সম্প্রতি রাজ্যের কিছু চিকিৎসা-চিত্র সংবাদে আসিয়াছে, তাহা উদ্বেগজনক। অ্যাম্বুল্যান্স-চালকরা রোগীকে রাস্তায় ফেলিয়া পলাইতেছেন। তীব্র শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত একাধিক রোগী নানা হাসপাতালে প্রত্যাখাত হইতেছেন। সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন ও অন্যান্য অত্যাবশ্যক চিকিৎসা-সামগ্রীর অভাবে রোগীরা মুমূর্ষু হইয়া পড়িতেছেন। কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল আসিতে বিলম্ব হইতেছে বলিয়াও বহু রোগী বিপন্ন। অতিমারির আতঙ্কের উপরে চিকিৎসাহীনতার আশঙ্কা যোগ হইয়া এক দুর্বিষহ পরিস্থিতি তৈরি হইতেছে। ইহার অন্যতম কারণ বিভ্রান্তি। বিভিন্ন হাসপাতাল হইতে নানা ঘটনার যে বিবরণ মিলিতেছে, তাহাতে আশঙ্কা হয়, করোনা-সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকিলে কী কী আচরণবিধি পালনীয়, সে বিষয়ে স্থিরতা নাই। অভিযোগ উঠিয়াছে যে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের দাবি, সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য দফতর লিখিয়া না দিলে তাহারা রোগী ভর্তি করিবে না। অথচ স্বাস্থ্য দফতর জানাইয়াছে, এমন লিখিত অনুমতির প্রয়োজন নাই। পিপিই-প্রভৃতি সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করিলে কোভিড-১৯ রোগীর পরিচর্যায় ঝুঁকি নাই, স্বাস্থ্য দফতর এমনই বলিয়াছে। তৎসত্ত্বেও কোথাও কোথাও স্বাস্থ্যকর্মীরা নাকি রোগীর পরিচর্যা করিতে, এমনকি অ্যাম্বুল্যান্স হইতে রোগীকে নামাইতে অস্বীকার করিয়াছেন। অপর পক্ষে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা আক্রান্ত হইয়াছেন। সব মিলাইয়া চিকিৎসার পরিসরে বিশৃঙ্খলার একটি চিত্র বারংবার প্রকট। ইহার ফলে হাসপাতালে হেনস্থার ভয়ে সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে রোগীর পরীক্ষা বা চিকিৎসা না করাইয়া ঘরে রাখিবার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। ইহাতে রোগীর প্রাণ বিপন্ন হইবে, সংক্রমণের প্রকোপ বাড়িবারও সম্ভাবনা। হাসপাতাল রোগীর জন্য সুরক্ষিত, এই আশ্বাস তৈরি করা জরুরি।
কোভিড-১৯’এর সম্মুখে বিশ্বের সকল দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাই কঠিন সমস্যায় গ্রস্ত। এক সঙ্গে বহু মানুষ সংক্রমিত হইবার ফলে, এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বিপন্ন হইবার ফলে, চিকিৎসার জোগানে টান পড়িয়াছে। কিন্তু সমাধানও কি নাই? কেরল সরকার বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে ব্যবহার করিয়াছে। জাতীয় বিপর্যয় আইনের বলে এর্নাকুলামের জেলাশাসক নির্দেশ জারি করিয়া বেসরকারি চিকিৎসাকর্মীদের কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের কাজে লাগাইয়াছেন। কেরল সরকার আটশতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল চিহ্নিত করিয়াছে কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য। সে রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালের সংগঠনও স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া জেলাস্তরে চিকিৎসার সমন্বয়ে সহায়তা করিয়াছে, এবং কাজে সম্মত কর্মীদের তালিকা তুলিয়া দিয়াছে সরকারের হাতে। লক্ষণীয়, দেশের যে রাজ্যটিতে সর্বাগ্রে কোভিড-১৯ মহামারির আকারে দেখা দিয়াছিল, সেখানে আজ সংক্রমণের হার অনেক কমিয়াছে, মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক কম। দৃশ্যত, সরকারি চিকিৎসার তৎপরতা এবং সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রের সমন্বয় ‘কেরল মডেল’-এর সাফল্যের অন্যতম কারণ।
এই রাজ্যেও প্রথমে কিছুটা আশার সঞ্চার হইয়াছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে ক্রমশসমন্বয়ের চিত্রটি মলিন হইয়াছে। কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতা থাকিলেও বহু ক্ষেত্রে তার অভাব দেখা যাইতেছে। এক দিকে কোভিড-১৯ রোগী রাখিবার পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা উদ্বেগ-সঞ্চারী, অন্য দিকে সরকারি ও বেসরকারি সকল সম্পদের সমন্বিত ব্যবহার করা যাইবে কি না তাহা লইয়া অনিশ্চয়তা। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাবিধির অনুসরণ নিশ্চিত করিবার সঙ্গে সঙ্গে সমন্বিত চিকিৎসার প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতালকে সরকারি বিধির অধীনে আনা ভিন্ন গতি নাই। এই মহাসঙ্কটে রোগীর প্রাণরক্ষার, এবং চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বজায় রাখিবার কাজটিই প্রথম ও প্রধান।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy