ছবি: সংগৃহীত
ভারতে আগত সকল বিদেশির স্বাস্থ্য পরীক্ষা হইতেছে। রাজস্থানে একটি বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন বাতিল হইয়াছে। রাষ্ট্রপতি ভবনে বাতিল হইয়াছে হোলির উৎসব। করোনাভাইরাসের বিস্তার রুখিতে এই সকল ব্যবস্থার প্রতিটিই অত্যন্ত জরুরি। তাহাতে স্বাগত জানাইতে হইবে। ‘বাড়াবাড়ি’ বলিয়া সতর্কবার্তা অবজ্ঞা করিলে ভুল হইবে। দেশবাসীকে এই কঠিন সত্যটি স্বীকার করিতে হইবে যে, মহামারির করাল ছায়া-কবলিত এই সময় ‘স্বাভাবিক’ নহে। অতএব, অন্য সময়ে নাগরিক যে স্বাধীনতা প্রত্যাশা করিতে পারে, এখন তাহা দাবি করা ভুল। করোনা-সংক্রমণের আশঙ্কা অপসৃত না হওয়া পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধের সকল ব্যবস্থা মানিতে হইবে। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা সরকারের কর্তব্য। সেগুলির অনুসরণ দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য। সরকারি নির্দেশের যৌক্তিকতা লইয়া প্রশ্ন উঠিতে পারে। যেমন, ভারত চারটি করোনা-সংক্রমিত দেশের সকল যাত্রীর ভারতীয় ভিসা বাতিল করিয়াছে। মনে হইতে পারে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করিয়াই ভিসা বাতিলের প্রয়োজন ছিল কি? অবশ্যই ছিল, বহু পূর্বেই তাহা করিতে হইত। ইটালি হইতে আগত ষোলো জন পর্যটক যে আক্রান্ত, তাহার প্রমাণ মিলিয়াছে। ভারতের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এক সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে কত ব্যক্তি আসিয়াছেন, তাহা নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব। অতএব গোড়াতেই প্রতিরোধ করিতে হইবে। করোনাভাইরাস দেশের অভ্যন্তরে ছড়াইয়া পড়িলে কী ভয়ানক পরিস্থিতি হইতে পারে, কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে অর্থনীতি, চিন কি তাহা দেখায় নাই?
অতএব অমুক জায়গায় যাইলে, বা তমুক কাজটি করিলে কী করিয়া সংক্রমণ হইতে পারে, এমন তর্ক জুড়িবার সময় ইহা নহে। বৈজ্ঞানিকেরা ইতিমধ্যেই জানাইয়াছেন যে, সংক্রমিত ব্যক্তির মধ্যে রোগের লক্ষণ ফুটিয়া উঠিতে সময় লাগে। যাহার মধ্যে ‘সুপ্ত’ অবস্থায় ভাইরাস রহিয়াছে, তিনি অজান্তে অপরাপর মানুষকে সংক্রমিত করিতেছেন। কে নিরাপদ, আর কে নহে, তাহার আগাম নির্ধারণ প্রায় অসম্ভব। তাই সতর্কতার প্রধান উপায়, বহু ব্যক্তির মধ্যে দৈহিক সংযোগ ও নৈকট্য যথাসম্ভব কমাইয়া আনা। যেখানেই অনেক মানুষ, সেখানেই সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক গুণ বাড়িয়া যায়। এই কারণে বেশ কিছু দেশে কর্পোরেট সংস্থা কর্মীদের বাড়ি হইতে কাজ করিবার নির্দেশ দিয়াছে। দফতর কিংবা পরিবহণ এড়াইতে পারিলে ঝুঁকি কমিবে। একই কারণে এ দেশে কয়েকটি স্কুলও বন্ধ হইয়াছে, হয়তো আরও হইবে। চিনে কয়েক লক্ষ স্বেচ্ছাসেবককে নিয়োগ করা হইয়াছে গ্রাম ও শহরের বাসিন্দাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করিতে। সে দেশের অর্ধেকেরও অধিক নাগরিক এখন নজরাধীন। রেলযাত্রা কেন প্রয়োজন, বুঝাইতে না পারিলে স্টেশন হইতে ফিরিতে হইতেছে যাত্রীদের। রোগের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের মূলমন্ত্র, অধিকে দোষ নাই।
এবং, রোগ প্রতিরোধে সর্বশক্তিতে ঝাঁপাইতে হইবে। বিপদটির গুরুত্ব বুঝিয়া প্রয়োজনে সরাইয়া রাখিতে হইবে অন্যান্য বিবাদ, অসহযোগ। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানটি তাৎপর্যপূর্ণ। কেন্দ্রের সতর্কতা প্রচারের উদ্যোগকে দিল্লির দাঙ্গা হইতে ‘নজর ঘুরাইবার কৌশল’ বলিয়া মন্তব্য করিয়াছিলেন তিনি। কিন্তু, পরের দিনই জানাইয়াছেন, ভেদাভেদ ভুলিয়া তাঁহার প্রশাসন ও সরকার এই মহামারি ঠেকাইতে সর্বাত্মক চেষ্টা করিবে। এই রাজনৈতিক বার্তাটি জরুরি। সাধারণ মানুষ যদি বোঝে যে সরকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করিতে সত্যই দায়বদ্ধ, তবে হয়তো মানুষের আচরণেও দায়বদ্ধতা আসিবে। নাগরিক সুশৃঙ্খল হইলেই মহামারির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় লড়াই সফল হইতে পারে। মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির কাজটিও সরকারকেই করিয়া চলিতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy