শশী তারুর একটি মোক্ষম প্রশ্ন করিয়াছেন— ১৯৪৮ সাল হইতে চালু প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিলের নাম পাল্টাইয়া ‘পিএম-কেয়ারস’ করিয়া দিলেই তো চলিত, একটি নূতন তহবিল গঠন করিবার প্রয়োজন হইল কেন? প্রশ্নটি এক অর্থে রেটরিক্যাল; প্রতিটি ইঞ্চিতে নিজের নাম লিখিয়া যাইবার যে অদম্য তাড়না প্রধানমন্ত্রীকে চালিত করে, তারুর সেই প্রবণতাটিকেই খোঁচা দিয়াছেন। কেহ যদি সত্যই ইহার উত্তর জানিতে চাহে, দুইটি তহবিলের নিয়মকানুন মিলাইয়া পড়িতে হইবে। দেখা যাইবে, তহবিলের সাংবিধানিক অবস্থান, কে সেই তহবিলে দান করিতে পারিবেন, তহবিলের টাকা কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হইতে পারে, এমনকি দানের উপর আয়কর ছাড়— কিছুতেই দুইটি তহবিলে ফারাক নাই। তাহা হইলে কি এই নূতন তহবিলের প্রয়োজন কেবল নেহরু-যুগের ছোঁয়াচ বাঁচাইয়া চলিবার জন্য? না কি অন্য কোনও গূঢ় তাৎপর্য রহিয়াছে? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নাগরিক সমাজের প্রশ্নের উত্তর দেন না, এই ক্ষেত্রেও দেন নাই। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী তাঁহাকে পত্র লিখিয়া পরামর্শ দিয়াছেন, অবিলম্বে এই নূতন তহবিলকে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলের সহিত মিলাইয়া দেওয়া হউক, এবং সেই পুরাতন তহবিলে যে অর্থ জমা আছে, তাহাও ব্যবহৃত হউক কোভিড-১৯’এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী এই পরামর্শটিতে কান দিবেন বলিয়াও ভরসা হয় না— বিরোধীদের কথা বিবেচনা করিবার সু-অভ্যাস তাঁহাদের নাই। নূতন তহবিল বিষয়ে অস্বচ্ছতা হয়তো থাকিয়াই যাইবে— পুরাতন তহবিলে টাকা থাকা সত্ত্বেও নূতন তহবিল গঠন করিতে হয় কেন, দেশবাসী তাহা জানিতে পারিবেন না।
তবে, একটি কথা জানা যাইতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর এই তহবিলের প্রধান অছি; তাঁহার সঙ্গে থাকিবেন আর তিন অছি— স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী। তহবিলে কাহার নিকট হইতে কত টাকা জমা পড়িল, তাহা যেমন এই চার জনমাত্র জানিবেন, তেমনই সেই টাকা কোথায় কতখানি খরচ হইবে, সেই সিদ্ধান্তও করিবেন তাঁহারাই। জনগণকে জানাইবেন কি না, কতটুকু জানাইবেন, সেই সিদ্ধান্তও তাঁহাদেরই। তাঁহারা দেশের চার শীর্ষ মন্ত্রী, ফলে তাঁহাদের বিবেচনার উপর ভরসা না রাখা গণতন্ত্রের পক্ষেও সম্মাননীয় নহে। আশা করিতে হইবে, ত্রাণের টাকা বণ্টনের ক্ষেত্রে এই শীর্ষনেতারা নিরপেক্ষ হইবেন, সমদর্শী হইবেন। কিন্তু, সেই আশাই তো গণতন্ত্রের শেষ ভরসা হইতে পারে না। অনযদের পরামর্শ গ্রহণ কিংবা তথ্য জ্ঞাপন না করিবার উপযুক্ত হেতুও থাকিতে পারে না। বিশেষত এই কঠিন সময়ে, যখন প্রধানমন্ত্রী নিজের চেনা পথ হইতে সরিয়া বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের ফোন করিতেছেন, সর্বদল বৈঠকে বসিতে চাহিতেছেন। অর্থাৎ, তিনিও বুঝিতে পারিতেছেন, কোভিড-১৯’এর বিরুদ্ধে একা লড়িবার সাধ্য তাঁহাদের নাই, যুদ্ধে সকলকে পার্শ্বে প্রয়োজন। এখনও অবধি কোনও বিরোধী দল তাঁহার সহিত সহযোগিতা করিতে অসম্মতও হয় নাই। সে ক্ষেত্রে এই গণতান্ত্রিক অভ্যাসের পাশাপাশি ত্রাণ তহবিলের অছি হিসাবে শুধু তাঁহাদের চার জনের নাম— বেমানান নহে কি? বিরোধী দলের একাধিক নেতা, সমাজের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির কি সেই পরিসরে থাকা প্রয়োজন ছিল না? সর্বাগ্রে তাঁহাদের ডাকিয়া লওয়াই কি প্রকৃত নেতার কাজ নহে— সেই প্রধানমন্ত্রীর, যিনি সত্যই দেশের জন্য ‘কেয়ার’ করেন? জাতীয় স্বার্থে, দেশের প্রয়োজনে যে দল ভুলিয়া একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া লড়িতে হয়, ঘরে ঘরে মোমবাতি জ্বালাইবার নির্দেশের সঙ্গে এই কথাটিও বুঝাইয়া দেওয়া কি কর্তব্য ছিল না? নূতন ত্রাণ তহবিলকে অস্বচ্ছতায় মুড়িয়া প্রধানমন্ত্রী কি উহাই বুঝাইলেন না যে, এই কঠিন সময়েও গণতান্ত্রিক উপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক সৌজন্য তাঁহার রপ্ত হয় নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy