ছবি: সংগৃহীত।
দার্জিলিঙের নির্মেঘ আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য সমাজমাধ্যমে দেখিয়া পর্যটনপ্রেমীদের মন যতই উচাটন করুক না কেন, আপাতত তাহা সুদূর নীহারিকামাত্র। সম্মুখ হইতে সেই দৃশ্যকে স্পর্শ করিবার উপায় নাই। অগত্যা বাঙালি পুরাতন ভ্রমণের সুখ-ছবি ঘাঁটিয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়িতেছে। বাস্তবিকই কোভিড-১৯ যে ভাবে পর্যটনকে স্তব্ধ করিয়াছে, এই দেশে এবং বিদেশেও, তাহা স্মরণাতীত কালে ঘটে নাই। জানুয়ারি হইতেই একে একে তালা পড়িতে শুরু করিয়াছে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে, বন্ধ হইয়াছে যাবতীয় সংযোগকারী মাধ্যম। গ্রীষ্মাবকাশের সুযোগে শুধুমাত্র এই রাজ্য হইতে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ দেশ-বিদেশের পর্যটন ক্ষেত্রগুলিতে ভিড় জমাইতেন, তাঁহারা সকলেই এখন গৃহবন্দি। পর্যটনের পক্ষে ইহা বড় দুঃসময়।
এই দুঃসময় শুধুমাত্র পর্যটনপ্রেমীদের নহে, সার্বিক ভাবে পর্যটনশিল্পের। অতিমারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি বিপর্যস্ত। কিন্তু সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটনশিল্প। নিরাময়ের সম্ভাবনাটিও সুদূরপরাহত। একটি পর্যটনস্থলকে কেন্দ্র করিয়া বিভিন্ন সহযোগী শিল্প গড়িয়া উঠে। অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা হয় লক্ষাধিক মানুষের। তাহাদের এক বৃহৎ অংশ ইতিমধ্যেই কাজ হারাইয়াছেন, নয়তো বেতন পাইতেছেন না। হিসাব বলিতেছে, শুধুমাত্র এই রাজ্যের উত্তরবঙ্গেই গ্রীষ্মের ভরা মরশুমে প্রতি দিনের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা। অন্যান্য জায়গার ছবিগুলিও একই রকম ধূলিধূসর। এই বিপুল ক্ষতি সামাল দিতে এবং পর্যটনশিল্পের পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হইতেছে বিভিন্ন দেশে। যেমন, ইউরোপিয়ান কমিশন প্রস্তাব দিয়াছে একই মাত্রার কোভিড-আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে যাতায়াতের বিধিনিষেধ শিথিল করিবার। অস্ট্রিয়া ঘোষণা করিয়াছে আগামী ১৫ জুনের মধ্যে জার্মানির সঙ্গে সীমান্তটি সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করা হইবে। সুইটজ়ারল্যান্ড-সহ পূর্বের প্রতিবেশী দেশগুলির ক্ষেত্রেও তাহাদের একই পরিকল্পনা। নিউজ়িল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াও উভয় দেশের মধ্যে যাতায়াত শুরুর প্রস্তাবে সম্মত হইয়াছে। ভারতে পর্যটনশিল্পকে বাঁচাইবার লক্ষ্যে কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়ের তরফ হইতেই টাস্ক ফোর্স গঠন করা হইয়াছে।
কিন্তু, এই সব ব্যবস্থা সত্ত্বেও পর্যটনশিল্পের শীঘ্র পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। ভারতের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটি আরও জটিল, তাহার জনবৈচিত্র এবং নজরদারি ব্যবস্থায় শোচনীয় অভাবের কারণে। গুরুতর আঘাত আসিয়াছে ভরসার ক্ষেত্রটিতেও। যে ভরসা করিয়া মানুষ নিজ গৃহের নিরাপদ স্থানটুকু ছাড়িয়া এক অজানা জায়গায় যাইতে, অচেনা পরিবেশে রাত্রিযাপন করিতে সম্মত হইত, সংক্রমণের ভয় সেই জায়গাটি সম্পূর্ণ বিনষ্ট করিয়াছে। তাহা সহজে ফিরিবে না। সুতরাং অবিলম্বে বিকল্প আয়ের সংস্থান করিতে হইবে। পর্যটনশিল্পের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা লাগিবে। বণিক সভা সিআইআই-এর তরফ হইতে এই রাজ্যে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের একশত দিনের কাজে যুক্ত করিবার প্রস্তাব দেওয়া হইয়াছে সরকারকে। অবিলম্বে নগদ টাকা পৌঁছাইতে হইবে কর্মীদের হাতে। দার্জিলিঙের আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরও অনেক যুগ শোভা পাইবে, কিন্তু এই মানুষগুলির রোজগারের ব্যবস্থা না হইলে তাঁহারা অচিরেই ধনেপ্রাণে মরিবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy