Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

গো-হারা

শহরে গবাদি পশুর অবাধ বিচরণ কাম্য নহে। তজ্জনিত নাগরিক অস্বাচ্ছন্দ্যও অনভিপ্রেত। নাগরিকরা অনেক সময় সব সহিয়াও মুখ ফুটিয়া কিছু বলেন না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

বাল্যে ব্যাকরণের পাঠে সন্ধির অধ্যায়ে পড়িতে হইত ‘গবেষণা’ শব্দটি। গো+এষণা, শাব্দিক অর্থে বুঝায় গরু সন্ধান। কথ্য বাংলাতেও ‘গরু খোঁজা’ শব্দবন্ধ মনে পড়িতে পারে। বিধাননগর পুর এলাকায় অবশ্য গরু খুঁজিতে বেগ পাইতে হইবে না, বিনা শ্রমেই নজরে পড়িবে। পুর এলাকায় যত্রতত্র তাহাদের অবিচল উপস্থিতি; কখনও ফুটপাতে, কখনও গৃহসম্মুখে, কখনও রাস্তার মধ্যস্থলে। অবশিষ্ট কলকাতাও ব্যতিক্রম নহে, বিশেষত ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস সংলগ্ন বহু অঞ্চলে তাহাদের চোখে পড়ে, হয়তো মহানগরীর ওই জায়গাগুলি এখনও স্থানে স্থানে তৃণাচ্ছন্ন আছে বলিয়াই। স্বভাবে নিরীহ প্রাণীগুলি সচরাচর কাহাকে আক্রমণ না করিলেও সমস্যা হয় অন্যত্র। দেখা যায়, গৃহের সম্মুখে বা ফুটপাতে গোবর ছড়াইয়া নোংরা হইয়া আছে, তাহাতে মাছি ভনভন করিতেছে। মাটির তৈরি গ্রামীণ গৃহ হইলে প্রলেপনের কাজে লাগিতে পারিত, নাগরিক গৃহে ইহা সমস্যা বই আর কিছু নহে। দুর্গন্ধে হাঁটিবার উপায় থাকে না, উপরন্তু রোগ ছড়াইবার ভ্রুকুটি। উহারা রাস্তার পথবিভাজিকায় রোপিত চারাগাছগুলি মুড়াইয়া খায়, যাতায়াতের পথে শুইয়া থাকে। সায়াহ্নে স্বল্পালোকিত রাস্তায় দেখিতে না পাইয়া দুর্ঘটনায় গাড়িচালক ও অবলা প্রাণীটি আহত হইবার ঘটনাও ঘটিয়াছে।

শহরে গবাদি পশুর অবাধ বিচরণ কাম্য নহে। তজ্জনিত নাগরিক অস্বাচ্ছন্দ্যও অনভিপ্রেত। নাগরিকরা অনেক সময় সব সহিয়াও মুখ ফুটিয়া কিছু বলেন না। নিরীহ অবোধ প্রাণীর প্রতি করুণাবশত চুপ করিয়া থাকেন, গাড়ি লইয়া বাহির হইলে সাবধানে পাশ কাটাইয়া চলিয়া যান, শিশুদের সামলাইয়া রাখেন। আবার অনেক সময় নিজ স্বার্থে মুখ বুজিয়া থাকেন, কারণ পাড়ায় গরু থাকিলে খাটালের উপস্থিতিও অনিবার্য, এবং সেখান হইতে দুধ মিলিবে। ইদানীং গরু ‘গোমাতা’ হইয়াছে, তৎসংক্রান্ত যে কোনও প্রসঙ্গই কিঞ্চিৎ স্পর্শকাতর। নাগরিক নীরবতার ইহাও অন্যতম কারণ হইতে পারে। কিন্তু আসল সত্য হইল, কলকাতাই হোক কি বিধাননগর, পুর এলাকায় খাটালের অস্তিত্ব বেআইনি। তাহা মশামাছি ও জীবাণুর আখড়া, পরিবেশ দূষণের কারণ। ১৯৫৯ সালের রাজ্য আইন অনুযায়ী নগরাঞ্চলে গবাদি পশু রাখা নিষিদ্ধ। আশির দশক হইতে শুরু করিয়া নানান সময়ে শহর হইতে খাটাল নির্মূল করার অভিযানও চলিয়াছে। তাহাতে সাফল্যও আসিয়াছিল। কিন্তু পুরানো রোগ যে ফিরিয়া আসিয়াছে, শহরের বর্তমান চিত্রই প্রমাণ।

অর্থাৎ নজরদারিতে ঘাটতি রহিয়াছে। নজরদারি পুর প্রশাসনের দায়িত্ব, এবং তাহা নীতিনির্ভর। নীতির যথাযোগ্য বাস্তবায়ন হইতেছে না, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তাহাই চোখে আঙুল দিয়া দেখাইতেছে। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি জড়িত বলিয়াই নীতির রূপায়ণ আরও জরুরি। প্রাণীগুলিরও সুপরিবেশে সুষ্ঠু ভাবে বাঁচিবার অধিকার আছে, তাহাও মনে রাখিতে হইবে। উন্নত বিশ্বের যে কোনও রাষ্ট্রে ও নগরে শুধু গৃহপালিত ও অর্থকরী প্রাণীদের জন্যই নহে, মালিকানাহীন যূথভ্রষ্ট প্রাণীদের নিরাপত্তাতেও যথাযথ আইন ও নীতি রহিয়াছে। একুশ শতকের সর্বাধুনিক নাগরিক পরিষেবা দিতে তৎপর কলকাতার পুর-প্রশাসনকে তাহা বুঝিতে হইবে। নচেৎ রাজপথে গরুর উপস্থিতিতে ‘স্বচ্ছ ভারত’ ও ‘স্মার্ট সিটি’র বিজ্ঞাপন দেওয়া মহানগর গো-হারা হারিবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Cow EM Bypass
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy