রাজনৈতিক সঙ্কট ক্রমশ গভীর হচ্ছে নেপালে। ছবি রয়টার্স।
গণতন্ত্রের পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া সহজ নহে। তাহাতে বহু উত্থান-পতন, এমনকি স্খলনও। স্বল্পসংখ্যক রাষ্ট্রই ইহার পরেও গণতন্ত্রের পথে চলিতে পারে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সংশয় জাগায়, সম্ভবত এই পরীক্ষায় পাশ করিতেছে না নেপাল। দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব সামলাইতে না পারিয়া আইনসভার নির্বাচিত নিম্নকক্ষ ভাঙিয়া দিয়াছেন প্রধানমন্ত্রী খড়্গপ্রসাদ শর্মা ওলি। দুই বৎসর মেয়াদ অবশিষ্ট থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক স্বার্থের সম্মুখে সরকার-প্রধানের আত্মসমর্পণ শৈশব পার করা প্রজাতন্ত্র ও তাহার সংবিধান লইয়া প্রশ্ন তুলিয়াছে। পাঁচ বৎসর পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং ধর্মনিরপেক্ষতার যে আদর্শ লইয়া নূতন সংবিধান রচিত হইয়াছিল, তাহাও বাতিল করিবার দাবি উঠিতেছে। আইনসভা ভাঙিয়া দিবার ঘটনা নেপালে অভূতপূর্ব নহে, কিন্তু নূতন সংবিধান বলিয়াছিল যে, এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একপাক্ষিক সিদ্ধান্তগ্রহণ অসম্মত। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসক দল ভাঙিয়া যাইবার সূত্রে তাহা ঘটিল। ঘটনার ঘনঘটায় বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা লইয়া বিতর্ক অস্বাভাবিক নহে।
কাঠমান্ডুর উপর দুই প্রতিবেশী, ভারত ও চিনের ছায়া দীর্ঘ। নানা রাজনৈতিক অস্থিরতার পর্বে তাহাদের ভূমিকা অস্বীকৃত নহে। কিন্তু এই বার চিন কেবল প্রেক্ষাপটে থাকে নাই, তাহার সক্রিয় অংশগ্রহণ ঘটনাক্রমকে চালিত করিয়াছে। কাঠমান্ডুতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত হৌ ইয়াঙ্কি বারংবার কূটনীতিকের ভূমিকাটি অতিক্রম করিয়া নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পরিসরে প্রবেশ করিয়াছেন। নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিধাবিভক্তি রুখিতে উদ্যোগী হইয়াছে চিন। এক্ষণে আইনসভার পতনের পরে কাঠমান্ডু পৌঁছাইয়াছে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দল। যুযুধান দুই গোষ্ঠীর সহিত তাহাদের বৈঠক হইবে বলিয়াও শুনা যাইতেছে। বাণিজ্য, শক্তি, ভূমিকম্প-পরবর্তী পুনর্নির্মাণ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেপালে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগকারীর নাম চিন। সেই দেশে রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা বা পটপরিবর্তন লইয়া তাহাদের আগ্রহ থাকিবেই। কিন্তু অপর দেশের দৈনন্দিন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করিবার চেষ্টা অবাঞ্ছিত ও অন্যায্য।
বেজিংয়ের এই অতিসক্রিয়তা ভারতের পক্ষে স্বস্তিদায়ক নহে। কেবল ভৌগোলিক নৈকট্য নহে, ধর্ম সংস্কৃতি অর্থনীতির দিক হইতেও দুই দেশের ঘনিষ্ঠতা সুবিদিত। ভারত-নেপাল সীমান্ত বাধাহীন, পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই নাগরিকগণ একে অপরের দেশে বসবাস ও কাজকর্ম করিতে পারেন। কিন্তু ২০১৫ সালে সীমান্ত অবরোধের পরে ভারতবিরোধী অবস্থান লইয়াই বিপুল ভোটে জয়ী হইয়াছিল ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট জোট। তৎপরবর্তী ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ওলির নীতিসমূহ ক্রমশ বেজিং অভিমুখে অপসৃত হইয়াছে, কিয়দংশে চিন কর্তৃক চালিত হইয়াছে। নিজের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগকে ‘ভারতের চক্রান্ত’ বলিয়া আখ্যা দিয়াছেন ওলি। ক্ষমতা কুক্ষিগত করিতে বহু ভারতবিরোধী পদক্ষেপ করিয়াছেন, যাহার ভিতর মানচিত্র-বিতর্ক সাম্প্রতিকতম। বস্তুত, নয়াদিল্লি বিরোধিতাকেই আপনার রাজনৈতিক পুঁজি করিয়া তুলিয়াছেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনেও পর্যবেক্ষণ বিনা ভারতের অধিক কোনও ভূমিকা থাকিবার কথা নহে। যদিও সাত দশকের ‘বিশেষ’ বন্ধুকে এতখানি অবজ্ঞা করা কাঠমান্ডুর পক্ষেও মঙ্গলময় হইতেছে না। গণতন্ত্রের পদস্খলনের মতোই তাহাও বড় সঙ্কট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy