Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

ক্ষুধার রাজ্যে

এই বিপুল বিপর্যয়ের মোকাবিলার কাজটি সরকারি প্রকল্পের বাঁধা ছকে ফেলিতে চাহিলে বিপন্নতা আরও বাড়িবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২০ ২৩:৪৮
Share: Save:

সহস্রশির মহানাগের ন্যায় মাথা তুলিয়াছে ক্ষুধার মহামারি। ভারতের অগণিত জনপদ হইতে কাতর আবেদন আসিতেছে— অন্ন চাই। হাতের সঞ্চয় ফুরাইয়াছে, ঘরের চাল ফুরাইয়াছে, অথচ রোজগারের উপায় নাই। লৌহকপাটের ন্যায় সকল পথ রুদ্ধ করিয়াছে অতিমারি। কবে ইহার শেষ, কবে জীবন ছন্দে ফিরিবে, তাহার উত্তর নাই বলিয়া অনাহারের আশঙ্কা বাড়িতেছে। ক্ষুধার এই করাল রূপ ভারত দীর্ঘ দিন দেখে নাই। মনে হইয়াছিল, দুর্ভিক্ষ এখন ইতিহাস। দরিদ্রের সংখ্যা কমিয়াছে, খাদ্যের অধিকার আইন পাশ হইয়াছে, খাদ্য সুরক্ষার জন্য বিবিধ প্রকল্প চলিতেছে। বন্ধ চা বাগান অথবা প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রাম হইতে কখনও দুই একটি অনাহারে মৃত্যুর খবর আসিলে সেগুলি অনেকের বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় নাই। সেই ‘ফ্যান দাও, ফ্যান দাও’ আর্তি আর ফিরিবে না, এমনই মনে হইয়াছিল। আজ দিল্লি আইআইটির সমীক্ষা বলিতেছে, তিরুপুর, আহমেদাবাদ, দিল্লিতে গৃহবন্দি পরিযায়ী শ্রমিকের অধিকাংশ খাদ্যের অভাবে বিপন্ন। বহু খেতমজুর পরিবার রেশন পায় নাই। সরকারি ও অসরকারি ত্রাণ যাঁহাদের কাছে পৌঁছাইতে পারে নাই, তাঁহাদের সংখ্যা বাড়িবার আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করিয়াছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মৃত্যুকে ছাড়াইতে পারে অনাহারে মৃতের সংখ্যা।

এই বিপুল বিপর্যয়ের মোকাবিলার কাজটি সরকারি প্রকল্পের বাঁধা ছকে ফেলিতে চাহিলে বিপন্নতা আরও বাড়িবে। সরকারি প্রকল্পের গোড়াতেই যোগ্যতা বিচার করিবার একটি পর্ব থাকে। আবেদন হইতে সুবিধা-দান পর্যন্ত অনেকগুলি ধাপ পার হইতে হয়, তাহার প্রতিটিতেই অযোগ্যকে বাদ দিবার প্রক্রিয়া চলিতে থাকে। এই পদ্ধতি এখন অচল। ক্ষুধার অন্ন পাইবার যোগ্য নহে, এমন কেহ কি থাকিতে পারে? আর্ত ব্যক্তি কোন রাজ্য, এমনকি কোন দেশের নাগরিক, কাহার কোন রঙের রেশন কার্ড, তাহা বিচার করিবার সময় এখন নহে। এখন পঞ্চায়েতের প্রতিটি সংসদে, পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্নশালা খুলিতে হইবে। যে খাইতে চাহিবে, তাহাকেই খাদ্য দিতে হইবে। ধরিতে হইবে, যে ক্ষুধার্ত নহে, সে ত্রাণগ্রহণের লজ্জা ও ত্রাণের নিম্নমানের খাদ্য লইবার দুঃখ স্বীকার করিবে না। দ্রুত এই ব্যবস্থা চালু করিতে সরকার অসরকারি সংগঠনগুলির সহায়তা লইতে পারে, কিন্তু ত্রাণকার্যে সমন্বয় এবং ত্রাণসামগ্রী জুগাইবার মূল দায়িত্বটি সরকারকেই গ্রহণ করিতে হইবে। একদা বিশ্বযুদ্ধের মোকাবিলায় গৃহীত প্রশাসনিক নীতির জন্য বাংলার মানুষ খাদ্যবঞ্চিত হইয়াছিল। আজ অতিমারি রুখিতে গৃহীত নীতির জন্য সরকারি গুদামে যথেষ্ট খাদ্য মজুত থাকা সত্ত্বেও অগণিত মানুষ অর্ধাহারে রহিয়াছে। অন্ন তাহাদের নাগালের বাহিরে। প্রসঙ্গত, এই সময়েই সরকারি গুদামের উদ্বৃত্ত চাল হইতে অ্যালকোহল উৎপাদনের উদ্যোগ করিতে চাহিয়াছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাহা ক্ষুধার্তের প্রতি সহমর্মিতার পরিচয় নহে।

ক্ষুধার্তের প্রতি প্রথম কর্তব্য সহৃদয়তার প্রদর্শন। ‘যথেষ্ট হইল’, এই মনোভাব ত্যাগ করিতে হইবে। প্রয়োজন যথেষ্ট বরাদ্দ। কেন্দ্র যে ১.৭ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করিয়াছে, তাহা জাতীয় উৎপাদনের এক শতাংশেরও কম। অর্থনীতিবিদরা বলিতেছেন, ইহাতে দরিদ্রের চাহিদা মিটিবে না, অর্থনীতিও উজ্জীবিত হইবে না। ভারতে চৌদ্দ কোটি মানুষ কাজ হারাইয়াছেন, লকডাউন উঠিবার পরেও রোজগারহীনতা সহজে ঘুচিবার নহে। অতএব একটি দীর্ঘ সময় ধরিয়া বিপন্নের ঘরে ঘরে ক্ষুধার অন্ন এবং আর্থিক অনুদান পৌছাইতে হইবে। কী প্রকারে এই কর্তব্য পালন করা হইবে, কী করিয়া সরকারি সহায়তা সকলের নিকটে আনা সম্ভব, কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে এখনই তাহার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করিতে হইবে। ক্ষুধার্ত নাগরিকের মুখে অন্ন তুলিয়া দেওয়াই সরকারের প্রথম কর্তব্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy