Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in India

প্রচ্ছন্ন চালিকাশক্তি

সাম্প্রদায়িকতাই এখন ভারতীয় রাজনীতি ও সমাজের চালিকাশক্তি। ফলে, তবলিগি জামাত আর দেশের সম্পূর্ণ মুসলমান জনসংখ্যার মধ্যে ফারাক কী, মুসলমানদের কত শতাংশ জামাতের এই কাণ্ডজ্ঞানহীনতাকে বিন্দুমাত্র সমর্থন করেন না, কিছুই ভাবিবার দায় থাকিল না।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২০ ০০:০২
Share: Save:

শোনা গিয়াছিল, অতিমারির বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া লড়িবে গোটা দেশ। সেই (বি)ভ্রম ঘুচিল দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজ়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আসিবার পর। অবস্থা এমনই দাঁড়াইয়াছে যে, তবলিগি জামাতের ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রং চাপাইবার প্রবণতা বন্ধ করিবার নির্দেশিকা চাহিয়া সম্প্রতি আবেদন জমা পড়িয়াছে সুপ্রিম কোর্টে। অর্থাৎ, জামাতে উপস্থিত দুই হাজার মুসলিমের আইন অমান্য করিয়া জমায়েত করিবার অপরাধে দেশের কুড়ি কোটি মুসলিমের কাঠগড়ায় দাঁড়াইবার উপক্রম। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কিছু বলিবার পূর্বেই, তথ্যপ্রমাণ মিলিবার পূর্বেই ক্ষমতার কেন্দ্র হইতে জানাইয়া দেওয়া হইল, দিল্লির এই জমায়েতের কারণেই সর্বনাশ হইল— এই জমায়েতের পর হইতেই নাকি দেশে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি ৪.১ দিনে দ্বিগুণ হইতেছে। জামাত না থাকিলে এই রোগ ছড়াইত অনেক কম গতিতে। তাহার পর অবশ্য ইহাও জানা গেল, কথাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কিন্তু, তত ক্ষণে ক্ষতি যাহা হওয়ার, হইয়াছে। সাম্প্রদায়িকতাই এখন ভারতীয় রাজনীতি ও সমাজের চালিকাশক্তি। ফলে, তবলিগি জামাত আর দেশের সম্পূর্ণ মুসলমান জনসংখ্যার মধ্যে ফারাক কী, মুসলমানদের কত শতাংশ জামাতের এই কাণ্ডজ্ঞানহীনতাকে বিন্দুমাত্র সমর্থন করেন না, কিছুই ভাবিবার দায় থাকিল না। তাল মিলাইয়া গুজবেরও গতি বাড়িল— কোথাও রটিল, মুসলমানরা থুতু ফেলিয়া ইচ্ছাকৃত ভাবে রোগ ছড়াইতেছেন; কেহ জানাইলেন, মুসলিমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর চড়াও হইতেছেন, তাঁহারা চিকিৎসা করাইতে নারাজ। সাম্প্রদায়িতকার বিষ তীব্রই ছিল, অতিমারির সময়ে তাহা তীব্রতর হইল।

কেন্দ্রীয় সরকার এখন কিছু সংযত হইয়াছে। করোনভাইরাস প্রসঙ্গে তবলিগি জামাত বা নিজামুদ্দিন মারকাজ়ের কথা আর সরকারি কণ্ঠে শোনা যাইতেছে না। কেহ বলিতে পারেন, ঘটনার আকস্মিকতায় কর্তাদের কাণ্ডজ্ঞান গুলাইয়া গিয়াছিল— তথ্যপ্রমাণ দেখিবার পর তাঁহারা ভুল বুঝিতে পারিয়াছেন। কথাটিতে বিশ্বাস করিতে পারিলে ভারতীয় গণতন্ত্রের স্বস্তি মিলিত। কিন্তু, ছকটি এমনই স্পষ্ট যে কাণ্ডজ্ঞানহীনতার নিষ্পাপ উদাহরণ বিশ্বাস করিতে ভরসা হইতেছে না। গোড়ায় সরকারি তরফে মুসলমান ও সংক্রমণের মধ্যে সরলরৈখিক সম্পর্কের কথা ভাসাইয়া দেওয়া হইল। স্বাভাবিক ভাবেই কথাটি জনগণের মধ্যেও ছড়াইল। তাহাদের একাংশ বিদ্বেষের কারণে কথাটিকে ধ্রুবসত্য মানিল, আর একটি বড় অংশ ভাবিল, সরকারি কর্তা যখন বলিতেছেন, কথাটি নিশ্চয় মিথ্যা নহে। সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য যে দেশের মুসলমানরাই অনেকাংশে দায়ী, সেই ধারণা জনগণের মধ্যে ছড়াইয়া গেল। দিলীপ ঘোষরা কথাটি লুফিয়া লইলেন। অতঃপর, সরকারি কর্তা আর তবলিগের কথা বলিলেন কি না, সংখ্যালঘু কমিশন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে কী নির্দেশ দিল— এই প্রশ্নগুলি গৌণ হইয়া যায়। মুসলমানরাই যে কোভিড সংক্রমণের জন্য দায়ী, এই কথাটি রাজনৈতিক সংলাপের অন্তর্ভুক্ত হইয়া যায়। গত কয়েক বৎসর ভারতীয় রাজনীতি এই ভাবেই চলিয়াছে। আশা ছিল, অতিমারির সম্মুখে দাঁড়াইয়া অন্তত ভারত এই সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠিতে পারিবে। কিন্তু, তাহা বোধ হয় ভিন্ন সাধনার বিষয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India COVID-19 Nizamuddin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy