অজিত ডোভাল। —ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ সঙ্কট, দীর্ঘায়িত হচ্ছে রোজ। গত সাড়ে পাঁচ দশকে এত প্রলম্বিত সঙ্কট ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আসেনি। সঙ্কটের আয়ুষ্কাল আরও বাড়ুক বা তা গভীরতর হোক, কোনও পক্ষই চায় না সম্ভবত। ভারত উদ্বেগে রয়েছে, উদ্বেগে রয়েছে চিনও। বস্তুত উদ্বেগ নিয়ে ডোকলামের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্বই। এই রকম এক বেনজির প্রেক্ষাপটে চিন সফরে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। আশা-আশঙ্কার অসীম দোলাচল তাই অজিত ডোভালের এই চিন সফরকে ঘিরে।
ফলাফল কী হবে, বলা শক্ত। কিন্তু সূচক হিসেবে ডোভালের এই চিন সফর নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। সঙ্ঘাত যে পর্যায়েই পৌঁছক, আলোচনার পথটা কখনও রুদ্ধ হওয়া উচিত নয়, কূটনৈতিক সড়কটায় কোনও অবরোধ কাম্য নয়। সভ্যতায় কখনও সঙ্ঘাত শেষ কথা বলতে পারে না। শেষ কথা বলতে হবে সহাবস্থানকেই। সেই সহাবস্থানের স্বার্থেই কূটনৈতিক সংযোগটা জরুরি। এই মুহূর্তে তাই অজিত ডোভালের চিন সফরের দিকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকিয়ে থাকা উচিত দুই দেশেরই।
অজিত ডোভালের এই চিন সফর কিন্তু কোনও দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচি নয়। ডোকলাম সঙ্কটের প্রেক্ষিতে বা তার নিরসনকল্পে এই সফর আয়োজিত হয়েছে, তেমনও নয়। ব্রিকস দেশগুলির শিখর সম্মেলন এ বছরই আয়োজিত হবে চিনে। তার আগে ব্রিকস দেশগুলির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিলই। ডোকলামে সঙ্কট ঘনিয়ে ওঠার অনেক আগেই এই বৈঠক নির্ধারিত হয়েছিল। সেই কর্মসূচিতেই যোগ দিতেই চিন সফরে ডোভাল। তা সত্ত্বেও কিন্তু আশান্বিত হওয়ার অবকাশ রয়েছে। কারণ, চলতি সঙ্কটকে পটভূমিকায় রেখে ভারতের কোনও কূটনেতিক দূত যদি চিন সফর করেন আর সেই ভারতীয় দূতের নাম যদি হয় অজিত ডোভাল, তা হলে ব্রিস কর্মসূচির ফাঁকেও যে ভারত-চিনের মধ্যে আলাদা করে কথা হওয়ার সব সম্ভাবনাই তৈরি হয়, সে নিয়ে সংশয় থাকা উচিত নয়।
দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে ঘনিয়ে ওঠা সীমান্ত সঙ্কট এবং তার প্রেক্ষিতে সামরিক সঙ্ঘাতের আশঙ্কা— আবার বলছি, উদ্বিগ্ন কিন্তু গোটা বিশ্ব। কূটনৈতিক পথেই রফাসূত্র আসুক, চাইছে আন্তর্জাতিক মহল। অজিত ডোভালের চিন সফরের দিকে তাই নজর থাকছে গোটা পৃথিবীরই। এই সফরেই মুশকিল আসান করে দেশে ফিরবেন ডোভাল, তেমন আশা না রাখাই ভাল। কিন্তু সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ দুই মেরুতে পৌঁছে যাওয়া দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দূরত্ব ফের কমিয়ে আনার প্রক্রিয়াটার সূচনা যে তিনি করে আসতেই পারেন সে বিষয়ে দুই দেশকেই আশাবাদী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, গোটা পৃথিবী আজ আমাদের দিকেই তাকিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy