গত্যন্তর নাই। রাস্তায় বাহির হইলে সংক্রমণের আশঙ্কা অধিক, কিন্তু বাহির না হইয়াও উপায় নাই। দীর্ঘ লকডাউনে বহু মানুষ রোজগারহীন, অনেকের অন্ন সংস্থানের পথটিও প্রায় বন্ধ হইয়াছে, জীবিকার টানে বাধ্যত পথে নামিয়াছে জনতা। জীবনকে উপেক্ষা করিয়াই। যে কোনও স্বাভাবিক কর্মদিবসে গণপরিবহণে ভিড় দেখিলেই এই অসহায় পরিস্থিতি বোঝা যায়। যদিও অদ্যাবধি জনতার গতিবিধি ও ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করিতে কিছু প্রকার পরিবহণ পরিষেবা স্থগিত রহিয়াছে, তবু তাহাতেও জনতা ঘরবন্দি হয় নাই। সংক্রমণের হারও হ্রাস পায় নাই, বরং স্থানে স্থানে ভিড় ঘন হইয়াছে। স্পষ্টতই, মানুষকে ঘরবন্দি করিয়া ভাইরাসের মোকাবিলা করিবার পন্থাটি কাজ করিতেছে না, করিবেও না। অতএব ভাবা প্রয়োজন, গণপরিবহণকে যত দূর সম্ভব স্বাভাবিক করিয়াও কী ভাবে তাহাকে নিরাপদ রাখা যায়। মেট্রো রেল চালু করিবার সিদ্ধান্তে বিলক্ষণ ঝুঁকি আছে, কিন্তু সিদ্ধান্তটি না করিয়াও উপায় ছিল না। স্বাভাবিকতায় ফিরিতে হইবে বইকি। বরং, মেট্রো চালু হইলে মানুষের নিকট বিকল্পের সংখ্যা বাড়িবে, ভিড় বণ্টিত হইয়া যাইবে।
তথাপি, গণপরিবহণে বিকল্পের সংখ্যার সহিত সংক্রমণের হার ব্যস্তানুপাতিক না হইবার আশঙ্কা আছে। যত বেশি যান পথে নামিবে, তত বাড়িবে ভিড় করিবার সুযোগ। সেই অনভিপ্রেত বিপদ এড়াইবার জন্য কিছু পদ্ধতি লইয়া চিন্তাভাবনা চলিতেছে। পরিকল্পনায় আসিয়াছে টোকেন ব্যবস্থা বাতিল এবং আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব— স্মার্ট কার্ড থাকিলেও ই-পাস ব্যতীত কেহ মেট্রো সফর করিতে পারিবেন না। এই সকল পদক্ষেপ পরিষেবা চালু করিবার অত্যাবশ্যক শর্ত হওয়াই বিধেয়। বিধিসমূহ কার্যকর হইবে কি না তাহা সময় বলিবে, কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে, কলিকাতার রাস্তায় যাহা অসম্ভব, ভূগর্ভে তাহা বাস্তবায়িত হইলেও হইতে পারে। মেট্রোয় যাত্রীরা যে ভাবে যানে উঠানামা করেন, তাহা সাধারণ বাস বা লোকাল ট্রেন অপেক্ষা বহুলাংশে শিষ্ট। অন্যত্র জনতার যে উপদ্রব ‘স্বাভাবিক’, মেট্রো স্টেশনে বা কামরায় তাহা কল্পনাতীত। উক্ত পার্থক্য হইতে আশা করা যায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরিবার ন্যায় বিধি এই ক্ষেত্রে বলবৎ করা হয়তো সহজতর হইবে। তবে কর্তৃপক্ষকেও বুঝিতে হইবে, সংখ্যায় কম রেক চালাইবার সিদ্ধান্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণের মৌলিক উদ্দেশ্যটির পরিপন্থী। মোট রেকের সংখ্যা বাড়িলে এক একটিতে যাত্রিসংখ্যা কম হইবে, এই সহজ যুক্তিটি তাঁহাদের বোঝা উচিত।
পরিষেবা শেষ অবধি সুষ্ঠু ভাবে চলিবে কি না, তাহা জনসাধারণের উপর নির্ভর করে। তাঁহারা যদি এই ‘নূতন স্বাভাবিকতা’কে মানিয়া লন, একমাত্র সেই ক্ষেত্রেই পরিবর্তিত ব্যবস্থাটি মসৃণ ভাবে চলিবে। বস্তুত, লকডাউন হউক বা নিয়ন্ত্রিত পরিষেবা, সবই নাগরিকের হিতার্থে। আপনহারা হইয়া রাস্তায় বাহির হওয়া, যানবাহনে ভিড় করা সেই হিতের পথে বাধাস্বরূপ। বাসে-ট্রেনে এত কাল উপদেশ মিলিত: ‘মালের দায়িত্ব আরোহীর’; সৈয়দ মুজতবা আলি থাকিলে বলিতেন, এক্ষণে মালের সহিত স্ব স্ব জানের দায়িত্বটিও তাঁহাদের লইতে হইবে। বিপদের গুরুত্ব বুঝিয়া এই নাগরিক কর্তব্য সম্পাদনে তাঁহারা কতখানি তৎপর হন, তাহার উপরই সম্পূর্ণ ব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করিতেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy