প্রতীকী ছবি।
তদন্ত কথাটির আদি অর্থ: তাহার অন্ত। সেই সূত্রেই অপরাধ বা রহস্যের কিনারা করিতে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ উদ্ঘাটনের প্রক্রিয়াকে তদন্ত বলিবার রীতি কালক্রমে পাকা হইয়াছে। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল কায়দার সহিত যুক্ত থাকিবার অভিযোগে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এই রাজ্যের যে মানুষগুলিকে গ্রেফতার করিয়াছে, তাহাদের বিরুদ্ধে ঠিক কী তথ্যপ্রমাণ মিলিয়াছে, তাহার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকাশিত হয় নাই। প্রকাশিত হইবার কথাও নহে, কারণ অনুসন্ধান চলিতেছে। কিন্তু গত কয়েক দিনে এই বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ জানা গিয়াছে, তাহার বিবিধ ভাষ্য শোনা গিয়াছে, সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং অভিযোগের কোনটি সত্যই কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়ে নানা সংশয়ও বাতাসে ভাসিতেছে। বিশেষত, তদন্তকারী সংস্থা যে সকল বস্তু বাজেয়াপ্ত করিয়াছে বলিয়া জানাইয়াছে, তাহাদের সব কয়টিকে আপাতদৃষ্টিতে বিপজ্জনক বা আপত্তিকর বলিয়া মনে না হওয়া অস্বাভাবিক নহে। এমন সংশয় নূতন নহে। অতীতে বিভিন্ন ঘটনায় তদন্তকারীরা বহু আপাত-নির্দোষ ‘সাক্ষ্যপ্রমাণ’-এর ফিরিস্তি দিয়াছে এবং তাহার কঠোর সমালোচনাও হইয়াছে। কিন্তু আপাতত সেই সকল জল্পনা অপেক্ষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত প্রক্রিয়াটির যথাযথ অগ্রগতি। সন্ত্রাসের বিপদ দূর করিতে যথাযথ অনুসন্ধান অত্যাবশ্যক।
এই অনুসন্ধানের প্রক্রিয়ায় সর্বতো ভাবে সাহায্য করা যে কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আবশ্যিক কর্তব্য। এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলির দায়িত্ব সমধিক। তাহাদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব: এই বিপজ্জনক বিষয়টি লইয়া কোনও ভাবে রাজনীতি না করা। তাহারা সেই দায়িত্ব পালনে কতটা আগ্রহী, সেই বিষয়ে প্রশ্ন আছে। সন্ত্রাসবাদীর কোনও ধর্ম হয় না— এই প্রাথমিক সত্যটিকে ক্রমাগত অস্বীকার করিয়া সন্ত্রাসের সহিত ধর্মপরিচয়কে মিশাইবার সঙ্কীর্ণ এবং কুৎসিত রাজনীতি একুশ শতকের ভারতে কমে নাই, বহু গুণ বাড়িয়াছে। পশ্চিমবঙ্গও তাহার ব্যতিক্রম নহে। এই বিষয়ে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের ভূমিকার কথা নূতন করিয়া বলিবার কিছু নাই। রাজ্যের শাসক দল হিসাবে এই কুরাজনীতিকে প্রতিহত করিতে তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্ব স্বভাবতই বিপুল। দুর্ভাগ্যের কথা, তাহাদের তথা তাহাদের নেতৃত্বে চালিত রাজ্য সরকারের আচরণেও সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠিয়াছে বারংবার। নাগরিকের আশা, এই প্রবণতাকে রোধ করিতে প্রশাসন ও দল সর্ব প্রকারে সতর্ক এবং যত্নবান হইবে। বিধানসভা নির্বাচন যত কাছে আসিবে, সতর্কতার প্রয়োজন তত বাড়িবে।
সতর্ক থাকিতে হইবে নাগরিকদেরও। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সভ্যতা ও সংস্কৃতির গর্ব করিয়া থাকেন। গর্ব করিবার কারণও আছে। কিন্তু যথাযথ সামাজিক আচরণের মধ্য দিয়া সেই সভ্যতার প্রমাণ দিতে না পারিলে সংস্কৃতি-গর্ব মুখের কথায় পরিণত হয়। চিন্তা ও কাজকে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির কলুষ হইতে মুক্ত রাখিয়া চলিবার জন্য যে সুস্থ সংযত মানসিকতা অপরিহার্য, এই সমাজ অনেক সময়েই তাহা হইতে বিচ্যুত হইয়া থাকে। অধুনা, রাজনীতির কুবাতাসে, সমাজের একটি বড় অংশের আচরণে সেই বিচ্যুতির উদ্বেগজনক প্রকাশ মিলিতেছে। পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক অস্থিরতা কেবল বাড়ে নাই, তাহা উত্তরোত্তর পঙ্কিল হইতেছে। সন্ত্রাস বা অন্যবিধ অশান্তির ঘটনা অথবা অভিযোগকে সাম্প্রদায়িক চশমা দিয়া দেখিবার অভ্যাস নাগরিকদের অনেককেই গ্রাস করিতেছে। এই অভ্যাস কেবল অনৈতিক নহে, আত্মঘাতী। ভেদবুদ্ধির আগুন কত বড় ক্ষতি করিতে পারে, বাঙালির ইতিহাস তাহার সাক্ষী। ইতিহাসের শিক্ষা গ্রহণ না করিলে ইতিহাস শিক্ষা দেয়। কথাটি এই কঠিন পরিস্থিতিতে বিশেষ ভাবে মনে রাখা দরকার। তাহাতে তদন্তেরও উপকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy