অনেক দিন ধরিয়া তাল ঠুকিতেছিলেন, করোনার সুযোগ লইয়া এইচ-১বি জাতীয় ভিসায় লাগাম পরাইলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। লাগামের কার্যকাল আপাতত ডিসেম্বর পর্যন্ত, কিন্তু এই জাতীয় সিদ্ধান্তের মেয়াদ রাজনীতির হাওয়া বুঝিয়া বর্ধিত হওয়াই সাধারণ দস্তুর। আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন যদি জিতিয়াও যান, তাহা হইলেও এই বিপুল অতিজাতীয়তাবাদের আবেগ ঠেলিয়া অভিবাসীদের জন্য বন্ধ দ্বার নূতন করিয়া খোলা তাঁহার পক্ষে সহজ হইবে না। যেহেতু মার্কিন দেশে এই বিশেষ ভিসাটির সিংহভাগ ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের জন্যই বরাদ্দ থাকে, এ দেশের লক্ষাধিক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী ও আমেরিকাবাসী ভারতীয় পরিবারে এখন গভীর দুশ্চিন্তার মেঘ। করোনার কারণে দেশে ফিরিয়া আসিয়া অনেকেই এই কারণে ফিরিতে পারিতেছেন না, ফলে পরিবার হইতে বিচ্ছিন্ন হইবার সঙ্কটও তীব্র।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে রাজনীতি স্পষ্ট, কিন্তু মার্কিন অর্থনীতির ইহাতে মুখোজ্জ্বল হইবে কি না, তাহাতে সংশয় আছে। ভোট আসিতেছে, করোনার অভিঘাত তীব্র হইতে তীব্রতর হইতেছে। টালমাটাল পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁহার ভোটব্যাঙ্ক গুছাইবার মরিয়া প্রয়াস করিতেছেন। ঐতিহ্যগত ভাবেই রক্ষণশীল মার্কিন মানসে এই জাতীয় ভিসার প্রতি বিরাগ সযত্নে লালিত। তাঁহাদের বিশ্বাস, বহিরাগতরাই যত নষ্টের মূল, সে ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ হউক অথবা মেক্সিকোর কর্মী। বাস্তব যাহাই বলুক, ‘আত্মনির্ভর’ হইবার মায়ামৃগ যে ভোট আকর্ষণ করিবার ক্ষমতা রাখে, সে কথা বিলক্ষণ জানা। কিন্তু রাজনীতি চত্বরের বাহিরে মার্কিন শিল্পক্ষেত্রের প্রতিক্রিয়া কেমন? এই সিদ্ধান্তে হতাশা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করিয়াছেন অনেকেই। গুগলের কর্ণধার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উষ্মা প্রকাশ করিয়াছেন— মনে করাইয়াছেন যে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর শিল্পে আজও আমেরিকার বিপুল সম্পদ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা মেধাবী অভিবাসী প্রযুক্তিকর্মীদের। তাঁহাদের অনেকের মতেই, এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে ভারতীয় সংস্থার ক্ষতি অপেক্ষা আমেরিকার ব্যবসায়িক ক্ষতি বেশি। এই কর্মীরা ভারতীয় বা মার্কিন সংস্থায় কর্মরত হইয়া তুলনায় কম বেতনে উচ্চমেধার প্রযুক্তি প্রদান করিতেন। চাহিদা ও জোগানে অসাম্যের কারণে মার্কিন নাগরিকদের নিয়োগ অনেক খরচসাপেক্ষ। এখনও সেই নাগরিকদের জন্য কাজের সুযোগ খুলিবে, না কি তাহা মরীচিকাই থাকিয়া যাইবে, ইহাও বড় প্রশ্ন, কেননা অতঃপর আউটসোর্সিং-এর প্রবণতা বাড়িবার সমূহ সম্ভাবনা। যে সংস্থা চাহিত তাহাদের কাজ সে দেশেই হউক, তাহারও মানিয়া লইবে দূর হইতে কাজের শর্ত। করোনার প্রভাবে অনেক শিল্পেই মানসিকতায় বদল আসিয়াছে, তথ্যপ্রযুক্তি তাহার অন্যতম। এক দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তার মোকাবিলায় দূর হইতে কাজ আজ নব-স্বাভাবিক। তাই আমেরিকার মাটিতে বসিয়াই কাজ করিতে হইবে এমন প্রত্যাশার অবসান ঘটিলে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে হয়তো তেমন বড় আঘাত আসিবে না।
ভারত সরকারের পক্ষ হইতে বিশদ প্রতিক্রিয়া এখনও না জানানো হইলেও হতাশার সুরটি ইতিমধ্যেই ব্যক্ত। দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সংযোগে এই পদক্ষেপ আঘাতসম— বলা হইতেছে। দুর্ভাগ্য ছা়ড়া আর কী। ‘অব কি বার ট্রাম্প সরকার’ গড়িতে সহায়তার হাত বাড়াইয়াছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, চিনের উষ্মা সামলাইতে হইতেছে তাঁহাকে, এমন সময় মার্কিন ভিসানীতিতে যদি দেশের স্বার্থ একটুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, হতাশারই কথা। অর্থনীতির পরিসরে রক্ষণশীল সঙ্কীর্ণস্বার্থ জাতীয়তাবাদী রাজনীতির এমন অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনাবিহীন হিস্টিরিয়া এখন দেশে দেশে দস্তুর। ইহাতে অর্থনীতির লাভ-ক্ষতি কী হইবে, তাহা পরের প্রশ্ন। কিন্তু সমাজ ও রাজনীতির মঙ্গল হইবে বলিয়া মনে হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy