ছবি এএফপি।
সপ্তাহে দুই দিন লকডাউন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিদ্ধান্তটি কি ভারতে অতিমারির বিরুদ্ধে যুদ্ধের নূতন পর্বে প্রথম ধাপ হইয়া থাকিবে? অতিমারি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের হিসাব বলিতেছে, ভারতে সংক্রমণ তীব্রতর স্তরে পৌঁছাইতেছে। রাজ্যে ইতিমধ্যেই গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হইয়াছে বলিয়া সরকার জানাইয়া দিয়াছে। রাজ্যের জনবহুল জেলাগুলিতে সংক্রমণ অতি দ্রুত বর্ধমান। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙা অতি জরুরি। তাহার পথ লকডাউন। কিন্তু, অর্থনীতির হাল বলিতেছে, টানা লকডাউনের সিদ্ধান্তটি আক্ষরিক অর্থেই মারাত্মক হইতে পারে। আরও এক দফা স্তব্ধতার ধাক্কা সামলাইবার সাধ্য অর্থব্যবস্থার নাই। অতএব, একটি মধ্যপন্থা প্রয়োজন। সপ্তাহে দুই দিন লকডাউন তেমনই একটি পথ। বিশেষজ্ঞদের হিসাব বলিতেছে, সপ্তাহের মাঝে দুই দিন লকডাউন হইলেও সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙিবে, রোগ নিয়ন্ত্রণে আসিবে। বলা প্রয়োজন, এই লকডাউন কতখানি ফলপ্রসূ হইবে, এখনই তাহার পূর্বাভাস করা মুশকিল। কিন্তু, পন্থাটি যে ভিত্তিহীন নহে, শাসকের খামখেয়াল বা থালা-বাটি বাজাইবার ন্যায় দেখানেপনা নহে, তাহা স্পষ্ট। রাজ্যের পরিস্থিতি যে গুরুতর, এই কথাটি স্বীকার করিয়া তাহার সমাধানের পথ সন্ধানের মধ্যে যে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও সততা আছে, তাহার গুরুত্বও অপরিসীম। বিশেষত, অতিমারির প্রথম পর্বে যেখানে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন ইত্যাদির অভিযোগ উঠিয়াছিল। প্রসঙ্গত কো-মর্বিডিটির হিসাবও যে নিতান্ত ধোঁকার টাটি ছিল না, পরবর্তী কালে কেন্দ্রীয় সরকারও তাহা স্বীকার করিয়া লইয়াছে।
সপ্তাহে দুই দিনের লকডাউনের বিকল্প হিসাবে ওড়িশা মডেলের কথা শোনা যাইতেছে— শনি-রবি ব্যতীত প্রতি দিনই সব খোলা থাকিবে, কিন্তু কম সময়ের জন্য। ওড়িশায় মডেলটিতে সুফল পাওয়া গিয়াছে। তবে, অতিমারির সংক্রমণ কোন স্তরে আছে, তাহার উপরও ব্যবস্থার কুশলতা নির্ভর করিবে। যে মডেলই গৃহীত হউক, তাহার উদ্দেশ্য দ্বিমুখী হইতেই হইবে— এক, অতিমারির সংক্রমণের হার কমানো; দুই, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে যত দূর সম্ভব অব্যাহত রাখিতে পারা। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসনের মতামতকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেছে। তাহা অতি জরুরি। উপর হইতে চাপাইয়া দেওয়া সিদ্ধান্তে স্থানীয় স্তরের সমস্যা বা বৈশিষ্ট্যগুলিকে জায়গা দিবার অবকাশ থাকে না। এই কথাটি রাজ্য স্তরে যতখানি সত্য, কেন্দ্রীয় স্তরেও ঠিক ততখানিই সত্য। দেশে সংক্রমণ যে হারে বাড়িতেছে, তাহাতে কোনও সর্বভারতীয় সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা বলিয়াই অনুমান। সেই সিদ্ধান্ত করিবার সময় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তব্য রাজ্যগুলির মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। গত দফায় যে একতরফা সিদ্ধান্ত চাপাইবার কুনাট্য চলিয়াছে, এই বার তাহা পরিহার করা বিধেয়।
এই লকডাউন রোগ নিয়ন্ত্রণে কতখানি সফল হইবে, তাহা শেষ অবধি নির্ভর করিতেছে সাধারণ মানুষের উপর। প্রশাসন যতই কঠোর হউক, মানুষ যদি সচেতন না হয়, তবে রোগকে প্রতিহত করিবার সাধ্য কাহারও নাই। মানুষকে বুঝিতে হইবে, যে বিধিনিষেধ আরোপিত হইতেছে, তাহা তাহার মঙ্গলার্থেই। লকডাউন অমান্য করিয়া ঘুরিয়া বেড়ানো, কন্টেনমেন্ট জ়োনের গণ্ডি ডিঙাইয়া বাহির হওয়া ইত্যাদিতে কোনও কৃতিত্ব নাই, প্রাণঘাতী নির্বুদ্ধিতা আছে। মানুষকে বুঝিতে হইবে, লকডাউনের ঔষধ স্টেরয়েডের ন্যায়— এক সময়ের পর তাহা আর ব্যবহার করা যাইবে না। ফলে, ঔষধটি যখন প্রযুক্ত হইতেছে, তাহার সর্বাধিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করিবার দায়িত্ব শুধু প্রশাসনের নহে, প্রত্যেকের। নাগরিক হিসাবে নিজের কর্তব্য না বুঝিবার, তাহাকে অবহেলা করিবার মধ্যে নাগরিকত্বের অবমাননা রহিয়াছে। এখন সচেতন না হইলে আর হয়তো সুযোগ মিলিবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy