প্রতীকী ছবি।
এখনও অধরা প্রতিষেধক। অথচ অতিমারির প্রকোপ ঠেকাইতে তাহার প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নাতীত। জানুয়ারি মাস হইতেই বিশ্বের তাবড় দেশের বিজ্ঞানীরা ইহার প্রতিষেধকের সন্ধানে নিমগ্ন। তাহার পরও তিন মাস অতিবাহিত। কোভিড-১৯ দুই শতাধিক দেশকে আক্রান্ত করিয়াছে, প্রাণ লইয়াছে দুই লক্ষেরও অধিক মানুষের, স্তব্ধ করিয়াছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। কিন্তু প্রতিষেধক কবে মিলিবে, এখনও অজানা। অবশ্য আশা জাগাইতেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ। ইতিমধ্যেই ব্রিটেনে মানবদেহে প্রতিষেধকের পরীক্ষা শুরু হইয়াছে। পিছাইয়া নেই চিন, আমেরিকা-সহ অন্যান্য দেশগুলিও। ভারতেও এক ঔষধ প্রস্তুতকারক সংস্থা দাবি করিয়াছে, আগামী এক বৎসরের মধ্যেই প্রতিষেধকের ভারতীয় সংস্করণটি বাজারে হাজির হইবে।
এক বৎসর সময়কাল সংক্রমণের নিরিখে সামান্য নহে। তিন মাসের মধ্যে যে রোগ এই ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করে, আগামী এক বৎসরে তাহা কোথায় দাঁড়াইবে, ভাবিলে ভয় হয়। মনে রাখা প্রয়োজন, প্রতিষেধক প্রস্তুত এবং তাহার কার্যকারিতা প্রমাণের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। ইহা হলিউডি চিত্রনাট্য নহে যে, মহাশক্তিধর দেশ এক দিন টিকা আবিষ্কার করিয়া ফেলিবে, এবং নূতন সূর্যের উদয় হইবে। প্রতিষেধক নির্মাণ এবং সংশয়াতীত ভাবে তাহার সাফল্য প্রমাণের মধ্যে বেশ কিছু ধাপ থাকে। থাকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কাও। সব কয়টি ধাপ অর্থাৎ প্রোটোকল উত্তীর্ণ হওয়া সহজ কথা নহে। এই কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষকদের একাংশ জানাইতেছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণজনিত পরীক্ষা এবং গবেষণার জন্য যথেষ্ট সময় ধার্য করা প্রয়োজন। অন্যথায় জটিলতা বৃদ্ধির আশঙ্কা। সুতরাং, অতিমারির প্রতিষেধকের জন্য উদ্বেগ-সহ অপেক্ষা চলিবেই। কিন্তু ভ্যাকসিন কবে আসিয়া রোগকে জব্দ করিবে, শুধুমাত্র সেই আশায় বসিয়া থাকা মূর্খামির নামান্তরমাত্র।
বরং প্রয়োজন ছিল রোগটিকে রুখিবার ব্যবস্থা পাকা করা। দুর্ভাগ্যই বলিতে হইবে যে, ভারত প্রতিষেধক আবিষ্কারের প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে যত তৎপর, বর্মবস্ত্র এবং মাস্ক নির্মাণ লইয়া সেই তৎপরতা চোখে পড়িতেছে না। অথচ, ‘করোনা-যোদ্ধা’ বলিয়া যাঁহাদের অভিহিত করা হইতেছে, তাঁহাদের সুরক্ষার জন্য এই বস্তুগুলি আবশ্যক। দেশেই ইহা যথেষ্ট পরিমাণ উৎপাদনের ব্যবস্থা জরুরি ছিল। সে ক্ষেত্রে সঙ্কটও তৈরি হইত না, ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’র ঢাকটিও বাজানো যাইত। কিন্তু চরম অদূরদর্শিতার প্রমাণ দিয়া ইহার আমদানির জন্য ভারত দীর্ঘ সময় চিনের মুখাপেক্ষী হইয়া রহিল। আপাতত কেন্দ্রীয় মন্ত্রক হিসাব দিতেছে, দেশে প্রতি দিন এক লক্ষেরও অধিক পিপিই এবং এন-৯৫ মাস্ক তৈরি হইতেছে। এই হিসাব, এপ্রিলের শেষার্ধে, আদৌ আশাব্যঞ্জক নহে। দেশ ভুলিবে কী করিয়া, তীব্র সঙ্কটকালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে বর্ষাতি তুলিয়া দেওয়া হইয়াছিল মারণরোগের মোকাবিলায়। এখনও বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসকেরা অপ্রতুল সরবরাহের কারণে নিজেদের খরচে বর্মবস্ত্র কিনিতেছেন। পরিণতি? চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা সংক্রমিত হইতেছেন, অবরুদ্ধ হইতেছে হাসপাতালের দরজা। এই অপরিণামদর্শিতার মাশুল গনিতে হইবে কত জনকে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy