ফাইল চিত্র।
ইঙ্গিত মিলিতেছে, ঘরবন্দি দশার মেয়াদ বাড়িবে, অন্তত দেশের, এবং এই রাজ্যের, বহু এলাকাতেই। দুঃসময়ের শেষ না দেখিতে পাইলে মন অস্থির, অবসন্ন হইবারই কথা। কিন্তু বর্তমানের সঙ্কট ও ভবিষ্যৎ লইয়া সংশয়কে অতিক্রম করিয়া সার্বিক হিতচিন্তাই এখন জরুরি। অপরিচিত এই জীবাণুর বিরুদ্ধে সকল সম্ভাব্য সুরক্ষা না লইয়া স্বাভাবিক জীবনে ফিরিলে এত দিনের দুঃখস্বীকার ব্যর্থ হইবে। পূর্বঘোষিত সীমা ৩ মে অতিক্রম করিয়া লকডাউন আরও কত দিন চলিবে, কাহাদের কিছু ছাড় মিলিতে পারে, তাহা ক্রমে স্পষ্ট হইবে। কিন্তু এই দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি লইতে হইবে নাগরিককে। বিধিনিয়ম তাচ্ছিল্য করিবার প্রবণতা এড়াইতে হইবে। এক জনের বিধিভঙ্গ কী ভাবে অনেক প্রাণ বিপন্ন করিতে পারে, এই অতিমারি জানাইয়াছে। রাজ্য সরকারের ঘোষণা, সংক্রমণের তীব্রতা অনুসারে লাল, কমলা ও সবুজ এলাকায় ভাগ করা হইতেছে এই রাজ্যকে। কিন্তু কমলা বা সবুজ এলাকাও পুনরায় লাল হইতে পারে যদি নাগরিক যথেষ্ট সতর্ক না থাকিতে পারেন। সরকারি নিয়ন্ত্রণ শিথিল হইবার অর্থ নিয়ন্ত্রণহীনতা নহে, স্ব-নিয়ন্ত্রণ। পুলিশ মুখ ঘুরাইলেই নিয়মের মেয়াদ ফুরাইবে, এমন চিন্তা এই সঙ্কটকে আরও দীর্ঘ, আরও দুঃসহ করিবে।
এই দায়বোধের একটি দিক যেমন নাগরিকের জন্য, অপরটি প্রশাসনের জন্য। ব্যক্তিনাগরিক ও নাগরিক সংগঠনগুলির সহিত সমন্বয় করিয়া প্রশাসনকে এই কঠিন সময় উত্তীর্ণ হইতে হইবে। লকডাউন দীর্ঘ হইতেছে, আবার ঘরবন্দি দশা হইতে জীবনযাত্রাকে ক্রমে স্বাভাবিক করিবার সময়ও আসিয়াছে। লাল, কমলা, সবুজ এলাকার বিভাজন তারই পদ্ধতি। কিন্তু তাহা নাগরিককে জানাইতে কিছু বিলম্ব হইল না কি? ইতিপূর্বে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলিয়াছিলেন, কোনগুলি লাল এলাকা তাহা রাজ্যবাসীর জানিবার কী প্রয়োজন। আজ তাঁহার সরকার দৃশ্যত সেই প্রয়োজন অনুভব করিতেছে। সুলক্ষণ। নাগরিক স্বেচ্ছায় নিয়ম মানিবার সম্মতি না দিলে কেবল শাস্তির ভয় দেখাইয়া সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নহে। প্রশাসন রাজ্যবাসীর উপর ভরসা করিলে রাজ্যবাসীও প্রশাসনের উপর ভরসা করিতে পারিবেন। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ: এই রাজ্যে স্বচ্ছতার বিধি যথেষ্ট গুরুত্ব পায় নাই— কো-মর্বিডিটি অর্থাৎ সহব্যাধির তত্ত্ব খাড়া করিয়া কোভিড-মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখানো হইয়াছে। অথচ এই বিতর্কের প্রয়োজনই ছিল না— ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া বা তজ্জনিত মৃত্যুকে কেহ সরকারি ব্যর্থতা বলিয়া মনে করেন না। অহেতুক অস্পষ্টতার ফলে ভয় ও বিভ্রান্তি বাড়িয়াছে। সেই ধোঁয়াশা যদি কমে, নাগরিক যথেষ্ট ওয়াকিবহাল হন এবং সহযোগিতার হাত বাড়াইয়া দেন, তাহাতে রাজ্যের মঙ্গল।
স্বচ্ছতা সকল সময়েই সুপ্রশাসনের শর্ত। কিন্তু আজ স্বচ্ছতার মাধ্যমে সহযোগিতা— এই নীতি অপরিহার্য হইয়া উঠিয়াছে। চিনের বিজ্ঞানীরা বলিতেছেন, অপরাপর নানা রোগজীবাণুর ন্যায় করোনাভাইরাসকে সম্পূর্ণ প্রতিহত করা যাইবে না। তাহা কোনও না কোনও রূপে থাকিয়া যাইবে এবং সংক্রমণ বারংবার ফিরিয়া আসিতে থাকিবে। দুনিয়া জুড়িয়া বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এই বিষয়ে একমত। ইহার একটি অর্থ: লকডাউন উঠিবার পরেও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিবিধ কৌশল গ্রহণ করিতে হইবে। আবার তাহার পাশাপাশি অর্থনীতির বিপর্যয়ে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের বিপন্নতা, তাহার প্রতিবিধান করিতে হইবে। ইহার কোনওটিই প্রশাসন একতরফা চেষ্টায় পারিবে না, নাগরিক শক্তির উপর নির্ভর করিতে হইবে। বস্তুত, নাগরিক সমাজের সহিত রাষ্ট্রের সহযোগিতার এক নূতন রূপ এবং প্রক্রিয়া এখন অত্যাবশ্যক হইয়া উঠিয়াছে। সেই কারণেই ইহা প্রশাসনের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করিয়া নাগরিকের সহযোগিতা প্রার্থনা করিবার সময়।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy