Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

বেআব্রু

প্রধানমন্ত্রীর সর্ববৃহৎ ব্যর্থতা অবশ্য ভারতীয় সংবিধানের আত্মাকে অনুভব করিতে না পারায়। সংবিধান প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিটিকে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী করিয়াছে।

রাজ্যপালকে পদত্যাগপত্র দেবেন্দ্র ফডণবীসের। ছবি: টুইটার থেকে

রাজ্যপালকে পদত্যাগপত্র দেবেন্দ্র ফডণবীসের। ছবি: টুইটার থেকে

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

নিতান্ত সমাপতন যে ভারতের সংবিধান দিবসেই মহারাষ্ট্রের কুনাট্যে যবনিকা পড়িল? সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি সংবিধানের প্রতি, তাহার রচয়িতাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করিয়া ফিরিবার কিছু পরেই দেবেন্দ্র ফডণবীস আশি ঘণ্টার মুখ্যমন্ত্রিত্বে ইতি টানিবার কথা ঘোষণা করিয়া দিলেন। ফডণবীস কি শুনিতে পাইয়াছিলেন যে দেশের শীর্ষ নেতা মানুষকে নিজেদের কর্তব্যের কথা স্মরণ করাইয়া দিতেছেন? প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলি বিশেষ গুরুত্বসহকারে শোনা প্রয়োজন। প্রশ্ন হইল, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কি শুনিলেন? দেশবাসী জানিতে চাহিতে পারে, সংবিধানের সম্ভ্রমরক্ষায় তাঁহার নিজের কর্তব্যের কী হইল তবে? মহারাষ্ট্রে গণতন্ত্রের লাঞ্ছনায় তাঁহার ভূমিকা অনস্বীকার্য। রাতের অন্ধকার থাকিতেই তিনি সংবিধানপ্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করিয়া মহারাষ্ট্র হইতে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করিয়া লইয়াছিলেন। তাঁহার কর্তব্য ছিল মন্ত্রিসভার সম্মতির জন্য অপেক্ষা করা। তিনি সেই কর্তব্য পালন করেন নাই। বিন্দুমাত্র কালক্ষেপ না করিয়াই সেই নির্দেশনামায় স্বাক্ষর করিয়াছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। রাতের অন্ধকারেই। তাঁহার অধিকার ছিল প্রশ্ন করিবার। কী এমন তীব্র জরুরি অবস্থা উপস্থিত হইল যে দিনের কাজ আরম্ভ হওয়া অবধি অপেক্ষা করা যাইতেছে না, তাহা জিজ্ঞাসা করিবার। সংবিধানবিশেষজ্ঞদের পরামর্শ লইবার। সরকার গড়িতে ব্যাকুল রাজ্যপালকে সংযত করিবার। কোনওটিই তিনি করেন নাই। গণতন্ত্রের আব্রু রক্ষায় যাহা তাঁহার কর্তব্য ছিল, তাহা তিনি মোটেই পালন করেন নাই। তবে কিনা, রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের ব্যর্থতার দায়ও প্রধানমন্ত্রীকেই লইতে হইবে— তাঁহাদের যথার্থ পথে পরিচালনা না করিতে পারা প্রধানমন্ত্রীরই কর্তব্যচ্যুতি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে গণতন্ত্রের পথ হইতে বিচ্যুত হইতে প্রতিহত না করিতে পারাও প্রধানমন্ত্রীরই ব্যর্থতা। মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের প্রক্রিয়াটিকে কার্যত অভ্যুত্থানের রূপ দিয়া গণতন্ত্রকে যে অপমান করা হইল— তাহার দায় অতএব নরেন্দ্র মোদীকেই লইতে হইবে।

প্রধানমন্ত্রীর সর্ববৃহৎ ব্যর্থতা অবশ্য ভারতীয় সংবিধানের আত্মাকে অনুভব করিতে না পারায়। সংবিধান প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিটিকে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী করিয়াছে। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদীকে যদি তাঁহার বক্তৃতার ভাষাতেই বুঝাইয়া বলা হয়, তবে বলিতে হইবে: এই অধিকার অপেক্ষা অনেক বড় একটি ‘দায়িত্ব’— অধিকারগুলির প্রয়োগের বিষয়ে অপরিসীম সতর্ক থাকা। সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে এই বিপুল ক্ষমতা দিয়াছে একটি ‘বিশ্বাস’-এর উপর ভর করিয়া— কুর্সিতে যিনিই আসীন হউন, তিনি কোনও অবস্থাতেই সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করিবেন না। কখনও ক্ষুদ্র স্বার্থের দ্বারা পরিচালিত হইয়া তিনি সংবিধানের অসম্মান করিবেন না, ইহাই সেই বিশ্বাস। এই বিশ্বাসের ভার বহন করা কম কথা নহে— কিন্তু, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের শীর্ষাসনে আসীন হওয়াই কি মুখের কথা? আজ ভারত অধোবদনে, মর্মাহত হইয়া, স্বীকার করিতেছে— তাহার প্রধানমন্ত্রী মোদী সেই পরীক্ষায় ডাহা ফেল। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও আরও একটি রাজ্যের দখল লইবার পালক যোগ করিবার আকর্ষণ দলের পক্ষে প্রবল হইতে পারে। বিজেপি-নেতা নরেন্দ্র মোদী সেই আকর্ষণকে জয় করিতে পারেন কি না, সেই প্রশ্ন অবান্তর— ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সেই ক্ষুদ্রতার ঊর্ধ্বে উঠিতে হইত। সংবিধানের সম্মান নিশ্চিত করিতে একটি রাজ্যে দলীয় পরাজয় মানিতে হইত। কোনও অবস্থাতেই যাহাতে সাংবিধানিক নীতি ও রীতি লঙ্ঘিত না হয়, তাহা নিশ্চিত করিতে হইত। নরেন্দ্র মোদী সেই কর্তব্যপালনে ব্যর্থ। তাই, সংবিধান দিবসে তাঁহার বলা কথাগুলির অন্তঃসারশূন্যতা প্রকট হইয়া উঠিতেছে। গণতন্ত্রের আব্রু রক্ষার যে দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্ট লইল, সে দায়িত্ব কি প্রধানমন্ত্রীরও ছিল না?

অন্য বিষয়গুলি:

Maharashtra BJP Narendra Modi Devendra Fadnavis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy