Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

করোনাউৎসব

বিশ্বের অনেক দেশেই সাধারণ মানুষ হাততালি দিয়া, বাজনা বাজাইয়া চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতেছেন।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০০:০৫
Share: Save:

দিকে দিকে সেই বার্তা রটিতে সময় লাগে নাই— রবিবার বৈকাল পাঁচ ঘটিকায় থালাবাসন পিটিতে হইবে। কেন, প্রধানমন্ত্রী তাহার এক কারণ বলিয়াছিলেন, সমাজমাধ্যম আর এক কারণ জানাইয়াছে। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ দিতে, না কি ঘটিবাটির শব্দে মহাজাগতিক কম্পাঙ্ক তৈরি করিয়া করোনাভাইরাস নিধনের সহজ সমাধানে উদ্বুদ্ধ হইয়া এই সর্বজনীন শব্দ-যজ্ঞ হইল, বলা মুশকিল। কিন্তু দিনভর ‘জনতা কারফিউ’ পালন করিবার পর বহু জায়গাতেই বিকালে রাস্তায় যে মিছিল নামিল, তাহা চোখধাঁধানো। বস্তুত, মগজে কারফিউ না থাকিলে এই কাণ্ডটি ঘটিতে পারিত না। অত্যুৎসাহী ভারতীয়রা এই ঘণ্টা-বাদনকে উৎসবে পরিণত করিলেন। রসিকতা ঘুরিতেছে, করোনাভাইরাসও নাকি ঘাবড়াইয়া অস্থির— বুঝিতে পারিতেছে না যে সে একটি মারণ ভাইরাস, না কি উৎসবের প্রাণকেন্দ্র! এই সামাজিক ছেলেখেলা অবশ্য অপ্রত্যাশিত নহে। যে কোনও ঘটনাক্রমকেই উৎসবে পরিণত করিবার অভ্যাস ভারতীয়দের মজ্জাগত। কেহ বলিতে পারেন, দারিদ্র ও সংগ্রাম যাঁহাদের নিত্যসঙ্গী, এই ভাবেই তাঁহারা বাঁচিবার রসদ খুঁজিয়া লন। কথাটি সত্য কি না, করোনাভাইরাসের দাপট কমিলে সে বিষয়ে কূটতর্ক করা যাইবে। আপাতত বোঝা প্রয়োজন, রবিবার বিকালে যাহা ঘটিল, তাহা কেন সমস্যাজনক।

ঘণ্টা বাজাইবার জাতীয় কর্মসূচিটি যে আত্মঘাতী হইয়া উঠিতে পারে, তাহা অনুমান করা সহজ ছিল। বিশ্বের অনেক দেশেই সাধারণ মানুষ হাততালি দিয়া, বাজনা বাজাইয়া চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতেছেন। ভারতেও তাহা করিতে চাহিবার মধ্যে একটি নকলনবিশি প্রবণতা স্পষ্ট। তবে সমস্যা সেখানে নহে। সমস্যা এইখানেই যে, কোথায় থামিতে হয়, এই পরিমিতিবোধটি ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ কম। আরও মুশকিল যে, বিপুল সংখ্যক মানুষ সম্ভবত বিশ্বাস করিয়া বসিয়াছেন যে থালা পিটিবার শব্দের মহাজাগতিক প্রতিক্রিয়ায় করোনাভাইরাস-নিধন সম্পন্ন হইতেছে। এখন সেই শত্রুনিধন-আনন্দে তাঁহারা যদি ‘স্বাভাবিক’ জীবনে ফিরিবার চেষ্টা করেন, তবে মহামারি-প্রতিরোধের কাজটি বিপর্যস্ত হইবেই। ভারতের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সীমিত— কোভিড-১৯ যদি তৃতীয় বা চতুর্থ ধাপে প্রবেশ করিলে সেই ধাক্কা সামলাইবার সাধ্য ভারতের নাই। এই পরিস্থিতিতে বিপদের সম্ভাবনাকে জোরদার করিয়া তোলা দরকার। এই বাদন-কর্মসূচি দিয়া তাহা সাধন করিবার আশা নাই। যিনি এমন আশা করেন, তাঁহার কাণ্ডজ্ঞান ও দায়িত্বজ্ঞানের অভাব প্রকট।

প্রধানমন্ত্রীর তীব্র সমালোচকরা বলিবেন যে, স্রেফ চমক লাগাইবার তাগিদেই এহেন কর্মসূচির প্রণয়ন। এই সমালোচনা সত্য কি না জানা নাই। কিন্তু সন্দেহ নাই যে, অন্তত একটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্টভাষণ অত্যন্ত জরুরি ছিল। বাসন-বাদনে বা হাততালি দানে যে ভাইরাস ঠেকানো যাইবে না, বিশ্বাসপ্রবণ ভক্তপ্রাণ দেশবাসীকে তাহা প্রাঞ্জল ভাবে বুঝাইবার দরকার ছিল। ভাইরাস ঠেকাইতে কী কী করণীয়, তাহার আন্তর্জাতিক নিদর্শন রহিয়াছে— চিন বা দক্ষিণ কোরিয়া যে ভাবে এই বিপদের মোকাবিলা করিয়াছে, তাহাতে অনেক শিক্ষণীয় বস্তু রহিয়াছে। বিদেশের উদাহরণের পাশাপাশি, ভারতেই পিনারাই বিজয়ন ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদাহরণও রহিয়াছে। যে ভঙ্গিতে এই দুই নেতা পরিস্থিতি সামলাইতেছেন, এবং নিজ নিজ রাজ্যের মানুষকে আশ্বস্ত করিতেছেন, তাহা দৃষ্টান্তযোগ্য। বিপরীতে, মহামারির সামনে দাঁড়াইয়াও যদি কেবল বিজ্ঞান-অবজ্ঞাপূর্বক বাহ্যিক ‘ধামাকা’ই প্রধান হইয়া উঠে, তবে এই সব সদর্থক দৃষ্টান্ত হইতে শিক্ষালাভ অসম্ভব। সঙ্গে সঙ্গে, যে কোনও বিষয়কেই লঘু ধামাকায় পরিণত করিতে ব্যস্তসমস্ত সমাজের পক্ষে নিজেকে গুরুতর পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করাও অসম্ভব।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Janta Curfew
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy