Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

জগদ্দল

কর্পোরেট দুনিয়ায় এই সিদ্ধান্ত সুপ্রচলিত— যাহাকে বলা হয় ‘রাইটসাইজ়িং’, অর্থাৎ কাজের প্রয়োজনে যত কর্মী চাই, হিসাব কষিয়া কর্মিসংখ্যাকে ঠিক সেখানে নামাইয়া আনা।

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

সরকারি চাকুরির প্রধানতম আকর্ষণ কী, প্রশ্নটি করিলে দশের মধ্যে সাড়ে নয় জন বলিবেন, নিশ্চয়তা। দুনিয়া রসাতলে গেলেও অবসরের বয়স না হওয়া পর্যন্ত চাকুরি পাকা। তাহার লয়-ক্ষয় নাই। সেই সরকারি চাকুরির প্রধানতম উৎস ভারতীয় রেল বিপরীত পথে হাঁটিবার চেষ্টা করিতেছে, এ হেন সংবাদে ‘গেল গেল’ রব পড়িবে তো বটেই। জানা গিয়াছিল, প্রায় তিন লক্ষ কর্মী ছাঁটাইয়ের ভাবনা চলিতেছে রেলে। কর্মদক্ষতা বিচার করিয়া, কাজের প্রতি দায়বদ্ধতার হিসাব লইয়া অবসর বা স্বেচ্ছাবসরের ব্যবস্থা হইবে। হইচই আরম্ভ হওয়ায় সরকার জানাইয়াছে, ইহা নিতান্তই রুটিন খোঁজখবর, ছাঁটাইয়ের প্রশ্ন নাই। যে আপত্তিগুলি উঠিয়াছিল, তাহার কয়েকটি এই রূপ: যেখানে রেলে বহু পদ খালি পড়িয়া আছে, সেখানে কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত কেন? যে সরকার কর্মসংস্থান বাড়াইবার প্রতিশ্রুতি দিয়াছিল, তাহা ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটিবে কেন? প্রশ্নগুলির সদুত্তর দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু, তাহারও পূর্বে একটি কথা স্পষ্ট ভাষায় বলা প্রয়োজন: শুধু রেল নহে, সমস্ত সরকারি দফতর, সংস্থাতেই এই গোত্রের সিদ্ধান্ত জরুরি। কর্পোরেট দুনিয়ায় এই সিদ্ধান্ত সুপ্রচলিত— যাহাকে বলা হয় ‘রাইটসাইজ়িং’, অর্থাৎ কাজের প্রয়োজনে যত কর্মী চাই, হিসাব কষিয়া কর্মিসংখ্যাকে ঠিক সেখানে নামাইয়া আনা। বাড়তি মেদ সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নহে। সরকারি ক্ষেত্রেও নহে। সিদ্ধান্ত করিয়াও গোলমালের ভয়ে সরকার পিছাইয়া আসিলে অতি দুর্ভাগ্যের হইবে।

১৯৬০-এর দশকে তৎকালীন মাদ্রাজ সরকার নাকি ঘটনাক্রমে একটি পদের অস্তিত্ব আবিষ্কার করিয়াছিল— ‘সিসিএ’। ত্রিশ বৎসরের গোপনীয়তা রক্ষার শর্তের কারণে পদটির পুরা নাম জানিতে সময় লাগিল আরও দেড় দশক। তাহার পর জানা গেল, পদটির নাম ‘চার্চিলস সিগার অ্যাসিস্ট্যান্ট’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের জন্য ত্রিচিনাপলি সিগার জোগাড় করাই ছিল পদাধিকারীর দায়িত্ব। সেই প্রয়োজন সম্পূর্ণ মিটিবার পরও তিন দশক পদটি ছিল, কারণ চাকুরিটি সরকারি। পদটির কোনও প্রয়োজন আদৌ আছে কি না, সেই বিচারই হয় নাই। বহু সরকারি চাকুরিই চরিত্রে এমন। সেগুলিকে বিলোপ করা অবশ্যকর্তব্য। যে পদগুলি অবান্তর নহে, তাহার আধিকারিকরাও কাজ করেন কি না, জানা জরুরি। সরকারি চাকুরি মানেই যে নিশ্চয়তা নহে, তাহাতেও যে কাজ করিবার বাধ্যতা অতি গুরুতর, এই কথাটি প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। বস্তুত, পে কমিশন নামক প্রথাটি তুলিয়া দিয়া তাহার পরিবর্তে কাজের দক্ষতা মাপিয়া বেতন নির্ধারণের সিদ্ধান্তটিও সমান জরুরি। ‘আসি যাই মাহিনা পাই’ নীতিতে বিশ্বাসী, অদক্ষ, অকুশলী, ফাঁকিবাজ কর্মীকে সরকারি কাজে রাখিয়া দেওয়া মানে দেশের ক্ষতি করা। তবে, ছাঁটাই করিবার পূর্বে মূল্যায়ন যথাযথ হওয়া বিধেয়।

মেদ ঝরানোর অর্থ পেশির ক্ষতি করা নহে। যে কর্মীরা দক্ষ, তাঁহাদের পুরস্কারেরও ব্যবস্থা করিতে হইবে। প্রয়োজনীয় অথচ খালি পদে কর্মী নিয়োগ করিতে হইবে। এমন ভাবে, যাহাতে সামগ্রিক দক্ষতা বাড়ে, কাজে গতি আসে। কিন্তু, তাহাতে কি নূতন কর্মসংস্থানের লক্ষ্য পূরণ হইবে? না। হওয়ার প্রয়োজনও নাই। কর্মসংস্থান বাড়াইতে হইলেই সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ করিতে হইবে, এই মানসিকতা হইতে মুক্তি পাওয়া সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। দেশে কর্মসংস্থান প্রয়োজন, সন্দেহ নাই। কিন্তু, তাহা যত বেশি সম্ভব, বেসরকারি ক্ষেত্রে হওয়া বিধেয়। তাহার জন্য অর্থনীতির স্বাস্থ্যোদ্ধার জরুরি, নূতন বিনিয়োগের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ গড়িয়া তোলা জরুরি। অন্য দিকে, তরুণ প্রজন্মকে চাকুরির জন্য তৈরি করিয়া লইতে হইবে। সরকারের নিকট এই দাবিগুলি পেশ করা বিধেয়— অকুশলী কর্মীর চাকুরি বজায় রাখিবার দাবি নহে।

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railway Indian Railways Volutary Retirement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy