Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
assam

অপূরণীয় 

প্রশ্ন উঠিবে, তৈলখনিতে দুর্ঘটনা তো অভাবনীয় নহে,  দুর্ঘটনা নিবারণের যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয় নাই কেন?  ২০০৫ সালে অয়েল ইন্ডিয়ারই ডিকম তৈলখনিতে গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করিতে ব্যর্থ  হইবার ফলে আগুন ধরিয়াছিল। পনেরো বৎসর পরে ফের সেই দুর্ঘটনাই ঘটিল।  ইহা কি প্রস্তুতির অভাব নহে?

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

অসমের তিনসুকিয়া জেলায় বাঘজান তৈলখনিতে যে ভয়ানক আগুন লাগিয়াছিল, দশ দিন পার করিয়াও তাহা নিবিল না। দুই জন কর্মী ও পাঁচ জন গ্রামবাসী প্রাণ হারাইয়াছেন, সাত হাজার গ্রামবাসী ঘর ছাড়িয়া শিবিরে বাস করিতেছেন, দগ্ধ হইয়াছে নিকটবর্তী অভয়ারণ্যের পশু-পক্ষী। এই দুর্ঘটনা কিছু গুরুতর প্রশ্নের সম্মুখের দাঁড় করাইয়াছে রাষ্ট্রকে। প্রথম প্রশ্নটি অবশ্যই শিল্পে নিরাপত্তার। ভাইজ্যাগে একটি পলিমার কারখানায় গ্যাস নির্গত হইবার ফলে এগারো জনের প্রাণহানি ঘটিয়াছিল ৭ মে, আর বাঘজানের তৈলখনিতে আগুন লাগিল ৯ জুন। এত কম ব্যবধানে দুই বৃহৎ শিল্প-দুর্ঘটনা কেবলই কি সমাপতন? ভারতে বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলি শিল্পের প্রয়োজনীয় সুরক্ষাব্যবস্থা এবং দুর্ঘটনা মোকাবিলার ব্যবস্থা বিষয়ে তৎপর নহে। ২৭ মে বাঘজানে গ্যাস নির্গত হইতে শুরু হইবার পরবর্তী ঘটনাক্রম তাহারই সাক্ষ্য দিতেছে। খনির ভারপ্রাপ্ত অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড ‘নবরত্ন’ বলিয়া পরিচিত নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অন্যতম, ইহা ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈল খননকারী সংস্থাও বটে। উত্তর অসমের বিস্তীর্ণ এলাকায় তৈল উত্তোলনের কাজে বহু দিন ধরিয়া নিযুক্ত। অথচ গ্যাস নিষ্ক্রমণ শুরু হইবার পরবর্তী চৌদ্দো দিনের মধ্যে সংস্থাটি তাহা বন্ধ করিতে পারিল না, কারণ তাহার জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ কিংবা প্রযুক্তি তাহার নাই। সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষজ্ঞদের আনিতে বিলম্ব হইয়াছে। প্রশ্ন উঠিবে, তৈলখনিতে দুর্ঘটনা তো অভাবনীয় নহে, দুর্ঘটনা নিবারণের যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয় নাই কেন? ২০০৫ সালে অয়েল ইন্ডিয়ারই ডিকম তৈলখনিতে গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করিতে ব্যর্থ হইবার ফলে আগুন ধরিয়াছিল। পনেরো বৎসর পরে ফের সেই দুর্ঘটনাই ঘটিল। ইহা কি প্রস্তুতির অভাব নহে?

দ্বিতীয় প্রশ্নটি প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষার ব্যর্থতায়। বাঘজানের নিকটেই ডিব্রু সাইখোয়া জাতীয় উদ্যান বেশ কিছু বিরল প্রজাতির প্রাণীর বাসভূমি। একটি বৃহৎ জলাশয়ও জীববৈচিত্রের কারণে সংরক্ষিত। সম্পূর্ণ এলাকাটি বিশ্বের ৩৫টি সর্বাধিক সংবেদনশীল প্রাণীবৈচিত্রময় অরণ্যের একটি। তৈলখনি হইতে চৌদ্দো দিন ধরিয়া নির্গত গ্যাস, এবং আগুন লাগিবার পর উদ্গত ধূম ও উত্তাপ এই অঞ্চলটির যে ক্ষতি করিল, তাহার পরিমাপ অসম্ভব। অরণ্য, তৃণভূমি, জলাভূমি আগুনের গ্রাসে গিয়াছে। জলাশয়ের উপরেও আগুন ছড়াইয়াছে, অগণিত মাছ, ব্যাঙের দেহ ভাসিতেছে, বিলুপ্তপ্রায় গাঙ্গেয় শুশুকের দেহও মিলিয়াছে। এই ক্ষতি কি অনিবার্য ছিল? জাতীয় বন্যপ্রাণী পরিষদের সভাপতি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। দূষণকারী শিল্প হইতে বন্যপ্রাণের সুরক্ষা ইহার প্রধান দায়িত্ব। অথচ পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ সুরক্ষার বিধিগুলি উপেক্ষিত হইয়াছে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কেহ কান দেয় নাই। বিরল প্রজাতির বিলুপ্তির অপূরণীয় ক্ষতি নিবারণের চেষ্টা হয় নাই। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, লকডাউন চলাকালীনই বেশ কিছু অভয়ারণ্যের নিকটে উন্নয়ন প্রকল্প শুরুর অনুমতি দিয়াছে কেন্দ্র। মোদী সরকারের এই মনোভাব উদ্বেগজনক। শিল্পস্থাপন, খনিজ উত্তোলন, উন্নয়ন প্রকল্পের রূপায়ণ সরকারের দায়িত্ব। প্রয়োজনীয়ও বটে। কিন্তু অভয়ারণ্য ধ্বংস হইবার মূল্যে, মানুষের প্রাণের মূল্যে তাহা করিতে হইবে কেন? নিরাপত্তা ও প্রকৃতি সংরক্ষণের বিধি মানিয়া শিল্প চালাইবার দৃষ্টান্ত তো বিশ্বে কম নাই!

অন্য বিষয়গুলি:

Assan Tinsukia Fire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy