পশ্চিমবঙ্গ তার ‘খ্যাতি’ অক্ষুণ্ণ রাখল। স্কুল পরিচালন সমিতি বা সমবায় সমিতির নির্বাচন থেকে শুরু করে বিধানসভা বা লোকসভা পর্যন্ত যত রকম স্তরের নির্বাচন রয়েছে, তার কোনওটিই যে এ বঙ্গে বেলাগাম হিংসা ব্যতিরেকে হয় না, সে কথা আরও এক বার প্রমাণ হল। মাত্র সাতটি ছোট ছোট পুর এলাকায় নির্বাচন ছিল। আগেও লিখেছিলাম— এমন কোনও নির্বাচন এ নয়, যার ফলাফল বাংলার রাজনীতির প্রবাহটাকেই আশিরনখ ঘুরিয়ে দিতে পারে। তবু ভোটগ্রহণ শুরু হতেই হিংসার আগুন দাউ দাউ করে উঠল। কোথাও বোমা পড়ল, কোথাও গুলি চলল, কোথাও ভোটকর্মী উধাও হলেন, কোথাও ইভিএম ভেঙে দেওয়া হল, কোথাও পুলিশ পালিয়ে গেল, কোথাও ভোটদাতা মার খেলেন, কোথাও ঘরের ভিতর বোমা ফাটার ভয়ে গৃহবধূ ঘর ছেড়ে পথে নামলেন। বেলাগাম হিংসার পরম্পরা যেন আরও লাগামছাড়া এ পুর নির্বাচনে। শান্তিপূর্ণ আবহে অবাধ ভোট নয়, অশান্তির আগুনের মাঝে অবাধে ভোট লুঠ— এমনই একটা ছবি উঠে এল।
এর নাম গণতন্ত্র! বছরভর গণতন্ত্রের নামে কথার পিঠে কথা, গণতন্ত্রের জন্যই যেন রাজনৈতিক দলগুলির অস্তিত্ব নিবেদিত। তার পর নির্বাচনের এই চেহারা! গণতন্ত্রেই যদি আস্থা থাকে, মানুষ সঙ্গে রয়েছেন বলে যদি আত্মবিশ্বাস থাকে, তা হলে ভোটের দিনে এমন মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা-গুলি আর পাল পাল বাইক সওয়ারকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেন নিশ্ছিদ্র সন্ত্রাসের বাতাবরণ কায়েম করতে হয়, বোধগম্য হচ্ছে না। গণভিত্তি যাঁর মজবুত, জনবল যাঁর সহায়, তাঁকে কেন বাহুবলীদের ভরসায় ভোটে নামতে হয়? এ প্রশ্নের কোনও সদুত্তর নেই।<br>
বিরোধীরা প্রার্থী প্রত্যাহারের মতো পদক্ষেপও এ বার করলেন। শাসকের বল্গাহীন সন্ত্রাসে নির্বাচন পুরোপুরি প্রহসনে পরিণত হয়েছে বলে প্রত্যেকটি বিরোধী দলের অভিযোগ। নির্বাচন পুরোপুরি বাতিল করার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
শাসকের বয়ান আবার সম্পূর্ণ বিপরীত। জয় অসম্ভব জেনেই বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে বিরোধীরা, মানুষ সঙ্গে নেই বলেই নির্বাচন বাতিলের দাবি করছে বিরোধী দলগুলি— বলছে রাজ্যের শাসক দল।
অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগে কিন্তু এই গোটা পর্বের সমাপ্তি এ বার ঘটবে না। পুর নির্বাচনকে ঘিরে কী ভাবে হিংসার উৎসব তৈরি করা হল, তা কারও চোখ এড়ায়নি। এই হিংসার উৎসব শাসকের তৈরি করা, নাকি বিরোধীর, সংশ্লিষ্ট পুর এলাকাগুলির জনতাই তার সবচেয়ে বড় সাক্ষী। বিচার তাঁরাই করবেন। কিন্তু সে বিচারের রায় জানার অপেক্ষা না করেও বলে দেওয়া যায়, দায় কিন্তু তৃণমূলেরই বেশি। তৃণমূল শাসক দল, শাসকের দায়িত্বজ্ঞান সব সময়ই অন্যের চেয়ে বেশি হওয়া জরুরি। কিন্তু এখানে শাসকই সবচেয়ে বড় অভিযুক্ত। সবক’টি বিরোধী দল একযোগে আঙুল তুলছে শাসকের দিকে। নৈতিক কর্তৃত্ব বলতে কি আর কিছু অবশিষ্ট রইল? উত্তরটা তৃণমূলই খুঁজুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy