Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

প্রতি দিন নতুন বিপদ বাড়ছে

বিশ্বের খুব কম দেশই এখনও পর্যন্ত পিপিই কিট বর্জ্য নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আদিত্য ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২১ ০৪:৪৩
Share: Save:

গোটা বিশ্ব কোভিড সংক্রান্ত দূষণ নিয়ে বিপর্যস্ত। এ বিষয়ে বেশ কিছু গবেষণাপত্র ইতিমধ্যেই প্রকাশিত। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি মাসে বিশ্বে ১,২৯,০০ কোটি মাস্ক ও ৬,৫০০ কোটি গ্লাভস ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতি মিনিটে ৩০ লক্ষ মাস্ক বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে, যার ৭৫ শতাংশ যাচ্ছে মাটির নীচে, অথবা সমুদ্রে। মাস্কগুলো প্রায় সবই পলিপ্রপিলিন, পলিইথিলিন, পলিএস্টার ও পলিস্টাইরেন জাতীয় পলিহাইড্রোকার্বন দিয়ে তৈরি, যা মাটিতে ও জলে নির্গত করছে প্রচুর পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিকস। এই মাইক্রোপ্লাস্টিকস সম্পূর্ণ ভাবে পরিবেশে মিশে যেতে ৪৫০ বছর সময় লাগবে বলে অনুমান। কিন্তু তার আগে এই আণুবীক্ষণিক বিষ জলে-স্থলে ছড়িয়ে শুধু জীবজগতের অপূরণীয় ক্ষতিসাধনই করবে না, আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে মিশে নানাবিধ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাও তৈরি করতে পারে।

বিশ্বের খুব কম দেশই এখনও পর্যন্ত পিপিই কিট বর্জ্য নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে। ভারতে এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে তেমন উদ্যোগ করা হয়নি। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতে শুধু করোনা পরীক্ষাতেই দৈনিক ১৪.৫ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। আরও ১০১ টন বর্জ্য কোভিড চিকিৎসা সংক্রান্ত। মনে রাখতে হবে, এই তথ্য ২০২০ সালের, এই বছরে ঘটা দ্বিতীয় তরঙ্গের নয়।

গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মধ্যে দৈনিক গড় কোভিড সংক্রান্ত প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে সর্বপ্রথম মহারাষ্ট্র (১৮ টন)। তার পরে যথাক্রমে রয়েছে গুজরাত (১২ টন), দিল্লি (১১ টন) ও তামিলনাড়ু (১০ টন)। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে সাত নম্বরে (৬.৫ টন)। এই বছরের সম্পূর্ণ তথ্য এখনও প্রকাশিত হওয়ার সময় হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় তরঙ্গের বিশালতা আর ভয়াবহতা প্রথম তরঙ্গের প্রায় চার গুণ বেশি। তাই আশঙ্কা যে, এই বর্জ্যের আকার আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে ২০২১-এর শেষে।

এ তো গেল শুধুমাত্র কোভিড সংক্রান্ত বর্জ্যের কথা। অনলাইন কেনাকাটা আর খাবারের হোম ডেলিভারির হাত ধরে আরও বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক বর্জ্যের উৎপাদন বাড়ছে। সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান এখনও সামনে না এলেও প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে কিছুটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে। যেমন, তাইল্যান্ডের একটি গবেষণা জানাচ্ছে যে, সে দেশে কোভিডের কারণে দৈনিক প্লাস্টিক ব্যবহার ১৫০০ টন থেকে বেড়ে প্রায় ৬৩০০ টন হয়েছে। সিঙ্গাপুরে শুধুমাত্র খাবারের প্যাকেজিংয়ে ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে ১৩৩৪ টন প্লাস্টিক ব্যবহার হয়েছিল। আমাদের দেশেও, বিশেষত শহরাঞ্চলে, বাড়িতে খাবার ডেলিভারি যে গত বছর থেকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। হোম ডেলিভারির খাবারের প্যাকেজিং সাধারণ ভাবে প্লাস্টিক বা থার্মোকল দিয়েই হয়ে থাকে। কোভিডের প্রেক্ষিতে প্লাস্টিকের জলের বোতলের ব্যবহারও সারা দুনিয়াতেই বেড়েছে। ভারতও ব্যতিক্রম নয়। এ ধরনের প্লাস্টিক খুব স্বল্প পরিমাণেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য।

ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এর এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, বেশির ভাগ মানুষের বিশ্বাস যে, অতিমারি পরিস্থিতিতে এক বার মাত্র ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক অনেক নিরাপদ। তাই এর ব্যবহারের বিপুল বৃদ্ধি এখন অনিবার্য। ব্রিটেন, পর্তুগাল ও আমেরিকার বেশ কিছু জায়গায় এ ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহারের উপরে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।

ভারতের দুর্দশা এখানেই শেষ নয়। বিপুল সংখ্যক শবদাহের জন্য দিল্লি সরকার প্রায় ২০০টি বড় গাছ কাটার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে। সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রজেক্টে কাটা পড়েছে আরও ৬০টি প্রাচীন গাছ। প্রতিটি চিতায় প্রায় তিন-চার কুইন্টাল কাঠের প্রয়োজন হচ্ছে। শুধুমাত্র দিল্লিতেই ১০,০০০ কুইন্টাল কাঠের প্রয়োজন হয়েছে গত এক মাসে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাঠের বিশাল অভাব দেখা দিয়েছে, এবং মনে করা হচ্ছে কাঠ না পাওয়ার সমস্যার কারণেও নদীতে শবদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। বিভিন্ন কোভিড-কবরে স্থান অকুলান হওয়ার কারণে সাধারণ সমাধিস্থল মৃতদেহের সৎকারের জন্যে খুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। এ থেকে সাধারণ ভাবে দেশের গ্রামাঞ্চল বা ছোট শহরগুলোর পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা করা অসম্ভব নয়। যদিও আসল তথ্যের সিংহভাগই হয়তো সরকারি হিসাব বহির্ভূত।

কোভিড-এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দূষণ কী ভাবে আমাদের আরও ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন করছে— যার মধ্যে ভাইরাসের আরও সম্ভাব্য মিউটেশন থেকে পানীয় জল ও খাদ্যে মারাত্মক দূষণ, অনেক আশঙ্কাই রয়েছে— তার সম্যক ধারণা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন বিস্তর গবেষণা। সেই গবেষণায় এক ছাতার তলায় আনতে হবে বিজ্ঞানী, পরিসংখ্যানবিদ, চিকিৎসক থেকে শুরু করে সমাজবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের। সরকারের প্রত্যক্ষ উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কিন্তু এই বিপুল কর্মযজ্ঞ সম্ভব হয়ে উঠবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy