Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

দেশের কাজ

ভারতে জাতীয়তাবোধের উদ্গাতা বলিয়া তিনি পরিচিত। জাতীয়তার সেই ধারণায় অতীত গৌরব লইয়া আস্ফালন নাই, আছে কর্মে আহ্বান।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ভারতবর্ষের প্রাচীন মহিমা আলোচনা করিতে বিলক্ষণ সুখা আছে বটে, কিন্তু কোন কালে আমরা ঘৃত ভক্ষণ করিয়াছে, এক্ষণে সর্বদা হস্ত আঘ্রাণ করিলে কী হইবে? এক্ষণে কাজ চাই।’’ প্রায় দেড় শতক বর্ষ পূর্বে কথাগুলি বলিয়াছিলেন রাজনারায়ণ বসু। ভারতে জাতীয়তাবোধের উদ্গাতা বলিয়া তিনি পরিচিত। জাতীয়তার সেই ধারণায় অতীত গৌরব লইয়া আস্ফালন নাই, আছে কর্মে আহ্বান। নাবিকের শিক্ষানবিশি, তুলার চাষকে তিনি ‘দেশের কাজ’ বলিয়াছেন। একবিংশ শতকে নেতারা পুষ্পকরথ বা দ্রোণজন্মের কাহিনিতে উন্নত বিজ্ঞানের কল্পিত সুঘ্রাণ পাইয়া গৌরবগাথা গাহিতেছেন। কিন্তু দেশে নিরাপদ পানীয় জল ও সুরক্ষিত শৌচ-নিকাশি ব্যবস্থা নির্মাণে মতি নাই। কাজের দ্বারা জাতীয়তার গৌরব প্রতিষ্ঠার আদর্শ তাঁহারা গ্রহণ করেন নাই। ডায়রিয়ার মতো নিবারণযোগ্য রোগে ভুগিয়া যে দেশে প্রতি বৎসর লক্ষাধিক শিশুর মৃত্যু হয়, তাহার কিসের গৌরব? বিশ্বে সর্বাধিক শিশু যে দেশে জলবাহিত রোগের জন্য প্রাণ হারায়, তাহার লজ্জা রাখিবার স্থান নাই। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি জলবাহিত রোগ প্রতিরোধে ভারতের তুলনায় সফল। সর্বাধিক শিশুমৃত্যুতে ভারতের দোসর আফ্রিকার নাইজিরিয়া। গৌরব বটে।

সম্প্রতি লোকসভায় একটি প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে তথ্য পেশ করিয়াছে, তাহাতে প্রকাশ যে কেবল গত বৎসরেই বিরানব্বই লক্ষ ব্যক্তি ডায়রিয়ায় ভুগিয়াছেন, মৃত্যু হইয়াছে ৮৪০ জনের। অন্যান্য জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হইয়াছেন আরও অন্তত পঁচিশ লক্ষ। নষ্ট হইয়াছে সাত কোটি কর্মদিবস। উদ্বেগের বিষয়, সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ডায়রিয়া-জনিত মৃত্যুর তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ রহিয়াছে দ্বিতীয় স্থানে, উত্তরপ্রদেশের পরেই। এমনও সম্ভব যে, সকল রাজ্য সংক্রমণ ও তজ্জনিত মৃত্যুর যথাযথ তথ্য কেন্দ্রের নিকট প্রেরণ করে না। তাহা হইলে হয়তো অবস্থানে হেরফের হইত। কিন্তু সে কথা ভাবিয়া সান্ত্বনা খুঁজিয়া লাভ নাই। কারণ এ রাজ্যে মৃত্যুর মোট সংখ্যাটি তো তাহাতে কমিবে না। অতএব পরিচ্ছন্ন জল এবং যথাযথ নিকাশির ব্যবস্থা না করিলে নয়। ডায়রিয়া শুধু মৃত্যুর কারণ নহে, অপুষ্টিরও কারণ। বারংবার পেটের সংক্রমণ শিশুদের খাদ্য হইতে পুষ্টি গ্রহণের ক্ষমতা কমাইয়া দেয়। তাহাদের দৈহিক বৃদ্ধি ও মেধার বিকাশ ব্যাহত হয়। ভারতে অপুষ্ট শিশুর সংখ্যাও বিশ্বে সর্বাধিক। সরকারি নীতি তাহাদের স্বল্পমূল্য চাল-গম দিয়া কাজ সারিতেছে। অথচ নিকাশির সুব্যবস্থা করে নাই। যত্রতত্র খোলা নর্দমা রাস্তার দুই ধারে শোভা পাইতেছে। যেন খাল কাটিয়া যমদূতের আহ্বান।

এক অদ্ভুত প্রহসন এই যে, সরকারি তথ্য অনুসারে এ দেশের ৮৬ শতাংশ মানুষ ‘সুরক্ষিত পানীয় জল’ পাইয়া থাকেন। ইহার রহস্য, জলের উৎসটি ‘সুরক্ষিত’ বিবেচিত হইলেই জল ‘সুরক্ষিত’ বলিয়া গণ্য হয়। টিউবওয়েলের জল সেই হিসাবেই ‘পানযোগ্য’, যদিও বস্তুত তাহা প্রায়ই বিভিন্ন জীবাণু, এমনকী আর্সেনিকে দূষিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, একমাত্র পাইপবাহিত, পরিস্রুত জলই নির্ভরযোগ্য। কিন্তু তেমন জল পাইতেছে ভারতে তিন জনের এক জন। অতএব পেটের অসুখ যে মহামারির রূপ লইয়া শিশুদের জীবনীশক্তিকে ক্ষয় করিবে, তাহাতে আশ্চর্য কী? এই ব্যাধি দূর করিবার কাজটিই দেশের কাজ। তাহাতেই জাতির গৌরব।

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Water Pollution Diarrhea
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy