকাশে বাধ্য করতে পারে, তা হলেই নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের তৈরি হওয়া অবিশ্বাস কাটানো সম্ভব।

এর পরেও অবশ্য আরও একটি তথ্য মেলানোর থাকে, যা হয় ইভিএমের ভোট গোনার সময়ে। ফর্ম ১৭সি-তে যে তথ্য পোলিং এজেন্টদের কাছে থাকে, তার সঙ্গে ইভিএমের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা মিলিয়ে দেখাই রাজনৈতিক দলগুলোর কাউন্টিং এজেন্টদের কাজ। একটি নির্বাচনী গণতন্ত্রে শুধু নির্বাচন কমিশনেরই দায়িত্ব থাকে না কিংবা শুধু শাসক দলের উপর দোষ চাপালেই হয় না, বিরোধী দল এবং সচেতন নাগরিকদেরও কিছু ভূমিকা থাকে। তাঁরা সেই দায়িত্ব পালন করলে তবেই একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ত্রুটিমুক্ত হতে পারে। শুধু পছন্দের প্রার্থী বা দলকে ভোট দেওয়াই একমাত্র কাজ নয়, ভারতের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে বিরোধীদেরও যথেষ্ট ভূমিকা আছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 PM Narendra Modi ECI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy