সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র, এমনকি যাঁহারা রূপে ভোলা উচিত নহে বলিয়া বক্তৃতা প্রদান করেন তাঁহারাও প্রবল রূপ দেখিলে কিঞ্চিৎ বিহ্বল হইয়া যান বলিয়া রটনা রহিয়াছে। উচ্চ প্রযুক্তি ও প্রকাণ্ড অর্থভাণ্ডারের বিশ্বকেন্দ্র যে ‘সিলিকন ভ্যালি’, অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো-র যে-এলাকায় ধনাঢ্য সংস্থা ও আধুনিক আবিষ্কারের তরঙ্গ ফুটিতেছে, সেই স্থানেও পুরুষেরা নাকি রূপবান ও যৌবনবান হওয়াকে এখন কর্মজীবনে উন্নতির আবশ্যিক শর্ত হিসাবে দেখিতেছেন। তাঁহাদের অনেকেই বহু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যৌবন ধরিয়া রাখিতে উৎসুক, যেমন বোটক্স বা লেজ়ার চিকিৎসা, অথবা ‘রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সি মাইক্রো-নিডলিং’, যাহার মাধ্যমে ত্বক হইয়া উঠে প্রাণবন্ত। গলার চামড়া বা চোখের তলার চামড়াও টানটান করিবার প্রাণপণ চেষ্টা চলিতেছে। স্বাস্থ্য ও মুখশ্রী দেখিয়া কাজের বিচার হইবে, তাহা এই সিলিকন ভ্যালিতেই হয়তো বিশ বৎসর পূর্বেও এক হাস্যকর ধারণা ছিল, কিন্তু এই যুগে বহিরঙ্গের প্রাধান্য ক্রমশ বাড়িতেছে এবং বিশেষত মধ্যবয়স্কেরা তরতরে যুবাদের দেখিয়া হীনম্মন্যতায় আক্রান্ত হইতেছেন। মধ্যবয়সে নিজের শরীর স্বাস্থ্য জীবন প্রেম লইয়া দীর্ঘশ্বাসের চল বহু দিনের, কিন্তু প্রবল প্রতিযোগিতার পাশ্চাত্য অঞ্চলটিতে এই ধারণা ছড়াইয়া পড়িতেছে যে এক জন কর্মীকে কেমন দেখিতে, তাহার উপর নির্ভর করিবে তাঁহাকে কী দায়িত্ব দেওয়া হইবে। অথচ এই অঞ্চলের কর্মীদেরই নব্বইয়ের দশকে চুলের বিশ্রী ছাঁট দিয়া চেনা যাইত। বহিরঙ্গের প্রতি অমনোযোগী কাজপাগল মানুষেরা এইখানে প্রকৃত কর্ম করিবেন ও তাহার দ্বারা পৃথিবীর ইঞ্জিনে অভিনব জ্বালানি সরবরাহ হইবে, ইহাই ছিল ইঁহাদের ভাবমূর্তি। আজ সেইখানে কম্পিউটারের সম্মুখে না ঝুঁকিয়া লোকে প্রসাধনী শল্যের সম্মুখে সমর্পিত হইয়া নিজের অঙ্গকে ঝকঝকে করিতেছেন, ইহা যুগের এক উদ্ভট লক্ষণ।
অবশ্য পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ কেহ বলিতে পারেন, এক দিক দিয়া ইহা সাম্যের সূচনা করিল। বারে বারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা বলিয়াছেন, তাঁহাদের কর্মনৈপুণ্য বিচার ও বেতনের পরিমাণ নির্ধারণ করা হইয়াছে তাঁহাদের রূপ ও সাজসজ্জা দেখিয়া। এই বার সেই বিকৃত ও একঝোঁকা দৃষ্টিভঙ্গি যদি পুরুষদের উপরেও সমান ভাবে নিক্ষিপ্ত হয়, তবে সকলকেই কেবল জামার ভাঁজ ও গালের রং লইয়া ব্যস্ত থাকিতে হইবে, আইনস্টাইনকেও ফিটফাট চুল না আঁচড়াইলে আপেক্ষিকতাবাদের সেমিনারে ঢুকিতে দেওয়া হইবে না। এই সাম্য অবশ্য কদাপি কাম্য নহে, একটি সমস্যা একটি বর্গকে পীড়িত করে বলিয়া অন্য বর্গের উপরেও তাহা চাপাইয়া দেওয়া কাজের কথা নহে। নৈতিক শুদ্ধতা লইয়া সমগ্র পৃথিবীতে যখন এত আন্দোলন, আলোচনা ও ফেসবুক পোস্ট বহিতেছে, তখন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকেন্দ্রে আস্তরণকে মূল্য দিয়া প্রতিভাকে উপেক্ষা করার সংস্কৃতি প্রশ্রয় পাইতে পারে না। কিন্তু আমেরিকাতেই পুরুষদের মধ্যে সিলিকন ভ্যালির বাহিরেও প্লাস্টিক সার্জারির সংখ্যা বাড়িতেছে, ১৯৯৭ হইতে ২০১৫ পর্যন্ত ইহার বৃদ্ধি ৩২৫%। বয়সের চিহ্নের বিরুদ্ধে পুরুষের যুদ্ধ প্রখর, ২০১৮-য় পাঁচ লক্ষ পুরুষ বোটক্স করাইয়াছেন, এক লক্ষ লইয়াছেন ফিলার ইঞ্জেকশন। ফলে, ‘রূপেই তোমায় ভুলাইব, ভালবাসা ও অন্যান্য ব্যাপারের নিকুচি করিয়াছে’ এই আধুনিক কাব্যের অপেক্ষায়, রোজগারোন্নতির পথে উন্মত্ত ধাবমান পুংজাতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy