-প্রতীকী ছবি।
মধ্যপ্রদেশে তবু চেষ্টাটুকু ছিল। যোগী আদিত্যনাথ সেই বালাই রাখেন নাই। কার্যত বলিয়া দিয়াছেন, উত্তরপ্রদেশে কোনও শ্রম আইনের তোয়াক্কা করিতে হইবে না— বিনিয়োগ আসিলেই যথেষ্ট। চিন হইতে নাকি এক হাজার শিল্প উত্তরপ্রদেশে আসিতেছে। তাহাদের স্বাগত জানাইতেই আদিত্যনাথের সিদ্ধান্ত, অনুমান করা চলে। শুধু বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ বা গুজরাত নহে, কংগ্রেস-শাসিত রাজস্থান, নবীন পট্টনায়কের ওড়িশা— বহু রাজ্যেই শ্রম আইন কম-বেশি শিকায় উঠিতেছে। গোটা দেশ যখন কোভিড-১৯ অতিমারিতে ধ্বস্ত, শ্রমিকরা আদ্যোপান্ত বিপন্ন, ঠিক তখনই সরকার কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের যাবতীয় নিরাপত্তা প্রত্যাহার করিয়া লইলে সিদ্ধান্তটি লইয়া প্রশ্ন উঠিবে বইকি। অস্বীকার করা চলে না যে ভারতে শ্রম আইন বহু প্রাচীন, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনমনীয়। অর্থনীতির স্বার্থেই তাহার সংস্কার জরুরি। বস্তুত, কেন্দ্রীয় সরকার যে শ্রমবিধি প্রণয়ন করিয়াছে— যাহার একাংশ সংসদের কক্ষে পেশ করাও হইয়াছে— তাহাতে এই সংস্কারের একটি দিশা স্পষ্ট। কাজেই, এই মুহূর্তে শ্রম আইনে কিছু পরিবর্তন করিতে চাহিলে সেই শ্রমবিধি অনুসরণ করা চলিত। তাহার পরিবর্তে আদিত্যনাথরা যে পথে হাঁটিলেন, তাহাতে শ্রমিকদের যথেচ্ছ অপব্যবহার করিবার ব্যবস্থাটি অন্তত তিন বৎসরের জন্য পাকা হইয়া গেল। রাজ্যকে বিনিয়োগবান্ধব করিয়া তোলা সরকারের কাজ, বিলক্ষণ— কিন্তু শ্রমিকের মৌল অধিকারগুলিকে বিসর্জন দিয়া নহে।
এই কথার অর্থ, শ্রেণি সংগ্রামের হা-ক্লান্ত মার্জারটিকে বাহির করার প্রচেষ্টা নহে। কাণ্ডজ্ঞানই বলিবে, কেন শ্রমিকের স্বার্থরক্ষা বৃহত্তর অর্থে গোটা অর্থব্যবস্থার জন্য, এবং প্রত্যক্ষ ভাবে বিনিয়োগের জন্যই প্রয়োজন। পুঁজি নমনীয় শ্রম বাজার চাহে বটে, কিন্তু তাহারও অধিক চাহে লগ্নির শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। শ্রমিকরা আইনি রক্ষাকবচ হারাইলে কাল না হউক পরশুর পরের দিন বিক্ষোভ করিবেন। এবং, তাহা আইনত বৈধ না হওয়ায় সেই বিক্ষোভ চরিত্রে অশান্ত হওয়াই স্বাভাবিক। সেই পরিবেশ শিল্পোৎপাদনের বহুল ক্ষতি করিবে। আদিত্যনাথরা হয়তো ঠোঁট উল্টাইয়া বলিবেন, তাঁহাদের রাজ্যের পুলিশের বন্দুকে কোনও প্রতিরোধক পরানো নাই— বিক্ষোভ কী ভাবে ঠান্ডা করিতে হয়, পুলিশ জানে। কিন্তু, শ্রমিকের হাতে উপার্জন কমিলে, তাহার ক্রয়ক্ষমতা কমিলে বাজারের সার্বিক চাহিদার যে ক্ষতি, তাহা পূরণ করিবে কে? পুঁজির হাতছানিতে বহু ক্ষেত্রেই একটি কথা গুলাইয়া যায়— শ্রমিক শুধু কাজই করেন না, তাঁহারা উপভোক্তাও বটে। তাঁহাদের ক্রয়ক্ষমতার ক্ষতি করা আসলে পুঁজিরই বিরোধিতা।
এই মুহূর্তে শ্রম আইন বিসর্জন দিলেও উৎপাদন বাড়িবে কি? যখন বাজারে গভীর মন্দা চলে, তখন শ্রম আইন শিথিল করায় বিপুল লগ্নি হইয়াছে বা প্রভূত উৎপাদন বৃদ্ধি হইয়াছে, এমন উদাহরণ দুনিয়ার ইতিহাসে নাই বলিলেই চলে। বাজার যখন চাহিদার অভাবে জীর্ণ, তখন শ্রমিকের সহজলভ্যতা বা তাঁহাদের ছাঁটাই করিবার সুবিধার উপর উৎপাদনের পরিমাণ নির্ভর করে না। বস্তুত, ভারতের ন্যায় দেশে শিল্পোৎপাদনের হার মূলত পরিকাঠামোর অভাব, দক্ষ কর্মীর অপ্রতুলতা, সরকারি দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদির দ্বারা সীমাবদ্ধ— কাজেই, বিনিয়োগ টানিতে চাহিলে এই সমস্যাগুলির সমাধান করা অনেক বেশি জরুরি ছিল। মুখ্যমন্ত্রীরা সিদ্ধান্ত করিবার পূর্বে দেখিতে পারিতেন, বিশ্বের অন্য দেশগুলিতে কী হইতেছে। ভারত ব্যতীত কোনও দেশই এই সময়ে শ্রম আইন শিথিলের এমন দানবীয় সিদ্ধান্ত করিতেছে না— এমনকি চিনও নহে। বস্তুত, বহু দেশের সরকার বেসরকারি ক্ষেত্রের শ্রমিকের বেতনের একটি অংশের ভারও বহন করিতেছে। এ দেশের সংস্কারকারীরা বিবেচনাবোধের পরিচয় দিতেছেন না।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy