গ্রাফিক:- শৌভিক দেবনাথ।
আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে নানা স্মরণ হচ্ছে। আমাদের দেশভাগেরও এটা ৭৫ বছর। সে বিষয়েও স্মৃতি জাগরূক রাখতে হবে। দেশভাগের যন্ত্রণা আমাদের অসংখ্য পথে প্রভাবিত করেছে, সে কথা ভোলার নয়। বিশেষত, মনের ভিতর যে-সব জায়গায় আমরা ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছি, সে সব অনালোচিত দিক্ সম্পর্কে সচেতন হলে তবেই তো আবার সোজা হতে পারা যাবে।
দেশভাগ নিয়ে আলোচনা বাংলায় প্রথম দিকে একটু কমই ছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন, এটা সাময়িক একটা ব্যবস্থা মাত্র, অচিরেই সব মিটে যাবে। প্রথম দিকে পাসপোর্ট-ভিসার বন্দোবস্ত ছিল না। সীমানা পেরিয়ে অনায়াসে এদিক-ওদিক করা যেত। ওদিক থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত যে ট্রেন আসত-যেত, তা ১৯৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধ পর্যন্ত কার্যত সচল ছিল। পূর্ববঙ্গ-পূর্ব পাকিস্তানের বহু হিন্দু ভদ্রলোক কিছু আত্মীয়স্বজনকে কলকাতায় পাঠিয়ে দিলেও বেশ কিছু বছর নিজেরা ভিটেছাড়া হতে চাননি। বা বৃদ্ধ মা-বাবাকে ঠাঁইনাড়া করেননি। বা সম্পত্তি বিক্রিবাটা করেননি— এমন অজস্র কাহিনি আছে। ওদিক থেকে ব্যবসায়ী সাহা পরিবারগুলির অনেকেই বহু পরে এদিকে আসেন। নমঃশূদ্র-রাজবংশী চাষীরাও সহজে জমি ছাড়তে চাননি। এ দিকের মুসলমানও সহজে সব কিছু ছেড়ে ওদিকে যেতে চাননি (পড়ুন হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’ এবং আনিসুজ্জামানের ‘কাল নিরবধি’)। দুই তরফেই অনেকদিন পর্যন্ত ধারণা ছিল, কিছু একটা সমঝোতা অচিরেই হয়ে যাবে, পূর্বাবস্থা ফিরে আসবে! দেশভাগের পর ফজলুল হক সাহেব যে বন্ধুবান্ধব ও আড্ডার টানে কলকাতায় ফের ঘুরতে এসেছিলেন, তার মধ্যে একটা ভরসার গল্পও ছিল।
ভারতের পশ্চিম সীমান্তে দেশভাগ ও লোক-বিনিময় হয়েছিল রাতারাতি, প্রায় অস্ত্রোপচারের ভঙ্গিতে— চকিত, রক্তাক্ত, মর্মন্তুদ। সেই বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তু শিখ-হিন্দু পঞ্জাবি-সিন্ধি জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন তথা প্রতিস্থাপনও এপারে হয়েছিল দ্রুত। দিল্লির গা-ঘেঁষা সেই সব প্রকল্পে ভারত সরকারের অর্থসাহায্য ছিল অকুন্ঠ, উদ্যোগ-অভ্যস্ত শরণার্থীরা নিজেদের পায়ে তাড়াতাড়িই দাঁড়িয়ে যান। ও সব দিকে জনবসতির আপেক্ষিক কম ঘনত্বও পশ্চিমাঞ্চলে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে সহায়ক হয়। তুলনায় আমাদের পূর্বে লোক-বিনিময় হয় ধীর ও টানা রক্তক্ষরণের মতো, দফায় দফায়, চুঁইয়ে চুঁইয়ে— ভারত সরকারের পুনর্বাসন কর্তাদের অবিশ্বাস ও বিরক্তি উৎপাদন করে।
অচিরেই নেহরু চাইলেন, সংখ্যালঘুরা নিজ নিজ দেশে থেকে যান। ফলে পূর্ব সীমান্তের ধারাবাহিক অশ্রুপাতের অনিবার্য নির্মমতা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় যথার্থ সহমর্মিতা পায়নি। বিধান রায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনে অনেক কাজ করলেও পশ্চিমবঙ্গের অভিজাত মধ্যশ্রেণিও উদ্বাস্তু স্রোতে বিরক্ত ও শঙ্কিত ছিলেন। বিশেষ করে গোড়ার দিকে উদ্বাস্তুরা কম সহানভূতি পান, পরের দিকেও দলিতরা বিচার-বঞ্চিত থাকেন, দেশভাগের গুরুত্ব বুঝতে এ-দেশে কোথাও ভুল হয়ে যায়।
ক্রমে বোঝা গেল, ব্যবচ্ছেদ কোনও সাময়িক ব্যবস্থা নয়, এই কাঁটাতারের বেড়া চিরকালীন। পাসপোর্ট-ভিসা চালু হল, সীমানায় প্রহরা কড়া হল, বাংলার স্বর্গসম্ভব জলপথ অব্যবহারে রুদ্ধ হল, যশোহর রোডে যশোহর যাওয়া বন্ধ হল, রেলও শেষে থমকাল। উদ্বাস্তুর সংখ্যা ধীরে পর্বতপ্রমাণ হল, উচ্চবর্ণ-মধ্যবিত্তরা আত্মীয়গৃহ বা জবরদখল কলোনিতে ঘাঁটি গাড়লেন, নিম্নবর্ণ-নিম্নবিত্তরা ক্যাম্প হয়ে আন্দামান-দন্ডকারণ্যের পথে রওনা দিতে বাধ্য হলেন। ট্র্যাজেডির চরিত্র ধীরে পরিস্ফূট হল, মরিচঝাঁপি সেই ট্র্যাজেডির বর্ণবিন্যাস কালে কালে আরও প্রকাশ করল।
নবাবি আমলে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা মিলিয়ে ছিল মুঘল সুবা, ইংরেজ আমলেও বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ছিল আজকের উত্তরপ্রদেশের পূর্ব সীমান্ত থেকে বর্মামুলুকের ধার পর্যন্ত। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতা থেকে শাসিত হত পেশোয়ার থেকে রেঙ্গুন, সাম্রাজ্যসঙ্গী ভদ্রলোকও এই বিস্তীর্ণ ভূখন্ডে মধ্যবর্গে একচেটিয়া অধিকার নিয়ে প্রসারিত।
ক্রমে বহু প্রতিবেশী এলাকা বাংলা থেকে খসে গেল। ১৯১১ সালে রাজধানী গেল দিল্লিতে, ১৯১২ সালে বিহার ও ওড়িশা বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন, ১৯৪৭ সালে সেই সংক্ষিপ্ত বঙ্গভূমিরও দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ব পাকিস্তানে পর্যবসিত। বিংশ শতকের গোড়ায় বঙ্গীয় ভদ্রলোকের যে বিস্তৃত চারণভূমি ছিল, পঞ্চাশ বছরের মধ্যে তা গোষ্পদে পরিণত। তালপুকুরে তখন ঘটি ডোবে না। ইতিহাসের ন্যায়, কিন্তু বঙ্গীয় মধ্যবিত্ত শিক্ষিত চাকুরিজীবীর অর্থনীতিতে ও অহমিকায় দারুণ আঘাত।
বৃহত্তর ক্যানভাসে, সুজলা-সুফলা বঙ্গভূমির অধিকাংশ কৃষি সীমান্তের পূর্বে, তুলনায় শহরকেন্দ্রিক এবং জনবহুল পশ্চিমবঙ্গ খাদ্যহীন। ফলত খাদ্য আন্দোলনে উত্তাল। পাটের উৎপাদন পূর্বে, চটকল প্রায় সব পশ্চিমে, কাঁচামালের অভাবে দীর্ণ। কলকাতা বন্দর পশ্চাদ্ভূমি থেকে বঞ্চিত, কলকাতা মহানগর উদ্বাস্তুসঞ্চিত। উত্তরবঙ্গের সমাজচিত্রও উদ্বাস্তুস্রোতে নাড়া-খাওয়া। লুপ্তগৌরব ও হৃতশক্তি পশ্চিমবঙ্গ দিল্লিতে প্রভাব খাটাতে পারে না, কেন্দ্রীয় মাশুল সমীকরণ নীতি ইত্যাদিতে বাংলা আরও ধাক্কা খায়। উদ্বাস্তু সাংবাদিক রণজিৎ রায়ের ‘অ্যাগনি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল’ তার দলিল।
পশ্চিমবঙ্গীয় রাজনীতিতে ক্রমশ উদ্বাস্তু কলোনির বৈধতাসন্ধান এবং শরণার্থীদের ‘লিজহোল্ড’ পাট্টাকে ‘ফ্রিহোল্ড’ পাট্টায় পরিণত করার আন্দোলন প্রবল হল, পরবর্তী স্তরে নাগরিকতার দাবিও উত্তুঙ্গতা পেল। যা ছিল গোড়ায় অসংগঠিত খন্ড-ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তুদের কলোনি-ওয়াড়ি বাঁচার লড়াই, তা সংগঠিত আন্দোলনে হয়ে দাঁড়াল বঙ্গীয় জনজীবনের চালিকাশক্তি। প্রফুল্ল চক্রবর্তী তাঁর প্রভাবশালী ‘প্রান্তিক মানব’-এ দেখান, উদ্বাস্তুরাই বাংলায় বাম রাজনীতির ভ্যানগার্ড, উদ্বাস্তু পরিচালনাতেই বাংলা বাম হল।
কিন্তু এই সব নিয়ে আলোচনা হলেও দেশভাগের তথা বাস্তুচ্যুতির কিছু সুদূরপ্রসারী অন্দরশায়ী মানসিক-সাংস্কৃতিক প্রভাব বোধহয় অধরাই থেকে গিয়েছে। উদ্বাস্তুদের মধ্যে চলচ্চিত্রে ঋত্বিক ঘটকরা এবং কথাসাহিত্যে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়-প্রফুল্ল রায়রা তাঁদের ছিন্নমূল স্মৃতিসত্তার ছবি এঁকেছেন। ক্যাম্পের দলিত কাহিনি লিখেছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী। দুঃখিনী নারীর ছবি আছে সুনন্দা শিকদারে, অধীর বিশ্বাস ব্যাকুলতাময়। কেউ কেউ উদ্বাস্তু পরিচয় নিয়ে লিখতে সঙ্কুচিত হয়েছেন, কেউ কেউ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পুরাতন পাপকে স্মরণ করে নিম্নবর্গীয় চর্চায় উত্তীর্ণ হতে চেয়েছেন। কেউ আঁকড়ে ধরেছেন ঘনাদা-টেনিদার মতো অতীতচারী আকাশছোঁয়া ফ্যান্টাসিকে, কেউ মুক্তি খুঁজেছেন সাম্যদর্শনে। কিন্তু প্রাত্যহিক আচরণ ও বাগ্বিধিতে নিজেদের অজান্তে আপন রক্তাক্ত ক্রোধে নিজেদের ভাঙতে ভাঙতে প্রজন্মের পর প্রজন্মে আমরা কতদূর তির্যক ও বঙ্কিম হয়ে গেলাম, সে নিয়ে সজাগ চৈতন্যচর্চা জরুরি।
দেশভাগের ক্ষত যে সমাজ-শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে আমাদের জীবনবোধ ও ব্যবহারবিধিকে, আমাদের শব্দ ব্যবহার ও আবেগভঙ্গিকে আমূল বদলে দিয়েছে, তার কিছু বিক্ষিপ্ত বিধৃতি আছে সাহিত্যে। পূর্ববঙ্গের ভিটে থেকে উৎখাত হয়ে এপারে কিছুকাল দমদমে উদ্বাস্তু কলোনির গা ঘেঁষে ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ‘অর্জুন’ তাঁর বিখ্যাত কলোনিভিত্তিক উপন্যাস। তাঁর একটা কবিতা এইরকম—
‘…আমরা সকলেই ভাঙনের প্রবক্তা/ ধ্বংসেই আমাদের উল্লাস/ ঈশ্বর থেকে সুধীন্দ্রনাথ-বুদ্ধদেব বসুর ছন্দ পর্যন্ত আমরা ভাঙতে ভাঙতে এসেছি/ কৃষ্ণনগরের পুতুলের মতন আমরা ভেঙেছি বাবা ও মাকে/ প্রেমকে ভেঙেছি অতিরিক্ত শরীর মিশিয়ে/ শরীরকে ভেঙেছি আত্মহননের নেশায়/ দেশকে যারা ভেঙেছে আমরা মহানন্দে ভেঙেছি তাদের ভাবমূর্তি/ কাচের গ্লাস ভাঙার মতন সুমধুর শব্দে/ আমাদের পায়ের তলায় গুঁড়ো হয়েছে এক-একটা মূল্যবোধ…।’
‘স্মৃতির শহর ২০’ নামে এই কবিতায় ষাটের দশকের সেনেট হল ভাঙা নিয়ে লিখতে গিয়ে সুনীল স্মরণে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ওঁরা ওই সময় সবই ভাঙছিলেন। বিংশ শতকের ওই দশকে কাউন্টার কালচার, ভিয়েতনাম, হিপি আন্দোলন, হাংরি জেনারেশন, গিনসবার্গের কলকাতা ভ্রমণ, বিশ্বজোড়া ছাত্রবিদ্রোহ, নকশালবাড়ির বজ্রনির্ঘোষ এবং মনীষীদের মূর্তিভাঙার মধ্যে বাংলায় চারিয়ে যাচ্ছিল যে পিতৃমাতৃঘাতী ক্রোধ, তার তলায় অন্তঃসলিলা ফল্গুনদীর মতো কি আসলে কাজ করেনি ওই দেশভাঙার, ভিটেছাড়ার, আমূল দুঃখ?
সুনীল বোধহয় সেই হদিশই দিয়েছেন। সমস্ত শ্রদ্ধা, শৃঙ্খলা, ব্যাকরণ, ছন্দ ও নিয়ম ভাঙার প্রস্তাব নিহিত ছিল বাধ্যতামূলক দেশত্যাগে। শরীর, মন সবই তো ভেঙে যায়, মরে যায়, বাধ্যতার পরবাসে। যেমন বলেছেন উদ্বাস্তু শঙ্খ ঘোষ, বাল্যের নদীকে স্মরণ করে—
‘এখনও কীর্তনখোলা? এখনও কি আছে সেই নাম? …আমার শরীর শুধু জেগে ওঠে তার কাছে গেলে।’
আত্মার মৃত্যু কি জন্ম দেয় তুমুল ঘৃণার? বাস্তুচ্যুত অশোক মিত্র যে বারবার শ্রেণিঘৃণার কথা বলতেন এবং জানান দিতেন, যে তিনি ভদ্রলোক নন, কমিউনিস্ট — তার মধ্যেও আমি ওই বাল্যক্রোড় বিচ্ছেদবেদনাকে আবিষ্কার করি। সর্বস্বচ্যুত উদ্বাস্তুর জমি জবরদখল, জমিদারের জমিতে, সরকারের এস্টেটে, নদীর তীরে, ক্যানালের ধারে, রাস্তার পাশে ও ফুটপাথের উপর, নির্ধনের কলোনি স্থাপন প্রভৃতি বৈপ্লবিক কাজ ধীরে ধীরে নেহাতই এলাকায় উপনিবেশ পত্তনে পরিণত হয়। কিন্তু সেই দখলদারির আদি নৈতিক বা ঐতিহাসিক সূত্র-সংযোগটিও হয়তো পাওয়া যাবে ’৪৬-’৪৭ সালের হানাহানি-দেশভাগে। পূর্ববঙ্গের আরেক ভিটেছাড়া কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী অন্তত এই রকম একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁর ‘ভাগাভাগির খেলা’ কবিতায়। ২০০৭ সালে তাঁর মনে পড়ে যায় দেশভাগের কথা—
‘ভাগাভাগির খেলা, সাতচল্লিশে দেশভাগ। তখন / ঘরছাড়া হয়ে/ রাতারাতি যাঁরা সীমানা পেরিয়ে / আশ্রয়-শিবিরে এসে উঠেছিলেন, / তাঁদের অনেকেই আজ আর / বেঁচে নেই। / যাঁরা মরেননি, তাঁরা এখন আবার / নতুন করে দেখতে পাচ্ছেন / ভাগাভাগির খেলা।
‘এ-খেলা আপাতত এলাকা ভাগাভাগির। এবং / নতুন করে ফের / মানুষকে তার ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করে / আশ্রয়-শিবিরে ঢুকিয়ে দেবার। / তুমি তো আমার লোক নও, তা হলে / এখানে তোমার জায়গা হবে না, / ভাগো। / এ-খেলা যেমন কেশপুরে আর গড়বেতায় চলেছিল, এখন / তেমনি চলছে খেজুরি আর নন্দীগ্রামে।
‘মরিনি বলেই এই খেলাটা আমিও দেখে যাচ্ছি। / দেখছি আর ভাবছি যে, / সাতচল্লিশ থেকেই বোধহয় ভাগাভাগি-খেলার এই / নেশাটা আমাদের রক্তের মধ্যে ঢুকে গেছে। / দেখছি আর ভাবছি যে, / ভাগের মা গঙ্গা না-ই পাক, এই ভাগাভাগির / নেশাই আমাদের গঙ্গাযাত্রা করিয়ে ছাড়বে।’
সুনীল বলছেন, আমাদের ভাঙনের নেশা দেশভাগজনিত। শঙ্খ বলছেন, আমাদের আত্মার মৃত্যুবোধ দেশভাগজনিত। নীরেন্দ্রনাথ বলছেন, আমাদের ভাগাভাগির নেশাও দেশভাগজনিত। আমাদের বাক্যে-ব্যবহারে-আচরণে-আবেগপ্রকাশে দেশভাগের নিত্যকার এইসব ধারাবাহিক প্রভাব নিয়ে সচেতন হওয়া ভাল নয়? একদা আপন-আপন বাড়ি, জমি, গ্রাম, গোষ্ঠী, কৌম সমাজ থেকে আমাদের উৎপাটিত করা হয়েছিল বলেই কি আমরা এখন মাঝে মাঝে একটু বেশি শ্রদ্ধাহীন, বাচিক ও কায়িক হিংসার একটু বেশি বশবর্তী ও অন্যের জমিজিরেত-জীবনযাপনের প্রতি একটু বেশি ক্রোধদৃষ্টিপরায়ণ হয়ে পড়ি?
ভাবা দরকার, শোধরানোও দরকার।
(লেখক রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব, বাংলা ভাষার আলোচক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy