Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

সুপারিশতন্ত্র

মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ‘জানাশোনা’ না থাকিলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা মিলিবে না, এমন গুজব শুনিলেই রোগী হয় নার্সিংহোমে ছুটিবেন, অথবা ভাগ্যের নিকট আত্মসমর্পণ করিয়া বাড়িতেই পড়িয়া থাকিবেন। সুপারিশ-চক্র বহু অকালমৃত্যুর কারণ হইবে। 

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:২২
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীর দফতর হইতে সুপারিশ আনিতে পারিলে এসএসকেএম-এ ভর্তিতে অগ্রাধিকার মিলিতেছে। ফলে সুপারিশহীন চিকিৎসা-প্রত্যাশীদের অপেক্ষা আরও বাড়িতেছে। এই চিকিৎসা-বঞ্চনায় কত জন বিনা-চিকিৎসায় মারা যাইতেছেন, সেই হিসাব মিলিবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ, কতগুলি শয্যায় সুপারিশের ভিত্তিতে রোগী ভর্তি হইতেছেন, কত রোগী গুরুতর অসুস্থতা সত্ত্বেও উপেক্ষিত, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাহার প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করিবেন না। তবে সংবাদে প্রকাশ, রোগের গুরুত্ব অনুসারে ভর্তির অগ্রাধিকার স্থির করিবার জন্য চিকিৎসকদের যে কমিটি নির্মিত হইয়াছিল, তাহা এখন নিষ্ক্রিয়। কেন? যেখানে শয্যা সীমিত, রোগী অগণিত, সেখানে অগ্রাধিকার কে পাইবে, তাহার বিবেচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নহে কি? এই পরিস্থিতি বিপজ্জনক। প্রথম বিপদ দুর্নীতির। তাহার প্রমাণ ইতিমধ্যেই মিলিয়াছে। হাসপাতালের দালালচক্র কার্যস্থল বদলাইয়া পৌঁছাইয়াছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। পূর্বে টাকার বিনিময়ে শয্যা মিলিত, এখন শয্যা পাইবার সুপারিশ মিলিতেছে। ফলে দেখা দিয়াছে দ্বিতীয় বিপদ, চিকিৎসা হইতে বঞ্চনার। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ‘জানাশোনা’ না থাকিলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা মিলিবে না, এমন গুজব শুনিলেই রোগী হয় নার্সিংহোমে ছুটিবেন, অথবা ভাগ্যের নিকট আত্মসমর্পণ করিয়া বাড়িতেই পড়িয়া থাকিবেন। সুপারিশ-চক্র বহু অকালমৃত্যুর কারণ হইবে।

সর্বাধিক বিপদ হাসপাতাল নামক প্রতিষ্ঠানের। হাসপাতালের ব্যয়ভার সরকার বহন করিলেও সরকারি হাসপাতাল সরকারি দফতর নহে, তাহার নিয়ম-নীতি তাহারই নিজস্ব। চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে কোনও তৃতীয় পক্ষ আসিতে পারে না। কোনও সরকারি পদাধিকারীও নহেন। এই রাজ্যে সরকার-পোষিত প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকার বার বার খণ্ডিত হইতেছে। বিশেষত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, এই দুইটি ক্ষেত্রে। ছোট-বড় সকল স্তরের নেতাই তাঁহাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট নানাবিধ সুপারিশ করিয়া নাগরিককে পাঠাইয়া থাকেন। তাঁহাদের নিরস্ত করিতেই রোগীভর্তির সুপারিশ পাঠাইবার ক্ষমতা কেবল মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের উপর ন্যস্ত হইয়াছিল। কিন্তু হাসপাতালের কাজে ছোট নেতার হস্তক্ষেপ যে কারণে আপত্তিকর, তাহাই প্রযোজ্য শীর্ষ নেতার ক্ষেত্রেও। প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা এবং মর্যাদা রক্ষা করাই জনপ্রতিনিধি এবং আধিকারিকদের কাজ। প্রাতিষ্ঠানিক রীতিনীতিতে শিথিলতা বা ত্রুটি নাগরিকের সমস্যার কারণ হইতেছে, এমন বুঝিলে তাঁহারা প্রতিষ্ঠানকে শুধরাইবার নির্দেশ দিতে অবশ্যই পারেন। কিন্তু বাহির হইতে বিকল্প নিয়ম সৃষ্টি করিতে পারেন না। তাহাতে হিতে বিপরীত হইবে।

অনেক ক্ষেত্রে অতি প্রান্তিক, অতি দুর্বল মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মগুলি মানিতে অক্ষম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অপরাপর আপৎকালীন পরিস্থিতির কারণেও কেহ অত্যন্ত বিপন্ন হইয়া পড়িতে পারেন। মানবিক কারণে তাঁহাদের দ্রুত সহায়তার জন্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা অগ্রাধিকারের সুপারিশ করিতে পারেন কোনও প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু তাহা ব্যতিক্রম। সুপারিশ এক বিকল্প নিয়ম হইয়া উঠিতে পারে না। আজ যে কোনও সরকারি পরিষেবা বা প্রকল্পের দ্বাররক্ষী হইয়া উঠিয়াছে নেতা-আমলার সুপারিশ। আইনের শাসনকে দুর্বল করিতেছে সুপারিশতন্ত্র।

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Health Sector
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy